রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

চোটে চোটে জর্জরিত টাইগার শিবির

মেজবাহ্-উল-হক

চোটে চোটে জর্জরিত টাইগার শিবির

চোট হচ্ছে খেলোয়াড়দের চিরশত্রু! এই চোট যে কত খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। চোটের ছোবলে এখন দিশাহারা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। একের পর এক ইনজুরির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিছুদিন আগেই ইনজুরি থেকে ফিরলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান এবং তামিম ইকবাল। এখন একসঙ্গে ইনজুরিতে তিন ক্রিকেটার—নাসির হোসেন, মুশফিকুর রহিম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

নাসির ও মুশফিক ফুটবল খেলতে গিয়ে চোটে আক্রান্ত হয়েছেন। মোসাদ্দেকের ব্যাক পেইন। ব্যথা নিয়েই একদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন এই তারকা ব্যাটসম্যান। আর মুশফিকের পা মচকে গেছে। গতকাল তার পায়ের এমআরআই করা হয়েছে। আজ রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে ঠিক কতদিন মাঠের বাইরে থাকা লাগতে পারে।

নাসিরের তো ডান পায়ের লিগামেন্টই ছিঁড়ে গেছে। অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনো উপায় নেই। ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক ডেভিড ইয়নের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী। গতকাল ইয়নের অ্যাপয়েনমেন্টও নেওয়া হয়েছে। এখন বিসিবির অনুমতির অপেক্ষায় নাসির। তবে অস্ত্রোপচারের পরও অন্তত ৪-৫ মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে নাসিরকে।

কেন একের পর এক ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়ছেন? বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেবাশীষ চৌধুরী জানালেন তিনটি কারণের কথা। চোট থেকে মুক্ত থাকার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি, ‘ইনজুরিতে মুক্ত থাকার তিন পরামর্শ— প্রথমত ফিটনেস লেবেলটাকে সব সময় মেইনটেইন করতে হবে। দ্বিতীয়ত এখন যেহেতু গরমের সময়, বেশি আর্দ্রতা তাই ফুড ম্যানেজমেন্ট, ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ও হিট ম্যানেজমেন্ট —এই তিন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তৃতীয়ত, কমনসেন্স কাজে লাগাতে হবে। এটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই এখন যে ইনজুরিগুলো হচ্ছে তা কিন্তু কমনসেন্সের অভাবেই হচ্ছে। তাই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। অনেক বেশি সতর্ক থাকতে, নিয়ম মেনে চলতে হবে।’ ক্রিকেটারদের ইনজুরির একটি বড় কারণ হচ্ছে একটানা বেশি দিন খেলতে থাকা! বাংলাদেশের ক্রিকেটার অনেক দিন থেকে যেন বিরতিহীন খেলেই চলেছেন। টানা এই শিডিউল শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে। তারপর দেশে ফিরেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। এরপর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ত্রি-দেশীয় সিরিজ। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ও টি-২০ সিরিজ। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল)।

এমন টাইট শিডিউল যে অনেক ক্রিকেটার তো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিলেটে শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলার পরই রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন এবং পরের দিন। এমনকি পরের দিন ঢাকায় এসে তারা ম্যাচও খেলেছেন। অথচ আন্তর্জাতিক কোনো সিরিজ খেলার পর ক্রিকেটারদের কয়েক দিন বিশ্রাম নেওয়ার কথা। কিন্তু সময় পাননি ক্রিকেটাররা। ক্লাবের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তাদের মাঠে নামতে হয়েছিল।

তারপর শুরু হয় নিদহাস ট্রফির প্রস্তুতি। বাংলাদেশের সেরা তারকারা খেলতে যান পাকিস্তান সুপার লিগে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, তামিম ইকবালরা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সরাসরি চলে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। নিদহাস ট্রফি খেলে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরেই আবারও প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। আবার প্রিমিয়ার লিগ শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় বিসিএল। ক্রিকেটারদের যেন দম ফেলানোর সময় নেই।

এমন টানা ক্রিকেট খেলার কারণেও ফিটনেস নিয়ে সমস্যায় পড়েন ক্রিকেটাররা। চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘খেলা তো আর বাদ দেওয়া যাবে না। তবে ক্রিকেটাররা যেহেতু একটানা ক্রিকেট খেলেন তাদেরকে নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়ও দিতে হবে। কিন্তু এই নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়ই তো তারা ইনজুরিতে পড়ছে। টানা খেলার ফাঁকে চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেটা খুবই দরকার। কিন্তু এই চিত্তবিনোদন কিভাবে করবেন তা নিয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা হয়তো সাম্প্রতিক টানা ক্রিকেট খেলার মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সবসময়ই খেলা থাকে— কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ, আবার কখনো লিগ। তবে তাদের ব্যাক-আপ ক্রিকেটার ভালো থাকায় তাদের ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দিতে পারেন অনেক বেশি। তাই ইনজুরির ঝুঁকিও কম থাকে।

যেমন নিদহাস ট্রফিতেই তো ভারত তাদের সেরা ৪-৫জন ক্রিকেটারকে শ্রীলঙ্কায় পাঠায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে দেশে ফেরার পর তাদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পাইপলাইনে পর্যাপ্ত ক্রিকেটার না থাকায় তারকা ক্রিকেটারদের বিশ্রামের সুযোগ নেই।

আর টানা খেললে ইনজুরিতে মুক্ত থাকা খুবই কঠিন। দেবাশীষ বলেন, ‘আপনি যত নিয়ম মেনেই চলেন না কেন একটানা বেশি দিন খেললে ইনজুরি হবেই। এটাই স্বাভাবিক। আর ইনজুরি হবে, আবার ম্যানেজমেন্ট হবে, এভাবেই চলবে।’

সর্বশেষ খবর