সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রিয়ালের ১৩তম শিরোপা

রাশেদুর রহমান

রিয়ালের ১৩তম শিরোপা

মোহাম্মদ সালাহকে চরমতম আঘাত দিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করেছেন রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস। রেফারির ভূমিকাটা কী ঠিক হলো। এমন কি হলুদ কার্ডও তো দেখলেন না রামোস! অন্যদিকে সালাহের প্রতি রোনালদোর সহমর্মিতায় অভিভূত সবাই। মাঠ ছাড়ার সময় অনেকটা পথ সালাহকে এগিয়ে দিয়েছেন রোনালদো। লিভারপুল সমর্থকরা এসব নিয়েই চিন্তায় বিভোর ছিল। এরই মধ্যে অদ্ভূত ঘটনাটা ঘটে গেল।

করিম বেনজেমা গোলের নেশায় বুঁদ হয়ে লিভারপুলের ডি বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। বল ছিল লিভারপুল গোলরক্ষক ক্যারিয়াসের হাতে। নিজ দলের ডিফেন্ডারদের কাছে বল ছুড়ে দেন ক্যারিয়াস। সেই বল কৌশলে পা বাড়িয়ে বেনজেমা ঠেলে দেন লিভারপুলের জালে। বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যায় লিভারপুলের সমর্থকরা। জার্মান গোলরক্ষক লরিস ক্যারিয়াসের উপর ভয়ঙ্কর ক্ষেপে যান তারা। ম্যাচ শেষে অনেকেই মাঠে নেমে তাকে খুঁজতে থাকেন এক হাত নেবেন বলে! উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের গতিপথ বদলে দেয় ক্যারিয়াসের এই ভুলটা নয়, অন্য ঘটনা। ম্যাচের তখন ২৬তম মিনিট। মোহাম্মদ সালাহ বল নিয়ে ছুটলেন রিয়ালের গোলমুখ উদ্দেশ্যে। মাঝ পথে বাধ সাধলেন সার্জিও রামোস। বিবিসির ভাষ্যমতে, সালাহকে টেনে মাটিতে ফেলে দেন রিয়াল অধিনায়ক। কাঁধে গুরুতর আঘাত নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মিসরীয় তরুণ তারকা সালাহকে। এর পর থেকেই বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। লিভারপুলের গোলমুখে রিয়ালের আক্রমণের হার বেড়ে যায়। অথচ সালাহ যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, লিভারপুলের আধিপত্য মেনে নিতে হয়েছিল রিয়ালকে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম ২৫ মিনিটে রিয়ালের গোলমুখে ৯টা শট নিয়েছে লিভারপুল। অন্যদিকে রিয়ালের আক্রমণ ছিল শূন্যের কোটায়! রামোসের কৌশলী আঘাতটা ছিল সময়োপযোগী। রেফারির চোখ এড়িয়ে মোক্ষম একটা আঘাতই করেছেন তিনি। সালাহ বিদায় নেওয়ার পরই বদলে যায় ম্যাচের গতিপথ। জয়ের পথে ছুটতে থাকে রিয়াল মাদ্রিদ। বেনজেমার বিস্ময়কর গোলটা কয়েক মিনিট পর স্যাডিও মানে শোধ দিলেও বদলি হিসেবে মাঠে নেমে তাণ্ডব চালান ওয়েলসিয়ান তারকা গেরেথ বেলে। ব্যাকভলিতে গোল করে জিদানকে বিমোহিত করে দেন তিনি ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে। এরপর ৮২তম মিনিটে দূরপাল্লার শট থেকে করেন আরও একটি গোল। এবারও দায়ী ক্যারিয়াস। ঠিকমতো বল গ্রিপ করতে পারেননি বলেই গোলটা হয়েছে।

ক্যারিয়াস ভুল করেছেন। রেফারি দেখতে পাননি। রামোস অমানবিক আচরণ করেছেন। এসব বিষয়ের মধ্য দিয়েও চরম সত্যিটা হলো, রিয়াল মাদ্রিদ ৩-১ গোলে ম্যাচটা জিতেছে। জিদানের কৌশল আরও একবার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ হয়েছে। চাকরিটা বেঁচে গেছে তার। এরচেয়েও বড় বিষয়, দারুণ এক রেকর্ডের মালিক হলেন জিদান। ১৩ তম শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়ল রিয়াল মাদ্রিদও। প্রথম কোচ হিসেবে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের গৌরব এখন জিনেদিন জিদানের। এই গৌরব নেই বিশ্বসেরা কোনো কোচেরই। পেপ গার্ডিওলা, হোসে মরিনহো, কার্লো আনসেলত্তি, স্যার আলেক্স ফার্গুসন কারও নেই। টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের গৌরব নেই কোনো ক্লাবেরও। ইউরোপিয়ান ক্লাব নাম থাকাকালীন সর্বশেষ টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ। গার্ড মুলাররা ১৯৭৪, ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। অবশ্য এর আগে ইয়োহান ক্রুইফের আয়াক্স টানা তিনবার জিতেছিল ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৭১, ১৯৭২ ও ১৯৭৩)। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণের পর টানা তিনবার তো দূরে থাক, রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া টানা দুইবারও কোনো ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এর মধ্য দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ প্রমাণ করল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা সত্যিই ওদের টুর্নামেন্ট!

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও ব্যক্তিগতভাবে দারুণ একটা রেকর্ড গড়লেন। সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন তিনি (১৫ গোল)। জয় করলেন পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। রিয়ালের জার্সিতে ৪টি, ম্যানইউর জার্সিতে একটি। ছাড়িয়ে গেলেন মেসিদের চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের রেকর্ড। আর মাত্র একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলেই রোনালদো স্পর্শ করবেন ফ্রান্সিসকো জেন্টোর ৬টি ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের রেকর্ড। এসব রেকর্ড গড়ার পর রোনালদো দাবি করছেন, এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নাম বদলে যাক। সিআরসেভেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হোক নামটা!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর