সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

গোল মিসের খেসারত আর কত?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

গোল মিসের খেসারত আর কত?

ফুটবল গোলের খেলা। যারা সুযোগ কাজে লাগিয়ে বল জালে পাঠাবে তারাই জিতে যাবে। ক্রিকেটে যেমন ক্যাচ মিস হওয়া মানে ম্যাচ হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া। ফুটবলে তেমন গোল মিসতো ম্যাচ মিস হয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের ফুটবলে ব্যর্থতার পেছনে বড় কারণই হচ্ছে সুযোগ নষ্ট করা। ১৯৮৪ সালে সাফ গেমসের যাত্রা। অথচ গেমসে ফুটবলে সোনা জিততে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশের আগে ভারত তো বটেই নেপাল ও পাকিস্তান সোনা জয়ের কৃতিত্ব পেয়েছিল। ১৯৮৪ সালে সাফ গেমসে ফুটবলে ভারত অংশ নেয়নি। অনেকে তাই বাংলাদেশের সোনা জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন। লিগ ম্যাচে নেপালকে ৫-০ গোলে পরাজিত করলে বাংলাদেশের সোনা জয়টা সময় ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। অথচ ফাইনালে ২ গোলে এগিয়ে থেকেও নেপালের কাছে হেরে সোনার বদলে আসলামদের রূপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। গোল মিসের খেসারত গুনতে হয় ফাইনালে। ১৯৮৫ সালেও ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসেও একই অবস্থা। ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি হয়েছিল। আসলামের দর্শনীয় হেডে গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। পরে ভারত সমতা ফেরায়। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র থাকে। পরে টাইব্রেকারে হেরে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। অথচ নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে যে সুযোগ পেয়েছিল তা কাজে লাগাতে পারলে সহজভাবেই জিততে পারতেন ইমতিয়াজ সুলতান জনিরা। দুটো গেমসের উদাহরণ টানার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গোল মিস। অর্থাৎ সুযোগ হাতছাড়া শুধু এখন নয় আগেও এর খেসারত দিতে হয়েছে। তবে এর ভিতর পার্থক্য রয়েছে। এখনতো ফাঁকা নেট পেয়েও জালে বল পাঠাতে পারছে না। ফাঁকা নেটে অনেক বিখ্যাত ফুটবলাররাও জালে ঠিকমতো শট নিতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশে জাতীয় বা ক্লাবগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে ৪/৫টি সহজ সুযোগ নষ্ট করছে। এই যদি হয় অবস্থা তা হলে ম্যাচতো আর জেতা সম্ভব নয়।

কাজী সালাউদ্দিন তার ক্যারিয়ারে অসংখ্য গোল করেছেন। কিছু গোল ছিল তাতে বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলারদের সঙ্গে তুলনা করা যায়। হাফিজ উদ্দিন, এনায়েতের শটে যেন বিদ্যুৎ চমকাতো। ডি-বক্সের বাইরে থেকে কত অসাধারণ গোল করেছেন যা হিসাব মেলানো যাবে না। নওশের ও হালিমের শটও ছিল দেখার মতো। সালাম মুর্শেদী ও বাদল রায় ডি-বক্সের ভিতর বল পেলেই জালে পাঠাতেন। ইনজুরির কারণে মোসাব্বের বেশিদিন খেলতে পারেননি। কিন্তু ২ গোল করেই তিনি তারকার খ্যাতি পেয়ে যান। ১৯৭৭ সালে ভারতের বিখ্যাত ফুটবলারদের নিয়ে গড়া অল ইন্ডিয়া ইলেভেন আগা খান গোল্ড কাপ খেলতে আসে। দলটি রানার্স আপও হয়েছিল। কিন্তু গ্রুপ পর্বে মোহামেডানের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায়। সেই ম্যাচে মোসাব্বের দুজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে যে গোলটি করেন তা এখনো চোখে ভাসে। এখনকার ফুটবলাররা সুযোগের পর সুযোগ নষ্ট করছেন। বলা হচ্ছে তারা কি টিভিতে মেসি, রোনালদো, নেইমার, সুয়ারেজদের খেলা দেখেন না?’ তাহলেতো ঠাণ্ডা মাথায় কিভাবে গোল করতে হয় শিক্ষা নিতে পারবে। এত বড় বড় তারকারদের দরকার কি? এখন সালাউদ্দিন, হাফিজ, এনায়েতদের ম্যাচ দেখলেই অনেক কিছু শিখতে পারবে। কষ্ট হচ্ছে সেই সোনালি দিনের ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যাবে না। থাকলে এখনকার খেলোয়াড়রা বিস্ময় চোখে চেয়ে থাকত গোল কাকে বলে। আলোচনাটা হচ্ছে এএফসি কাপে মালদ্বীপের নিউ রেডিয়ান্টের কাছে ঢাকা আবাহনীর হারকে কেন্দ্র করে। ঘরের মাঠে ১-০ গোলে হেরে যায় পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়নরা। রেডিয়ান্ট শক্তিশালী দল তাই এ দলকে স্বাভাবিকই বলা যায়। আক্ষেপটা হচ্ছে আবাহনীর গোল মিস নিয়েই। যদিও নাইজেরিয়ান ফুটবলার সানডে একাই ৩ গোল মিস করেছেন। কিন্তু দলটা তো আবাহনী। টুর্নামেন্টে তারা তো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই জেতা ম্যাচে হেরে গিয়ে আফসোস তৈরি হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর