শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

কলম্বোর নতুন নায়ক মাহমুদুল্লাহ

আসিফ ইকবাল

কলম্বোর নতুন নায়ক মাহমুদুল্লাহ

১৮ বলে খেললেন ৪৩ রানের টর্নেডো ইনিংস। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের এই অবিশ্বাস্য ইনিংসে ভর করে নিদাহাস টি-২০ টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ এবং ম্যাচ জিতিয়ে শূন্যে ভাসছেন মাহমুদুল্লাহ —এএফপি

উত্তেজনার রেণু, পরমাণু ছড়ানো ম্যাচের নায়ক সাকিব আল হাসান কিংবা তামিম ইকবাল নন। শেষ ওভারের উত্তেজনাকে ছাপিয়ে ম্যাচের নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শান্ত, সৌম্য মাহমুদুল্লাহ এখন শুধুই নায়ক নন, কলম্বোর মহানায়ক। ধীরস্থির মাহমুদুল্লাহ এখন বাংলাদেশের লক্ষ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর স্বপ্নের নায়ক। গতকাল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ৩৫ হাজার ক্রিকেটপ্রেমীকে শোকের মাতমে ভাসিয়ে নতুন উচ্চতায় ঠাঁই দেন প্রিয় বাংলাদেশকে। ভারত মহাসাগড়ের তীর ঘেঁষে ছোট্ট ‘দ্বীপরাষ্ট্র’ শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবসে ‘লাল সবুজ’ পতাকা উড়িয়েছেন মাহমুদুল্লাহ সাহসী ক্রিকেট বীর হয়ে। মাহমুদুল্লাহর অবিশ্বাস্য, প্রত্যয়ী, নান্দনিক ব্যাটিংয়ে এক বল হাতে রেখে দুই উইকেটে ম্যাচ জিতে স্বপ্নের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। রবিবার নিদাহাস টি-২০ টুর্নামেন্টে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহদের প্রতিপক্ষ ভারত। এখন হাতছানি প্রথম শিরোপা জয়ের।

টুর্নামেন্টের প্রথম তিন ম্যাচে ভিন্ন ভিন্ন ছবি ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের। এক ম্যাচে ছন্দ তো, পরের ম্যাচেই ছন্দহীন। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লিগ পর্বের প্রথম ম্যাচে ২১৫ রানের পর্বতসমান স্কোর তাড়া করে রেকর্ড গড়ে ম্যাচ জিতেছিল টাইগাররা। ঐতিহাসিক ম্যাচটির অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। রেকর্ড গড়া ম্যাচটির নায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম।

আঙ্গুলের চোটে টুর্নামেন্টের প্রথম তিন ম্যাচ খেলেননি সাকিব। সুস্থ হয়ে পরশু দলের সঙ্গে যোগ দেন এবং খেলতে নামেন অধিনায়ক হয়ে। সাকিবের উপস্থিতিতে পুরোপুরি পাল্টে যায় ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে চেপে ধরে স্বাগতিকদের এবং দুর্দান্ত বোলিং করে বেঁধে ফেলে মাত্র ১৫৯ রানে। টার্গেট ১৬০ রান। ২১৫ রান তাড়া করে যেখানে জিতেছিল বাংলাদেশ, সেখানে ১৬০ রান আহামরি নয়! কিন্তু ক্রিকেট বলেই পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকে ম্যাচ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। গতকালের ম্যাচটিও উত্তেজনা ছড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল বাংলাদেশের ১২ রান। হাতে ৩ উইকেট থাকায় ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু প্রথম দুই বলে ইশুরু উদানার বাউন্সার ঠিক মতো খেলতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান। ওভারের দ্বিতীয় বলে রানআউট হন মুস্তাফিজ। তখনই নাটকের শুরু। মাঠের বাইরে থেকে নো বলের দাবি জানান অধিনায়ক সাকিব। অবশ্য এর আগেই নন স্ট্রাইকে থাকা মাহমুদুল্লাহ আম্পায়ারের কাছে আপত্তি জানান। এ জন্য মিনিট পাঁচেক বন্ধ থাকে খেলা। এরপর শুরু হলে তৃতীয় বলে এক হাতে কাভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে খেলা জমিয়ে তোলেন মাহমুদুল্লাহ। সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ৩ বলে ৮ রানের। ওভারের চার নম্বর বলে ২ রান নেন তিনি। শেষ ২ বলে জয়ের জন্য দরকার ৬ রান। এমন পরিস্থিতিতে দুই বছর আগের বেঙ্গালুরুর টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি ফিরে আসে স্মৃতির খাতা থেকে। ম্যাচটিতে শেষ ওভারের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৯ রান। ব্যাটিংয়ে ছিলেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। গতকাল শেষ দুই বলে যখন ছয় রান দরকার, তখন শঙ্কায় নড়েচড়ে বসেন অনেকে। কিন্তু ইস্পাতসম দৃঢ়তার মাহমুদুল্লাহ নতুন উচ্চতায় নিজেকে ঠাঁই দেন ফ্লিক করে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে। ছক্কা মেরেই ব্যাট উঁচিয়ে পাখির ডানায় ভর করে মাহমুদুল্লাহ উড়তে শুরু করেন প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। ছক্কাটি যখন স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শককে স্তব্ধ করে শ্মশানের নীরবতা নামিয়ে আনে, তখনো বল বাকি একটি।

কী আশ্চর্য! বেঙ্গালুরুর দুঃখ জাগানো সেই ম্যাচটির দুই খলনায়ক মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ এখন নিদাহাস টুর্নামেন্টে টাইগারদের মহানায়ক। ঐতিহাসিক ম্যাচ জয়ে মুশফিক খেলেছিলেন ৭২ রানের হার না মানা ইনিংস। গতকাল বেঙ্গালুরু ম্যাচের আরেক খলনায়ক মাহমুদুল্লাহ খেললেন মাত্র ১৮ বলে ২৩৮.৮৮ স্ট্রাইক রেটে ৪৩ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। মাহমুদুল্লাহ শুধু গতকালই ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেননি। তার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। প্রথম টাইগার ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুটি সেঞ্চুরিও করেছিলেন। তারপরও ছিলেন আনসাং হিরো। এবারই প্রথম হিরো হলেন মাহমুদুল্লাহ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা : ১৫৯/৭, ২০ ওভার (কুশল পেরেরা ৬১, থিসারা পেরেরা ৫৮) বাংলাদেশ : ১৬০/৮, ১৯.৫ ওভার (তামিম ৫০, মুশফিক ২৮, মাহমুদুল্লাহ ৪৩*)

সর্বশেষ খবর