বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেসিকে ঘিরেই যত আগ্রহ

রাশেদুর রহমান, মস্কো থেকে

মেসিকে ঘিরেই যত আগ্রহ

রাশিয়ান সময় সকাল ১১টা। বাংলাদেশে তখন দুপুর ২টা। আর্জেন্টিনা দল মস্কো নদীর তীরে অবস্থিত সিরোয়েঝকিন স্পোর্টস স্কুলের স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে আসে। একে একে মাঠে নেমে এলেন মেসি, এভার বানেগা, পাওলো দিবালারা। এরও বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই আর্জেন্টিনার ট্রেনিং গ্রাউন্ডের সামনে ভিড় জমে উঠল। ভক্তের দল খবর পেয়ে ছুটে এসেছে প্রিয় তারকাকে এক নজর দেখতে। তাদের বেশিরভাগের মুখেই মুখোশ। সবাই মেসি সেজে এসেছেন সত্যিকারের মেসিকে দেখতে। অনুশীলনে অন্য ফুটবলার থাকলেও দৃষ্টি সবার মেসির দিকেই।

হাজার হাজার ভক্ত তাকিয়ে আছে ট্রেনিং গ্রাউন্ডের দিকে। লিওনেল মেসি একবার করে বল স্পর্শ করেন আর সবাই চিৎকার করে উঠে। মেসিকে কাছ থেকে দেখার এমন সুযোগ পেয়ে আপ্লুত সবাই। মেসি, মেসি রবে আকাশ কাঁপিয়ে তুলল তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই। এমন হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যেও আর্জেন্টিনার ফুটবল জাদুকর নিজের কাজটা ঠিকই করে গেলেন। প্রস্তুতি নিলেন বিশ্বকাপের জন্য। দিন কয়েক পরই আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে আইসল্যান্ডের। ভাইকিংদের মুখোমুখি হওয়ার আগে মেসিদের প্রস্তুতিটা কেমন হলো? অনুশীলনে মেসিদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন এনজো পিরেজ। ম্যানুয়েল ল্যানজিনি ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে দল থেকে ছিটকে পড়ায় সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

 শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিলেন মেসিরা। এই প্রস্তুতি দিয়েই তাদেরকে সেরা খেলাটা খেলতে হবে বিশ্বকাপে। দিন কয়েক আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে। নিরাপত্তার অজুহাতে সেই ম্যাচ বাতিল করেছিল আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। এই কারণেই শেষ মুহূর্তের অনুশীলনে কোনো ফাঁক রাখছেন না কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে টানা দেড় ঘণ্টার অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছেন মেসিরা। ওয়ার্মআপ সেরে নিজেদের মধ্যেই বল নিয়ে লড়াই করেছেন। মাসকারেনোকে ডিফেন্স সামলাতে হবে। মাসকোস রোহোকেও। তাদেরকে বার বার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন মেসিরা। অবশ্য আলাদাভাবে দীর্ঘ সময় অনুশীলন করেছেন এভার বানেগা। আর্জেন্টিনার এমন কঠোর অনুশীলন প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতোই।

অবশ্য কেবল আর্জেন্টিনাই নয়, বিশ্বকাপের জন্য শেষ মুহূর্তের অনুশীলন সেরে নিচ্ছে সবাই। গতকাল মস্কোতে অনুশীলন করেছেন ইরান, পেরু এবং সুইডেনের ফুটবলাররা। এছাড়াও নিজেদের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে বেশিরভাগ দলই ঘাম ঝরিয়েছে।

বিশ্বকাপের সব দলই এখন রাশিয়ায়। কাল থেকে শুরু হবে ফুটবল নিয়ে বিশ্বযুদ্ধ। এ যুদ্ধ জয়ের জন্য প্রস্তুতিতে কোনো কমতি রাখতে চাইছেন না কোনো কোচই। ফুটবলাররাও নিজেদের সেরা ফর্ম ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আর ভক্তরা!

ফুটবল তারকারা কেমন ফিট, এসব নিয়ে মোটেও ভাবছে না তারা। ব্রাজিল ভক্তরা চাইছে, ছয় নম্বর ট্রফিটা রাশিয়াতেই জেতা হোক। রোনালদোভক্তরা চাইছেন পর্তুগাল এবার একটা বিশ্বকাপ জিতুক। মেসির হাতে তো বিশ্বকাপ তুলে দিতে পারলেই যেন পরম তৃপ্তি পান ভক্তকুল। তবে সব ছাপিয়ে বিশ্বকাপটা হয়ে উঠেছে আরও প্রাণবন্ত। রাশিয়াকে বাইরে থেকে দেখলে তেমন একটা বুঝা যায় না। তবে গভীর মনোযোগে দেখলেই বুঝা যায়। ট্রেনিং গ্রাউন্ডে মেসি, মেসি রবে চিৎকার করেছেন যারা, তাদের বেশিরভাগই রাশান। আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠী এখনো অনেকে পথে। যারা এসেছেন, তাদেরও বেশিরভাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। বাসস্থান খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিশ্বকাপের জন্য। রাশানদের এই যে ফুটবল উন্মাদনা, তা লোক দেখানো নয়। মেসিদের প্রতি তাদের অনুরাগ, ভালোবাসা যে তাদেরকে ফুটবলপ্রেমী হিসেবেই বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে। ভক্তদের এই আবেগের স্ফূরণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিভাবে প্রকাশ পায় তাই দেখার বিষয়। আর মেসিরাও নিজেদের ফুটবল কারুকার্য দিয়ে ভক্তদের ঋণ কতোটা শোধ করতে পারেন, দেখা যাক!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর