বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাফ ঘিরেই যত প্রস্তুতি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাফ ঘিরেই যত প্রস্তুতি

কন্ডিশনিং ক্যাম্পের পাশাপাশি গতকাল ব্যাংককে এক প্রীতিম্যাচে অংশ নেয় বাংলাদেশ। থাই লিগে ষষ্ঠ স্থানে থাকা রাতসাবুরি এএফসির কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় অ্যান্ড্রুর শিষ্যরা। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে বিজয়ী দলের সং পং সোলে গোলটি করেন —বাফুফে

ফুটবলে করুণ পরিণতি নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। জাতীয় দল ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। গত তিন আসরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালও খেলতে পারেনি। গ্রুপ পর্ব খেলেই মিশন শেষ। যাক অতীতে যাই ঘটুক না কেন বাফুফে চাচ্ছে ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে আসতে। আসছে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় সাফ ফুটবল হওয়ার কথা। ঘরের মাঠে জ্বলে উঠতে ফেডারেশন প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। ফুটবলাররা বার বার অভিযোগ তোলেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে মাঠে নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরতে পারেননি। অভিযোগটি একেবারে ফেলেও দেওয়া যায় না। কেননা টুর্নামেন্ট এলেই কোনোক্রমে অনুশীলন করে মাঠে নামছেন খেলোয়াড়রা। এতে ফল সুখকর হচ্ছে না।

এবার বাফুফে যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে অভিযোগ তোলার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ডুওডকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। প্রাথমিক বাছাই করে বিকেএসপিতে ক্যাম্প চলেছে। এরপর কাতারে দুই সপ্তাহ অনুশীলন সেরে এখন থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে ফুটবলাররা। অনুশীলনের পাশাপাশি দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেও অংশ নেবেন মামুনুলরা। লাওসের সঙ্গেও ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে এর মধ্যে গতকাল একটি ম্যাচে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। হেরেও গেছে। আগামীকাল দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ হওয়ার কথা। এরপর ২৭ মার্চ খেলবে লাওসের বিপক্ষে। জাতীয় দল দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে। তাই মনোবলকে চাঙ্গা করতে বাফুফে এই উদ্যোগ নিয়েছে। সেপ্টেম্বর আসতে এখনো অনেক বাকি। দলের সাফল্যের কথা চিন্তা করে পরবর্তীতে বাফুফে নিশ্চয় আরও কর্মসূচি নেবে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সাফল্য না পেলেও এবার যেভাবে এগুচ্ছে তা ভালো ফলের জন্য যথেষ্ট। সাফ ফুটবলে তো আর এশিয়ার কোনো শক্তিশালী অংশ নেয় না। দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর মান প্রায় একই। বলা যায় উনিশ-বিশ। অথচ এই সাফই যেন বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপের মতো স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

২০০৩ সালে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখনতো সেমিফাইনাল খেলাটাই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ব্যর্থতার জন্য খেলোয়াড়দের যেমন তিরস্কৃত করা হয়, তেমনি বাফুফে কর্মকর্তাদের সমালোচনা করা হয়। বলা হয় বাফুফের খামখেয়ালিপনায় বার বার হতাশায় ডুবছে ফুটবল। খেলোয়াড়রা একটাই কথা বলেন, সাফের জন্য অন্য দেশগুলো উন্নতমানের প্রশিক্ষণ নেয়। ক্রীড়ামোদীরাও তাও বিশ্বাসও করে। কথা হচ্ছে কি এমন উন্নতমানের প্রশিক্ষণ নেয় যা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। ভারত, মালদ্বীপ বা নেপালে কি ফুটবলে এশিয়ার বিখ্যাত দলগুলোর সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে না ইউরোপে ট্রেনিং নেয়। পার্থক্য এতটুকু তাদের প্রস্তুতিটা হয়তো জোড়াতালি দিয়ে হয় না।

এবারতো আর জোড়াতালিও বলা যাবে না। এশিয়ার ফুটবলে শক্তিশালী দেশ কাতারে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। থাইল্যান্ডেও করবে। সামনে হয়তো আরও দেশে যাবে। সাফের ট্রফি জিততে এর চেয়ে বেশি আর কি প্রয়োজন আছে? জানিনা ভারত বা অন্যান্য দেশের প্রস্তুতির ধরনটা কেমন হবে। তারপরও বাফুফে যে উদ্যোগ নিয়েছে, এর বাইরে আহামরি কিছু করবে বলে মনে হয় না। সুতরাং এবার প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলারদের আক্ষেপ থাকার কথা নয়।

এদিক দিয়ে কোচ অ্যান্ডুকে ভাগ্যবানই বলতে হয়। কেননা সাফের জন্য শিষ্যদের প্রস্তুত করতে পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন। বাইরের কন্ডিশনে প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে খেলোয়াড়দের ঝালাই করার সুযোগ পাচ্ছেন। কাতার যাওয়ার আগে বিকেএসপিতে এক প্রস্তুতি ম্যাচে প্রশিক্ষণরত জাতীয় দল ৪-০ গোলে ঢাকা আবাহনীর কাছে হেরে যায়। অ্যান্ডু বলেছিলেন ফল যাই হোক খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ভালোভাবে পরখ করতে পেরেছি। তিনি দলে তরুণদেরই প্রাধাণ্য দিতে চান। ভালোভাবে ঝালাই করে তিনি সেপ্টেম্বরে শিষ্যদের মূল লড়াইয়ে নামাতে পারবেন।

প্রশ্ন হচ্ছে এত কিছুর পরও অ্যান্ডু সফল হতে পারবেন কি? বিশেষ করে সাফ এবার ঘরের মাঠে। ক্রীড়ামোদীদের প্রত্যাশাও থাকবে একটু বেশি। অ্যান্ডু বলেছেন, আমি আশাবাদী ছেলেরা সাফে ভালো করবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হবোই এ নিশ্চয়তা দিতে পারি না। অ্যান্ডু কেন পৃথিবীর বিখ্যাত কোচও শিরোপার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। কিন্তু এই বাস্তব সত্যটা বাফুফে মেনে নিতে পারেন না বলেই ব্যর্থ হলে বার বার কোচ পরিবর্তন করছে।

অটোফিস্টার সাফ গেমসে সোনা দিতে না পারায় তাকে বিদায় জানানো হয়। অথচ এই ফিস্টারের প্রশিক্ষণে বেশ কটি দেশ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বেও খেলেছে। এক শিরোপা না জেতায় তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ একবারই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রফি জিতে জর্জ কোটানের প্রশিক্ষণে। তাকেও অপমান করে তাড়ানো হয়েছে।

নাসের হেজাজি বাংলাদেশের ফুটবলকে পাল্টে দিতে তিন বছরের সময় চেয়েছিলেন। তাকেও তাড়ানো হয় এক সাফ গেমসে সোনা না জেতায়। ৪৭ বছরের দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে ত্রিশের বেশি কোচ পরিবর্তন করা হয়েছে। যা উপকারের চেয়ে ফুটবলে অপকারই হয়েছে বেশি। অ্যান্ডু যদি ব্যর্থ হন তাহলে তাকেও ফিস্টারদের পথে হাঁটতে হবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর