শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

জার্সির রঙের সঙ্গে বদলে যায় সম্পর্কও

জার্সির রঙের সঙ্গে বদলে যায় সম্পর্কও

ফুটবলে বন্ধু আর শত্রুর সংজ্ঞাটা ঠিক করা বড় কঠিন। এখানে বন্ধুও মাঝে মধ্যে চরম শত্রু হয়ে যায়। আবার উল্টোটাও সত্যি। বার্সা-রিয়ালের জার্সি গায়ে জড়ালেই পিকে-রামোস পরস্পরের শত্রু হয়ে ওঠেন। আবার স্পেনের জার্সিতে দুজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রু বধে নেমে পড়েন। ফুটবলের এই যে বৈচিত্র্য, এটা এক দারুণ ব্যাপার। একেকটা রং, এখানে শত্রু আর বন্ধুর পার্থক্য গড়ে দেয়। রঙের মধ্যেই খুঁজে নিতে হয় জীবনের ধারাটা।

সেন্ট পিটার্সবার্গে এখন হলুদ রঙের মিছিল। শর্ষে রঙা জার্সি গায়ে ব্রাজিল সমর্থকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে সবখানে। তাদের পদভারে কম্পিত ঐতিহ্যবাহী সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে অবস্থিত পর্যটকদের লোভনীয় স্থানগুলো। প্যালেস স্কয়ার, দি ব্রোঞ্জ হর্সম্যান, দি পিটার-প্যাভেলের দুর্গ, লাইট হাউস এবং দি চার্চ অব দি সেভিওর অন স্পিলড ব্লাড, ইম্পেরিয়াল সামার গার্ডেন, আরও কত কত স্থান। ব্রাজিলের ম্যাচ যে আজ! গত কয়েকদিন থেকেই ব্রাজিল সমর্থকরা এই শহরটাকে মাতিয়ে রেখেছিল। ফ্যানজোনে ছিল তাদের প্রাধান্য। অবশ্য ব্রাজিলের ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় আছে গোটা দুনিয়া। সেন্ট পিটার্সবার্গেও নানান দেশের নানান রঙের মানুষ আছে। বেশিরভাগই ব্রাজিল সমর্থক। তবে কোস্টারিকার সমর্থকও আছে অনেক। তারা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। নিজ দলের সমর্থনে ঐকতানে গান গায়। কোরাসের আওয়াজে জানান দেয়, হলুদ সাগরে কোস্টারিকাও আছে।

গত বিশ্বকাপে কোস্টারিকা চমকে দিয়েছিল ফুটবল দুনিয়াকে। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি আর ইংল্যান্ডকে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে দিয়েছিল তারা। ইতালিকে হারিয়েছিল ১-০ গোলে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের রাউন্ডে গিয়েই থেমে থাকেনি। গ্রিসকে হারিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। এমনকি শেষ আটের লড়াইয়ে কমলা রঙা ডাচদেরও নাভিশ্বাস তুলেছিল তারা। ব্রাজিলের মাটিতে চার বছর আগের সেই পারফরম্যান্সই কোস্টারিকার প্রতি পূর্ব ধারণা বদলে দেয় ফুটবল দুনিয়ার। এলিট শ্রেণিতে চলে আসে তারা। উত্তর আমেরিকা অঞ্চল থেকে বাছাই পর্ব পাড়ি দেয় দাপটের সঙ্গেই কিন্তু বিশ্বকাপে এসেই এবার যেন পথ হারিয়েছে কোস্টারিকা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা হেরে যায় সার্বিয়ার কাছে। এ কারণেই আজ ব্রাজিলের মতো কোস্টারিকারও ফাইনাল ম্যাচ। বরং ব্রাজিলের চেয়েও বেশি করে।

ব্রাজিল ড্র করেছে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে। ১-১ গোলের সেই ড্র নেইমারদের সামনের পথটা কঠিন করে তুলেছে। এ কারণেই আজকের জয়টা খুব জরুরি ব্রাজিলিয়ানদের। দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হবে তাহলেই। এমন কঠিন সমীকরণ থাকাতেই বন্ধুর প্রতি শত্রুর মনোভাব পোষণ করতে হচ্ছে মার্সেলোকে। রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্স লাইনে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন মার্সেলো। ক্যাসিয়াস যুগের পর থেকে গোলবার সামলাচ্ছেন কেইলর নাভাস। মার্সেলো আর নাভাসের বোঝাপড়াটাও দারুণ। প্রতিপক্ষের ধারালো আক্রমণগুলো বার বারই রুখে দেন এ দুজন। কিন্তু আজ?

মার্সেলো ভয়ঙ্কর একজন ফুটবলার। সময়মতো ঠিক স্থানে থাকাটাই যেন তার কাজ। তিনি ডিফেন্স করেন। প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেন। তারপর বল নিয়ে দ্রুততালে উঠে যান ওপরে। বল বানিয়ে দেন নিজ দলের স্কোরারদের। মার্সেলোর এই ফুটবল বৈচিত্র্য খুব ভালোই জানেন কেইলর নাভাস। আর নাভাসের দুর্বলতাও তো ভালো করেই জানেন মার্সেলো। দুজনের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের ড্রেসিংরুমে সম্পর্কটা এমনই যে প্রয়োজনে একে অপরের দাড়ি কাটার কাজটাও করে দেন অনায়াসে।

ফুটবলে পরম মিত্র আর চরম শত্রু বলে সম্ভবত কিছু নেই। এখানে জার্সির রঙের সঙ্গে বদলে যায় সম্পর্কও। গত রাতে যেমন মেসি-রাকিটিচকে প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলতে হয়েছে। যে মেসির পায়ে বল দেওয়ার সুযোগ খোঁজেন রাকিটিচ ম্যাচজুড়ে, সেই মেসির কাছ থেকেই বল কেড়ে নিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে ট্যাকল করেছেন। এমনই আরও কতজনকেই তো বিশ্বকাপে বন্ধু থেকে শত্রু আর শত্রু থেকে বন্ধু হতে হয়েছে। ফুটবল তাই এক মহামিলনেরও খেলা। বিশ্বটাকে আপন করে নেওয়ার খেলা।

সর্বশেষ খবর