বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

আর নতুন মাশরাফি কোথায়!

মেজবাহ্-উল-হক

আর নতুন মাশরাফি কোথায়!

জাতীয় দলে পেসার আসে— পেসার যায়, দীর্ঘ মেয়াদে কেউ-ই জায়গা পাকা করে নিতে পারেন না। অথচ মাশরাফি বিন মর্তুজা সেই ২০০১ সালে অভিষেকের পর থেকেই দলে নির্ভরতার প্রতীক।

মাশরাফির অর্জনের সিংহভাগই ওয়ানডে ক্রিকেটে। এই ফরম্যাটে নড়াইল এক্সপ্রেস ১২ বার হয়েছেন ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। এছাড়া টেস্টে একবার এবং টি-২০তে দুবার  ‘ম্যাচ সেরা’ হয়েছেন। বাংলাদেশের মতো স্পিননির্ভর এক দলের পেসারের এমন অর্জন  কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। শুধু তাই নয়, ম্যাশ ওয়ানডেতে দুবার ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’ও হয়েছেন। ২০০৬ সালে কেনিয়ায় তিন ওয়ানডেতে ৮.৬৬ গড়ে ১২ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন সেরা ক্রিকেটার। ওই সিরিজের শেষ ম্যাচে নাইরোবিতে ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। এখন পর্যন্ত নড়াইল এক্সপ্রেসের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার সেটি। ২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’ পুরস্কার পান ম্যাশ। মজার বিষয় হচ্ছে, ওই সিরিজের চার ম্যাচের একটিতেও কিন্তু মাশরাফি ‘ম্যাচসেরা’ ছিলেন না। তবে প্রতিটি ম্যাচেই ছিলেন নেপথ্য নায়কের ভূমিকায়। প্রথম ম্যাচে নিয়েছিলেন ৪১ রানে ৫ উইকেট এবং শেষ ম্যাচেও শিকার করেছেন ৩ উইকেট।

মাশরাফি হচ্ছেন এক যোদ্ধা-ক্রিকেটার! জাতীয় দলের জার্সিতে যখন নামেন যেন জীবনবাজি রাখেন! পায়ে ৭বার অস্ত্রোপচারের পরও এখনো দিব্যি খেলে চলেছেন দেশের হয়ে। মাশরাফি তার ক্যারিয়ারে যতবার ইনজুরিতে পড়েছেন, বিশ্বে আর কোনো পেসার এতো ইনজুরিতে পড়েননি। প্রতিবারই আর ভয়ঙ্কর রূপে ফিরেছে এসেছেন।

তবে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের কথা কখনোই ভুলতে পারবেন না ম্যাশ! বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে খেলতে না পেরে নিজে কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন দেশবাসীকে। সেই আক্ষেপে ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছেন পরের বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে (২০১৫ সালে, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড) বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে তুলে যেন সৃষ্টি করেন নতুন ইতিহাস।

‘ক্রিকেট মাশরাফি’-কে যে ছাপিয়ে গেছেন ‘অধিনায়ক-মাশরাফি’! তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের গ্রাফটা অনেক উপরে উঠে গেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি। তার অধীনে ৫৫ ওয়ানডে খেলে ৩০ ম্যাচেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। অথচ অন্য অধিনায়করা ২৮৪ ওয়ানডে এনে দিয়েছেন মাত্র ৭৭ জয়।

অধিনায়ক মাশরাফি কতটা সফল তার ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত তো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এখন পর্যন্ত সেলিব্রেটি এই টি-২০ ক্রিকেট লিগের ৫ আসরের মধ্যে ৪ বারই চ্যাম্পিয়ন মাশরাফির দল।

মাশরাফি বয়স এখন ৩৫! ইনজুরির কারণে বিশ্বের কত নামি পেসার এই বয়সে অবসরে গেছেন। কিন্তু মাশরাফি এখনো উজ্জ্বল-ক্লান্তিহীন। তার বড় উদাহরণ তো সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল)। ঘরোয়া এই টুর্নামেন্টে ম্যাশ নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৩৯ উইকেট। অথচ দ্বিতীয় সেরা বোলারের ঝুলিতে ছিল মাত্র ২৯ উইকেট।

বাংলাদেশের তরুণ পেসাররা এখনো নড়াইল এক্সপ্রেসকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি! জাতীয় দলে মাশরাফির অভিষেকের পর অনেক পেসারই এসেছিলেন অমিত সম্ভাবনা নিয়ে, কিন্তু থীতু হতে পারেননি। শাহাদত, নাজমুল, সৈয়দ রাসেল, তাপস বৈশ্য, মোহাম্মদ শহীদরা এসেছিলেন, দ্রুত জায়গাও হারিয়েছেন। গতির ঝড় তুলে এবং বৈচিত্র্যময়তা নিয়ে রুবেল, তাসকিন, আল আমিন, শফিউল, আবুল হাসানরা এসেছিলেন। তারাও এখন জাতীয় দলে নিয়মিত নন। ধারাবাহিকতা নেই। এক সিরিজে ভালো খেলেন তো আরেক সিরিজেই ফ্লপ।

জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে শুভাশীষ রায়, আবু জায়েদ রাহি, আবু হায়দার রনি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, কামরুল ইসলাম রাব্বির উদীয়মান তারকা পেসারেরও। কিন্তু এদের কাউকেই কি মাশরাফি বদলি হিসেবে ভাবতে পেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড!

তবে হ্যাঁ, মুস্তাফিজের অভিষেক পেস আক্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দ্রুতই ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কাটার মাস্টার। পেস আক্রমণে মাশরাফির সঙ্গে দারুণ মানিয়েছেও। কিন্তু ম্যাশ তো আর সারা জীবন খেলবেন না!

ইতিমধ্যেই টি-২০ থেকে অবসর নিয়েছেন (৪ এপ্রিল, ২০১৭)। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও সব শেষ ম্যাচটি খেলেছেন ২০০৯ সালের জুলাইয়ে। যে কোনো দিন ওয়ানডে ক্রিকেটকে গুডবাই জানালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! সেক্ষেত্রে মাশরাফির অভাব পূরণ করবে কে? পাইপলাইনে কী আছে কোনো ‘নতুন মাশরাফি’!

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে পেস বোলিং ক্যাম্পে কোচ কোর্টনি ওয়ালশ বিশেষ পেস-ক্যাম্প করেছেন। পরিচিত পেসাররা ছাড়াও ক্যাম্পে ছিলেন— এবাদত, হাসান মাহমুদ, রবিউল, খালেদ, কাজী অনিক, হোসেন আলীর মতো উদীয়মান পেসার। এদের মধ্যে কেউ কি হতে পারবেন আগামীর ‘মাশরাফি’?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর