বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেসি-নেইমারের অপেক্ষায়

মেসি-নেইমারের অপেক্ষায়

অ্যাকসিলারেটর নামছে নিচে। এ নামার যেন কোনো শেষ নেই। ভূতলের এতটা গভীরে নামলে গা ছমছমে অনুভূতি হয়। ভুতুড়ে লাগে চারপাশ। কিন্তু অ্যাডমিরালতেস্কায়া মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গেলে অবাক হতে হয়। এখানে ব্যস্ত জীবন। এখানে সবাই এত দ্রুত হাঁটে যেন ‘দাঁড়াবার সময় তো নেই’। গতি কমলেই পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। সেন্ট পিটার্সবার্গেরই নয়, পৃথিবীর গভীরতম মেট্রো স্টেশনগুলোর একটা এটা। এখানে-সেখানে ম্যুরাল। কোথাও কোনো ধুলো নেই। কোনো দাগ নেই। ঝকঝকে-তকতকে। কেবল অ্যাডমিরালতেস্কায়া মেট্রো স্টেশনই নয়, সেন্ট পিটার্সবার্গের বেশিরভাগ মেট্রো স্টেশনই ভূতলের অনেকটা গভীরে। মানুষের জীবন এখানে মাটির গভীরেই যেন আবর্তিত হয়! এখানে অন্ধকার নেই কোথাও। রাত ১১টায় সন্ধ্যা হলেও সূর্য ডোবে না। আবছা অন্ধকার হতে হতেই সূর্য উঠে যায়। মাটির গভীরেই এখানে অন্ধকার খুঁজে নিতে হয়। এই শহরেই আসছেন লিওনেল মেসি-নেইমার। বর্তমান ফুটবলের দুই মহাতারকার অপেক্ষায় আছে পুরো সেন্ট পিটার্সবার্গ।

লিওনেল মেসি বল নিয়ে সবুজ মাঠে কারিকুরি করছেন। যেন তুলির আঁচড়ে আঁকছেন নতুন কোনো মহান শিল্পকর্ম। নেইমার মাত্র কয়েক মিটার দূর দিয়ে বল নিয়ে ছুটছেন গোলমুখে। চর্ম চোখে এ দৃশ্য দেখা একজন ফুটবলভক্তের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণের দিনটা এসেই গেল রাশানদের জন্য। গ্যালারি থেকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে ওরা প্রিয় তারকার দিকে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দেখতে পেলে জীবন ধন্য হয় নীল-নয়না রাশান মেয়েদের। বুকে-পিঠে-হাতে প্রিয় তারকাদের উল্কি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা শহরে-বন্দরে। পথে পথে। সেন্ট পিটার্সবার্গে বিশ্বকাপের উত্তাপ কেবল লাগতে শুরু করেছে। রাশিয়া-মিসর ম্যাচ দিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতে উঠলেও আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল ছাড়া যেন সবকিছুই থমকে আছে। সালাহকে নিয়ে এখানে উন্মাদনা আছে। তবে সবার মাঝেই মেসি-নেইমারের অপেক্ষা। সেন্ট পিটার্সবার্গে নামতেই স্বাগত জানানো ফিফা ভলান্টিয়ার মাশা বলছিল, এখানে আপনি মেসি-নেইমারের অসংখ্যভক্ত দেখতে পাবেন। এমনকি রাশানরা নিজেদের ফুটবলারদের ভুলে ছুটতে চাইছে মেসি-নেইমারদের পেছনে। সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের পাশে দেখা হওয়া এক রাশান বালক। পিটার। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। তার স্বপ্ন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাবে। জার্নালিস্ট পরিচয় পেতেই বলছিল, মেসি কবে আসবে বলতে পারেন? ২৬ জুন ওদের ম্যাচ আছে সেন্ট পিটার্সবার্গে। ২৫ জুন আসবে নিশ্চয়ই! উত্তর পেয়েই হেসে উঠল। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ দেখার খুব শখ তার। কিন্তু টিকিট নেই। রাস্তা-ঘাটে জার্নালিস্ট পরিচয় পেলে এমন অনেকেই টিকিট চেয়ে বসে। মনে করে, জার্নালিস্টদের নিশ্চয়ই টিকিট দেওয়ার ক্ষমতা আছে! এসব পাগল ভক্তদের বুঝানো দায় হয়ে উঠে, ম্যাচ দেখার জন্য জার্নালিস্টদেরও বিশেষ ধরনের টিকিট প্রয়োজন পড়ে।

সেন্ট পিটার্সবার্গের মানুষ মস্কোবাসীর মতো নয়। এখানে অভিজাতদের বাস। পরিপাটি জামা পরে তারা মাস্তি করতে খুব পছন্দ করে। পুতিনের এলাকা বলে এখানে সরকারের সুনজর থাকে সব সময়ই। ঐতিহ্যবাহী সেন্ট পিটার্সবার্গের সৌন্দর্য্য বর্ধনে বিরাম নেই কর্তৃপক্ষের। এরই মধ্যে মেট্রো স্টেশন বেড়ে গেছে (৬৭ থেকে ৬৯)। পুরো শহর ঘিরে রিং লাইন বসানোর কাজ শুরু হবে শিগগিরই। সেন্ট পিটার্সবার্গ শিল্পের শহর। সুন্দরের শহর। এই শহর এখন মেসি আর নেইমারের শহর হতে চলেছে। আগামীকালই এই শহরে নেইমাররা আসবেন। খেলবেন কোস্টারিকার বিপক্ষে। এরপর আসবেন আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। এখনো দুজনের কেউই মন ভরাতে পারেননি ভক্তদের। হয়ত সেন্ট পিটার্সবার্গে এসে বদলে যাবে মেসি-নেইমারদের গতিপথ! এখানেই হয়ত নিজেদের ছন্দ খুঁজে পাবে বর্তমান ফুটবলের দুই সেরা তারকা! ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা ছুটবে জয়ের পথে! আর ভক্তরা তাদের প্রিয় তারকাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস করবে। সেন্ট পিটার্সবার্গ কেবল মেসি-নেইমারের জন্যই নয়, অপেক্ষায় আছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের জন্যও। ‘ভামোস আর্জেন্টিনা’ আর ‘ওলে, ওলে, ওলে’ কোরাস না হলে যে ফুটবলের উন্মাদনাটাই বুঝা যায় না!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর