শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
আসলামের কলাম

গোলরক্ষকই আর্জেন্টিনার মনোবল ভেঙে দিয়েছে

গোলরক্ষকই আর্জেন্টিনার মনোবল ভেঙে দিয়েছে

প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছিল। ভেবেছিলাম ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মেসিরা জ্বলে উঠবেন। ক্রোটরা আগের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে নাইজেরিয়াকে হারিয়েছিল। নিঃসন্দেহে তারা বৃহস্পতিবার রাতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু আর্জেন্টিনার জয় ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না। ভেবেছিলাম মেসিরা গা ঝেড়ে উঠবেন। ছন্দময় খেলা খেলে বিশ্বকাপের লড়াইয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু একি দেখলাম আগের ম্যাচের চেয়ে আর্জেন্টিনাকে আরও নিষ্প্রাণ। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়াকে দেখে মনে হয়েছে তারা যেন শপথ নিয়ে মাঠে নেমেছিল জয় ছাড়া ফিরবে না।

বাস্তবে কিন্তু তাই হয়েছে। ৩-০ গোলে জিতে শেষ ষোল নিশ্চিত করেছে। ক্রোয়েশিয়া শক্তিশালী দল তারা আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারে এটা কোনো অঘটন নয়। কিন্তু এমনভাবে বিধ্বস্ত হবে আমি কেন কেউ ভাবতে পারেনি। আর্জেন্টিনার হারে সমর্থক আফসোস করবে সেই সুযোগই নেই। আফসোস কখন করে যখন দল ভালো খেলে হেরে যায়। আর্জেন্টিনা খেলতেই পারেনি। এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড রয়েছে আর্জেন্টিনার। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে যে পারফরম্যান্স করেছে তা আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্সই বলব।

মেসি ভয়ঙ্কর বলে প্রতিপক্ষরা তাকে আলাদাভাবে মার্কিংয়ে রাখে। ক্রোয়েশিয়া কিন্তু মেসিকে ফ্রি রেখেছিল। এই ক্ষেত্রে ক্রোট কোচ জ্লাতকো দালিচ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। শিষ্যদের বাড়তি চাপে রাখেননি। মেসিকে ঘিরেই নাকি কোচ ছক এঁকেছিলেন। কিন্তু মেসিকে কী মেসি রূপে দেখা গেছে? তাকে ফাউলও করা হয়নি। তারপরও ডি-বক্সের ভিতরে সেইভাবে ঢুকতে পারেননি।

তারপরও বলব এই হারে দায়ী গোলরক্ষক উইলি কাবা ইয়েরো। তার ভুলেই মূলত সর্বনাশ হয়েছে। মারকাদো তাকে ব্যাক পাস করেন। কাবাইয়েরো সামনেই দাঁড়ানো ছিল ক্রোয়েশিয়ার রেবিচ। গোলরক্ষকের উচিত ছিল থ্রোর মাধ্যমে বলটা ক্লিয়ার করা। কিন্তু বোকার মতো ভলি মারতে গিয়ে বল পেয়ে যান রেবিচ। অসাধারণ গোল করে দলকে এগিয়ে রাখেন তিনি। এই গোলের পরই ক্রোটরা যেমন উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন, তেমনিভাবে মনোবল ভেঙে যায় মেসিদের। এরপর মদ্রিক ও রকিটিচ অনেকটা বিনা বাধায় গোল করেন। ম্যাচে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স বলে কিছুই ছিল না। বার বার তারা ফাউলের আশ্রয় নিয়েছেন। যা আর্জেন্টিনা দলের জন্য বড্ড বেমানান।

জানি না কথাটা বলা ঠিক হচ্ছে কিনা, তারপরও বলব আর্জেন্টিনা দলে হয়তো খেলোয়াড়দের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। তা না হলে মাঠে মেসিদের এমন বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন? মিডিয়াতে আগেই এসেছে কোচের সঙ্গে মেসির বনিবনা হচ্ছে না। অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে মেসি নাকি কথাও বলেন না। সত্যি যদি এমন হয়ে থাকে দল যত শক্তিশালীই হোক না কেন জয় পাওয়াটা মুশকিল। এমন দ্বন্দ্বে অনেক দলই সম্ভাবনা থাকার পরও বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এবার সেই রোগ আর্জেন্টিনাকে পেয়েছে কিনা সেটাই রহস্য।

ম্যারাডোনা শুরু থেকেই কোচ সাম্পাওলির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি বলব তার কথাই সত্য। দলকে সাজাতেই পারছেন না। জানি না দলে কোনো দ্বন্দ্ব আছে কিনা। তা না হলে শুরু থেকে দিবালার মতো খেলোয়াড়কে নামানো হবে না কেন? বৃহস্পতিবারও নামার পরই আক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। যাক হেরে যখন গেছে এখন এই প্রসঙ্গ তুলে লাভ নেই। আর্জেন্টিনার এখনো দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা নির্ভর করছে অনেক যদির ওপর। বলতে পারি আর্জেন্টিনার ভাগ্য এখন সুতোর ওপর ঝুলছে।

সর্বশেষ খবর