শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভাঙা মন নিয়ে ঢাকায় ক্রিকেটাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ভাঙা মন নিয়ে ঢাকায় ক্রিকেটাররা

শেষ বলে ছক্কায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে টাইগারদের। বেদনায় মুষড়ে যাওয়া ক্রিকেটাররা গতকাল ফিরেছেন ঢাকায় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কষ্ট, বেদনা আর একরাশ হতাশা নিয়ে দেশে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিমরা। এবারের ফিরে আসায় ক্রিকেটাররা পেয়েছেন বীরের মর্যাদা। বিমানবন্দরে হয়তো জনতার ঢল নামেনি। কিন্তু শেষ বলের ছক্কায় হেরে গেলেও টাইগাররা দেশবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন আজীবনের জন্য।

২০০৯, ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে চার চারটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। প্রতিটি ফাইনালের গল্পই ছিল কান্নার, বেদনার। চার ফাইনালের গল্পকে পাথর চাপা দিয়ে এবার সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির, মুস্তাফিজরা স্বপ্ন দেখেছিলেন নতুন ইতিহাস লেখার। স্বপ্ন দেখেছিলেন পুরনো ফাইনালগুলোকে পাথর চাপা দিয়ে নতুন করে উচ্ছ্বাসে ভাসাবেন দেশবাসীকে। মুক্তি দিবেন ব্যর্থতার বেড়াজাল থেকে। নিদাহাস টি-২০ টুর্নামেন্টের ফাইনালের ১৯.৫ ওভার পর্যন্ত সেই স্বপ্ন প্রায় রূপ নিচ্ছিল বাস্তবতায়। কিন্তু দিনেশ কার্তিক অতি মানবীয় দক্ষতায় শেষ বলে কাভার দিয়ে যেভাবে ফ্ল্যাট ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের উৎসবের মঞ্চ ভাসিয়ে দেন ভারত মহাসাগরে, তার তুলনায় অন্য কোনো ফাইনালগুলো আসেনি। তাই হতাশা, কান্নাই বেশি করে ঘিরে ধরেছে দেশবাসীকে। অবিশ্বাস্য ফাইনাল খেলেও কষ্টকে আজীবনের জন্য লালন করে গতকাল সকালে দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। 

শুরুর ধাক্কা সামলে স্কোর বোর্ডে ১৬৬ রান লিখেছিল টাইগাররা। যদিও স্কোরটি আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু হয়নি দলের সিনিয়র ও তারকা ক্রিকেটারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায়। তারপরও দলকে একাই টেনেছেন সমালোচনার তীর্যকবাণে এফোর-ওফোর হওয়া সাব্বির। খেলেন ৭৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। ১৬৭ রান তাড়া করতে নেমে ১৮ ওভার পর্যন্ত পেছন পেছন হেঁটেছে রোহিত শর্মার ভারত। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান। এমন সমীকরণে জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে। দেখছিলও গোটা দেশ। প্রথম স্পেলে ৩ ওভারে যেখানে ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন রুবেল। অধিনায়ক সাকিব ভরসা রাখতেই পারেন তার উপর। কিন্তু চাপে ভেঙে পড়ে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি রুবেল। রুবেলের প্রথম বলেই লং অনে ছক্কা মেরে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন কার্তিক। ওই ওভারে দুই ছক্কা ও দুই চারে নেন ২২ রান। ওই ওভারই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় টাইগারদের। ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেই বাংলাদেশের হারের জন্য দোষারোপ করতে থাকেন রুবেলকে। এক ওভারে ২২ রান দিয়ে হতাশায় ভেঙে পড়া রুবেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েবসাইটে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, ‘হারের পর নিজেকে শান্ত্বনা দিতে পারছি না। বাংলাদেশের হারের জন্য আমার ওভারে ২২ রানকে দোষারোপ করা হচ্ছে। এমন হারের জন্য আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি।’

১৯ নম্বর ওভারে ২২ রান নেওয়ার পরও ভারতের জয় পেতে দরকার ছিল ১২ রান। দিল্লির রাস্তা অনেক দূরের কাজটি সৌম্য সরকারের প্রথম পাঁচ বল পর্যন্ত মনে হচ্ছিল। প্রথম পাঁচ বলে ৭ রান নেয় ভারত। শেষ বলে দরকার হয় ৫ রান। সৌম্য অফ সাইডে বল করেন। কিন্তু মারতেই হবে ভাবনায় দিনেশ কার্তিক সপাটে ব্যাট চালান এবং বলটি কাভার দিয়ে ফ্ল্যাটেড সিক্স হয়। জিতে যায় ভারত। অবিশ্বাস্যভাবে হেরে যায় বাংলাদেশ। ওই ছক্কার পর সৌম্য লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। রুমাল মুখে দিয়ে বসে পড়েন সাকিব। বাংলাদেশের অপরাপর ক্রিকেটাররা ভেঙে পড়েন, মুষড়ে পড়েন হারের বেদনায়। ২০১২ সালে একই চিত্র ছিল মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সাকিব, মুশফিক, নাসিররা। ভাইরাল হয়েছিল সাকিবকে জড়িয়ে মুশফিকের কান্নার ছবিটি। এবারও সৌম্যর মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ার ছবিটি ভাইরাল হয়েছে।

গতকাল সকালে দুঃখ, কষ্ট, বেদনা নিয়ে পরিচিত ঢাকায় ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। সঙ্গী ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। দুঃখ জাগানো পারফরম্যান্সের পরও ক্রিকেটারদের ফুল দিয়ে বরণ করেন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ডেমো। বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের পক্ষে দলের প্রাপ্তি নিয়ে কথা বলেন মুশফিক, ‘টুর্নামেন্টে আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি, ম্যাচ জিতেছি, পুরো দলই কৃতিত্ব পাবে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের হারানো অনেক বড় প্রাপ্তি। ঘরের মাটিতে আমরা ক্লোজ ম্যাচ ওভারকাম করতে পারি। কিন্তু সেখানে করেছি। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।’

সর্বশেষ খবর