রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নীরবেই চলে গেলেন নেইমার

নীরবেই চলে গেলেন নেইমার

এবারও হলো না। শিরোপার বদলে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেই নীরবে হোটেল ছাড়ছেন ব্রাজিলের নেইমার —এএফপি

ব্রাজিল দলকে একবার কাঁদিয়েছিলেন থিয়েরি অঁরি। ১৯৯৮ সালে। জিদানের সঙ্গী হিসেবে। রোনাল্ডো-রোমারিওরা ১৯৯৮’র ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে যাওয়ার পর জিদানরা নিশ্চয়ই তাদের পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। গত পরশু আরও একবার ব্রাজিলিয়ানদের সান্ত্বনা দিলেন থিয়েরি অঁরি। এবার বেলজিয়ামের সহকারী কোচ হিসেবে। কেবল অঁরিই নন, ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইডেন হ্যাজার্ডও এগিয়ে যান নেইমারের দিকে। অঁরির বুকে মুখ লুকিয়ে তখন সান্ত্বনা খুঁজছেন নেইমার। বেলজিয়ামের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকেই যে বিদায় নিতে হলো তাকে। ব্রাজিল দল মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলবে না। এই খবর জানার পরও সাংবাদিকের দলটা জটলা পাকিয়ে রইল কাজান অ্যারিনার ছোট্ট মিক্সড জোনে। বিশ্বকাপের অন্যান্য স্টেডিয়ামগুলোর তুলনায় কাজান অ্যারিনার মিক্সড জোন অনেক ছোট। গাদাগাদি করে প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ব্রাজিল দলের দেখা মিলল। মার্সেলো এলেন সবার আগে। বেশিক্ষণ কথা বলেননি। সমর্থকদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেই চলে গেলেন। তারপর একে একে সবাই আসতে লাগলেন। থিয়াগো সিলভা, কটিনহো, পলিনহো, জেসুস, ফিরমিনো, ব্রাজিল দলের সদস্যরা। তবে সবার দৃষ্টি খুঁজে ফিরছিল একজনকেই। তিনি নেইমার। ব্রাজিল দলের সুপারস্টার কী আজও কোনো কথা না বলেই চলে যাবেন!

শেষ ষোলোর ম্যাচে মেক্সিকোকে হারানোর পর হাসতে হাসতে সামারার মিক্সড জোনে প্রবেশ করেছিলেন নেইমার। সতীর্থদের সঙ্গে কৌতুক করতে করতেই চলে গিয়েছিলেন। তবে সেদিন মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়ের জন্য পাওয়া অভিনন্দনের জবাব দিয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। কিন্তু গত পরশু সবকিছু কেমন বদলে গেল। নেইমারের মুখে হাসি নেই। কিছু জিজ্ঞেস করলেই যেন চোখ ফেটে বেরিয়ে আসবে অশ্রু! ‘মি. নেইমার, মি. নেইমার’। কয়েকবার ডাকার পর উদাস নয়নে একবার তাকিয়েই চলতে লাগলেন সামনের দিকে। বর্তমান ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে দামি তারকা কোনো কথাই বললেন না। নেইমার চুপচাপ চলে গেলেও কথা বললেন অন্যরা।

 বেশিরভাগই দুঃখ প্রকাশ করে চলে গেলেন। কটিনহো কথা বললেন দীর্ঘসময়। পর্তুগিজ ভাষায়। ফিফার অনুবাদকের সাহায্যে উদ্ধার করা গেল এর অনেকটা। বার্সা তারকা বললেন, ‘আমরা ম্যাচটায় দারুণ খেলেছি। জয় না পাওয়াটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী হতে পারে! দ্বিতীয়ার্ধের খেলাটার কথা ভাবুন।’ কটিনহো ঠিকই বলেছেন। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল দলের আক্রমণের সংখ্যা ছিল ২৩টা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটা গোলের দারুণ সুযোগ ছিল। কিন্তু গোল হয়নি। এটা কোচের পরিকল্পনার দোষ হতে পারে না। ব্রাজিল দলের কেউই মনে করে না, কোচ তিতের কৌশলটা ব্যর্থ হয়েছে। বরং বেলজিয়ামের খেলাটা দারুণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করে তারা। উইলিয়ান যেমন বলে গেলেন, ‘প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলেছে বেলজিয়াম। ওখানেই তারা এগিয়ে গেছে। সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।’ আর পলিনহোর মুখে ছিল কর্টয়েস বন্দনা। ‘আমরা দারুণ খেলেছি। কিন্তু কর্টয়েস তার চেয়েও দারুণ কিছু সেভ করেছে। এটাই বেলজিয়ামকে এগিয়ে দেয়।’ পলিনহো ঠিকই বলেছেন। ডজনখানেক সেভ করে বেলজিয়ামের জয়ের অন্যতম নায়ক তো কর্টয়েসই। বেলজিয়ামের প্রশংসা করলেও ব্রাজিল তারকারা কেউই দোষ দেয়নি ফার্নান্দিনহোকে। তার আত্মঘাতী গোলেই তো পিছিয়ে পড়েছিল ব্রাজিল। ফুটবলে এমনটা হতেই পারে। এটা নেইমারদের চেয়ে বেশি আর কে জানে! ব্রাজিল দল পরাজিত হয়েও তাই কেউ কারও দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করল না।

ব্রাজিলের এই বিদায়েও দারুণ একটা মিল থেকে গেল। কাজান অ্যারিনা থেকেই ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলও বিদায় নিল একই স্টেডিয়াম থেকেই!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর