শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রিয়ালের হ্যাটট্রিক না লিভারপুলের পঞ্চম

রাশেদুর রহমান

রিয়ালের হ্যাটট্রিক না লিভারপুলের পঞ্চম

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগে জিদানের ক্লাসে মনোযোগী ছাত্র রোনালদোরা —এএফপি

সাঁইত্রিশ বছর আগের ইতিহাসটা কি বার বার ফিরে আসছে রিয়াল মাদ্রিদের সামনে! প্যারিসের প্রিন্স পার্কে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ (ইউরোপিয়ান কাপ) ফাইনালে লিভারপুলের কাছে ১-০ গোলে হেরে যাওয়াটা ছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসদের জন্য বিরাট এক আঘাত। ১৯৬৬-এর পর থেকেই ইউরোপ সেরার মুকুট জিততে ব্যর্থ রিয়াল মাদ্রিদ ১৯৮১-তে সুযোগ পেয়েছিল। সেই সুযোগটা ছিনিয়ে নেয় সে সময় ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে আধিপত্য বিস্তার করা লিভারপুল। কিয়েভের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ আজ সেই লিভারপুলের মুখোমুখি হওয়ার আগে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় শপথ নিচ্ছে হয়তো! প্রতিশোধের শপথ!

রিয়াল মাদ্রিদের সামনে প্রতিশোধের বিষয়টা আছে কি না বলা মুশকিল। তবে আপাতত জিনেদিন জিদানের চাকরি বাঁচানোটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে রোনালদোদের সামনে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে ব্যর্থ হওয়া মানেই জিদানের অব্যাহতি। গুঞ্জনটা এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে মিডিয়ায়! লা লিগা আর কোপা দেল রে কাপ অনেক আগেই হাতছাড়া হয়েছে রিয়ালের। এরপর থেকে জিদান তার সব মনোযোগ দিয়েছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। মৌসুম শেষে কর্তৃপক্ষের হাতে অন্তত একটা ট্রফি দিতে পারলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায়! রিয়াল মাদ্রিদ টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের মিশনে নামছে। যে রেকর্ড নেই অন্য কোনো ক্লাবেরই। অন্যদিকে লিভারপুলও দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকার পর শিরোপার ঘ্রাণ পাচ্ছে। ক্ষিধেটা তাদের এতই বেশি, রিয়ালের সব যোগ্যতাকে সমীহ করার পরও চ্যাম্পিয়ন হতে বদ্ধপরিকর অলরেডরা।

লিভারপুলের সেনেগাল তারকা স্যাডিও মানে তার গ্রামে ৩০০ জার্সি পাঠিয়েছেন। উদ্দেশ্য, সমর্থকদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়ানো। মানের মতো এমন অনেকেই করছেন ইউরোপে। তবে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে এলিটদের এই ফাইনাল নিয়ে পুরো ফুটবল দুনিয়াতেই উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এরই মধ্যে হোটেলের ভাড়া বেড়ে গেছে বহুগুণ। স্পেন আর ইংল্যান্ড থেকে ফুটবল সমর্থকরা ডেরা গেড়েছেন কিয়েভে। এ যেন আরেক উৎসব।

দিন কয়েক পরই বিশ্বকাপ ফুটবল। রাশিয়া নববধূর সাজ নিয়ে চূড়ান্ত আয়োজনের অপেক্ষায়। এই ফাঁকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালটাও কম উন্মাদনার হবে না। বিশ্বকাপের আগে একটা বোনাস পাচ্ছেন ফুটবল ভক্তদের। বিশেষ করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর মোহাম্মদ সালাহকে শেষবারের মতো পরখ করে নিতে পারবেন সমর্থকরা। বিশ্বকাপের আগে ক্লাবের জার্সিতে শেষ মিশনে নামছেন দুই সেরা ফুটবলার। রাশিয়ায় যাদের ওপর নজর থাকবে পুরো দুনিয়ার, নিজ নিজ দেশের স্বপ্নসারথি হয়ে আছেন রোনালদো-সালাহ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলতে নামার আগে সালাহ বলছেন, ‘লিভারপুলের হয়ে প্রথম মৌসুমে খেলতে নেমেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাটা হবে দারুণ এক ব্যাপার।’ আর রোনালদোর সামনে তো রেকর্ডেরই হাতছানি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক শিরোপা জয়ী হতে পারেন তিনি। অবশ্য ইউরোপিয়ান কাপে ছয়টি শিরোপা জিতে সবার ওপরে থেকে যাবেন ফ্রান্সিসকো গেন্টোই।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যেন রিয়াল মাদ্রিদের পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। লা লিগা কিংবা কোপা দেল রে কাপে যেমনই হোক, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এলেই তারা জ্বলে ওঠে। কোনো বাধাই যেন মানতে চায় না। গত দুই মৌসুমে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আর জুভেন্টাসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুল কি রিয়ালের এই জয়যাত্রা রুখতে পারবে! নাকি তারাও অ্যাটলেটিকো আর জুভেন্টাসের ভাগ্য বরণ করবে! উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ ১৩তম আর লিভারপুল ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের মিশনে নামছে। দেখা যাক, কার ভাগ্যে লেখা আছে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ!

সর্বশেষ খবর