সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

লড়াইটা ছিল মডরিচ এমবাপ্পেরও

আসিফ ইকবাল

লড়াইটা ছিল মডরিচ এমবাপ্পেরও

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি ফুটবলে গত এক দশকের সবচেয়ে পরিচিত মুখ। দুই ফুটবলার পায়ের জাদুতে ফুটবল বিশ্ব শাসন করছেন ১০ বছর ধরে। তাদের সৃজনশীলতা ও নান্দনিকতায় মুগ্ধ ফুটবলপ্রেমীরা। নেইমার, অ্যারিয়েন রোবেন, গ্যারেথ বেল, ওয়েইন রুনিরা সবাই নিজ নিজ দেশের বড় বড় তারকা। দাপটের সঙ্গে এরা খেলছেন এবং খেলাচ্ছেনও সতীর্থদের। কিন্তু মেসি ও রোনালদোদের পেছনে ফেলে নিজেদের স্থায়ী করতে পারেননি। দুই ফুটবলার দুনিয়ার তাবৎ সব পুরস্কার জিতে উজ্জ্বল করেছেন নিজ নিজ ঘর। রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নজরকাড়া ফুটবল খেলে মেসি ও রোনালদোকে ছিটকে ফেলেছেন লুকা মডরিচ ও কিলিয়েন এমবাপ্পে। মডরিচ ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ড জেনারেল এবং এমবাপ্পে ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকিং জেনারেল। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার বিশ্ব সেরার লড়াইকে আড়াল করে সব আলো নিজেদের দিকে টেনে নেন দুই দলের দুই জেনারেল এমবাপ্পে ও মডরিচ।

ফুটবলার হওয়ার কথা ছিল না মডরিচের। হয়েছেন। ৬ বছর বয়সে অন্য বাচ্চাদের মতো যখন খেলায় ব্যস্ত থাকার কথা, তখন দেখেছেন সার্ব যোদ্ধাদের হাতে পিতামহকে নিহত হতে। এরপর ক্যাম্পে কেটেছে ছয় বছর বয়সী মডরিচের। ভয় ও মানসিক জড়তা কাটাতে ক্যাম্পে ফুটবল খেলে সময় পার করতেন। ছোট্ট সেই শিশু মডরিচ এখন রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় তারকা। রোনালদো, সার্জিও র‌্যামোসদের মতো তারকা থাকার পরও রিয়াল মাদ্রিদে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন আলাদা করে। রিয়ালের হয়ে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে সফল, তারপরও জেতা হয়নি ‘ব্যালন ডি অর’ কিংবা অন্য কোনো বড় পুরস্কার। এবার তিনি বিশ্বকাপের ‘গোল্ডেন বল’ জেতার অন্যতম দাবিদার। ইভান রাকিটিচ, সুবাসিচ, কেভিসিচদের মতো সতীর্থ থাকার পরও ক্রোয়েশিয়াকে স্বপ্নের ফাইনালে তোলার মূল নায়ক কিন্তু লুকা মডরিচ। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ মডরিচ নিজে খেলছেন, সতীর্থদের খেলাচ্ছেন এবং জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন। অদম্য মানসিকতার মডরিচের নেতৃত্বে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে ক্রোয়েশিয়া। নকআউট পর্ব, কোয়োর্টার ফাইনালে ১২০ মিনিটের পর টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে জায়গা নেয় ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রটি। সেমিফাইনালেও ইংল্যান্ডকে হারায় ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে। টানা তিনটি নকআউট ম্যাচ ১২০ মিনিট করে ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা নেওয়া একমাত্র দেশ ক্রোয়েশিয়া। দুর্দমনীয় ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ড জেনারেল মডরিচ রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত ফুটবলারদের একজন।

এমবাপ্পে ফুটবলার হওয়ার কথা ছিল না। অথচ ৬ বছর বয়সেই এমবাপ্পে স্বপ্ন দেখতেন রিয়াল মাদ্রিদে খেলার। স্বপ্ন দেখতেন ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার। ক্যামেরুনিয়ান বাবা ও আলজেরিয়ান মায়ের সন্তান এমবাপ্পের স্বপ্নের কথা শুনে অনেকেই নাক ছিটকাচ্ছেন তখন। হেসেছেনও অনেকে। কিন্তু এমবাপ্পে ছিলেন নিজের সিদ্ধান্তে অটল। রিয়ালের সাদা জার্সি পড়া হয়নি তার। তবে ফ্রান্সের জার্সি গায়ে চড়িয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণের পথে ১৯ বছর বয়সী এমবাপ্পে। শুধু তাই নয়, মেসি, রোনালদো, নেইমাররা যা পারেননি, সেটাই করার পথে ফরাসি স্ট্রাইকিং জেনারেল। বিশ্বকাপে গতির সঙ্গে স্কিলের অপূর্ব মিশেলে দুরন্ত ফুটবল খেলে গোল করেছেন ৩টি। প্রতিটি ম্যাচে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগকে ছিন্নভিন্ন করেছেন দ্রুতগতির ফুটবল খেলে। গ্রিজম্যান, পগবা, জিরৌডদের মতো তারকা ফুটবলার থাকার পরও ফরাসিদের প্রাণভোমরা কিলিয়েন এমবাপ্পে। বিশ্বকাপের ‘গোল্ডেন বল’ জেতার অন্যতম দাবিদারও তিনি। এক যুগ আগের দুঃখ ভুলে দিদিয়ের দেশমের ফ্রান্স আবারও উদ্ভাসিত আনন্দে মেতে উঠেছে, না, নতুন রূপকথা লিখেছে ক্রোয়েশিয়া। সেটা দেখেছেন ফুটবল দুনিয়া।

সর্বশেষ খবর