বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সঠিক পথে নেই বিসিবি!

মেজবাহ্-উল-হক

সঠিক পথে নেই বিসিবি!

বাংলাদেশের ক্রিকেটের গ্রাফটা এখন ঊর্ধ্বমুখি! সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানের মতো বিশ্বসেরা তারকারা জাতীয় দলে খেলছেন। একের পর এক সাফল্য আসছে। আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়েও নিয়মিত উন্নতি হচ্ছে। উন্নয়নের এক একটি সিঁড়ি পেরিয়ে তর তর করে উপরের দিকে চলে যাচ্ছে এদেশের ক্রিকেট।

উজ্জ্বলতার বিপরীতে অন্ধকারও আছে— জাতীয় দলে বাড়ছে অস্থিরতা! একের পর এক ক্রিকেটার এনে অভিষেক করানো হচ্ছে, আবার ফ্লপ হওয়ার পর দ্রুত দল থেকে বাদ দেওয়াও হচ্ছে। ২০১৭ সালে থেকে এ পর্যন্ত টেস্টে ৬ জন, ওয়ানডেতে ৩ জন এবং টি-২০তে ৮জন ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছে।

বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক সাফল্যের কারিগর মাশরাফি বিন মতুর্জা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ—এই ‘ক্রিকেট-পঞ্চ পাণ্ডবে’র উপযুক্ত ‘ব্যাকআপ’ নেই! বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক (গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান) খন্দকার জামিল উদ্দীন মনে করেন ‘শক্ত পাইপলাইন’ না থাকাটা যেকোনো দলের ভবিষ্যতের জন্য ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ‘সঠিক পথে নেই বিসিবি’।

জামিলের বক্তব্য, ‘সাদা চোখে দেখলে মনে হবে বিসিবির সব কিছু ঠিকভাবেই চলছে। নিয়মিত টুর্নামেন্ট হচ্ছে, এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের সফল আয়োজন করছে। জাতীয় দল ভালো করছে। কিন্তু একটু অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখলেই মনে হবে বিসিবি ঠিক মতো এগুচ্ছে না। কেন আমরা যে সাফল্যগুলো দেখছি এগুলো হচ্ছে বিসিবি প্রশাসনিক কাজ। এই কাজগুলো তো করতেই হবে। কিন্তু বিসিবির মূল যে কাজ খেলোয়াড় তৈরি করা, তা ভালোভাবে হচ্ছে না। বিসিবি যদি সঠিক পথে থাকত তাহলে আমরা ৫ সিনিয়র ক্রিকেটারের রিপ্লেস হিসেবে আরও কিছু ক্রিকেটার দেখতাম।’

সাম্প্রতিক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বিসিবির ‘দুর্বল’ পাইলাইন নিয়ে! প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা উঠে আসছেন ঠিকই কিন্তু জাতীয় দলে থীতু হতে পাচ্ছেন না। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যার অভাবে তুষার ইমরান, আবদুর রাজ্জাক, শাহরিয়ার নাফিস, নাঈম ইসলাম, শামসুর রহমান শুভ, সোহরাওয়ার্দী শুভর মতো তারকা ক্রিকেটাররা জাতীয় দল থেকে ঝড়ে পড়েছেন। অথচ তারা ঘরোয়া ক্রিকেটে ঠিকই ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন। তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনার জন্য বিসিবির কোনো সঠিক পরিকল্পনাও চোখে পড়েনি। এ প্রসঙ্গে জামিলের অভিমত, ‘আমাদের বেশকিছু ক্রিকেটার আছে, যারা অতীতে খুব ভালো খেলেছে। যাদের জন্য বিসিবি অনেক খরচও করেছে। এই নাঈম ইসলাম, শাহরিয়ার নাফিস, শামসুর রহমান, সোহরাওয়ার্দী শুভরা জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর তাদের পরিচর্যা দরকার ছিল। এদেরকে ঘষামাঝা করে আবার জাতীয় দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসা—এই কাজটা বিসিবি ঠিকমতো করতে পারেনি।’

পাইপলাইনের প্রক্রিয়াটা কি? প্রান্তিক পর্যায় থেকে জাতীয় দলে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া কি? স্কুল ক্রিকেটে ভালো করলে একজন ক্রিকেটার সুযোগ পাবেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে। সেখান থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ হয়ে হাইপারফরম্যান্স দলে যাবেন। তারপর ‘এ’ দলের হয়ে খেলে প্রস্তুত হয়েই জাতীয় দলে খেলবেন।  যেকোনো দলের জন্য ‘এ’ দলটা খুবই জরুরি। কেন না এই দল থেকেই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ আসে। তাই বিশ্বের ক্রিকেট-পরাশক্তি দলগুলোতে ‘এ’ দল ও জাতীয় দলের মধ্যে খুব বেশি শক্তির পার্থক্য থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এখানে সরাসরি অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়। এতে দেখা যায় প্রথম দুই এক ম্যাচে ভালো খেলে। আবার ফ্লপ হয়ে যান ওই ক্রিকেটার। তারপর দল থেকেই দ্রুত বাদ দেওয়া হয়।

ক্রিকেটাররা কেন জাতীয় দলে আসার পর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পাচ্ছেন না? এ ব্যাপারে বিসিবি যথেষ্ট মনোযোগী নয় বলেই মনে করেন জামিল, ‘আমাদের এখানে যে মেধাবী ক্রিকেটার নেই এটা ঠিক নয়। অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। কিন্তু এই প্রতিভাবানদের পরিচর্যা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।  আমরা সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, লিটন দাসের মতো মেধাবী ক্রিকেটার দেখছি। কিন্তু এদের মধ্যে কোনো ধারাবাহিকতা দেখছি না। হয়তো এক বছর ভালো খেলছে আবার ফ্লপ হয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটারদের ধারাবাহিক করতে বিসিবি যে পরিচর্যা দরকার সেটা করতে পাচ্ছে না।’

সব শেষে ৫ তারকা ক্রিকেটারের ‘রিপ্লেসমেন্ট’ ইস্যুকে সামনে এনে জামিল বলেন, ‘আমরা এখনো তাদের রিপ্লেসমেন্ট তৈরি করতে পারিনি এটা বাস্তব সত্য কথা। এই বিষয়টা আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটার তৈরির যে পাইপলাইন সে বিষয়টা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয়। আসলে আমরা যে বেশ কিছু সাফল্য পেয়েছি, সেটার আড়ালে এই ব্যর্থতাগুলো ঢেকে গেছে। এটা কখনোই বাংলাদেশ দলের  জন্য শুভকর নয়। ’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর