মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপে ইউরোপের জয়জয়কার

ক্রীড়া ডেস্ক

বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপা জেতার কৃতিত্ব উরুগুয়ের। ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালে তারা ট্রফি জিতে। এরপর দেশটির আর নামগন্ধ নেই। ফাইনালও খেলতে পারেনি। ল্যাতিন আমেরিকার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাই এরপর বিশ্ব কাঁপিয়েছে। পেলে ও ম্যারাডোনা ছাড়াও অসংখ্য তারকার সন্ধান মিলেছে দুই দেশে। ব্রাজিল পাঁচ আর আর্জেন্টিনা দুবার বিশ্বকাপে জিতেছে। বিশ্ব আসরে ল্যাতিনরা ৯ ও ইউরোপ ১২ বার ট্রফি নিজেদের করে নিয়েছে। ব্রাজিল যখন কাপ জেতা শুরু করে মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপ শুধু ল্যাতিনদের জন্য।

১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা বিশ্বজয়ের পর ল্যাতিনদের দাপট তুঙ্গে উঠেছিল। তবু একবার ল্যাতিন ও পরের বার ইউরোপ এভাবেই চলছিল বিশ্বজয়ের ইতিহাস। কালের বিবর্তনে ল্যাতিনদের কাছে বিশ্বকাপ জেতা এখন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ২০০২ সালে ব্রাজিল শেষবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর্জেন্টিনা ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠলেও রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকে। পৃথিবী জুড়ে দুই দেশেরই সমর্থক বেশি। বাংলাদেশ তো বিশ্বকাপ এলে দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়।

প্রতি আসরে সমর্থকদের প্রত্যাশা থাকে হয় আর্জেন্টিনা না হয় ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতুক। অথচ গত চার আসরে তাদের পাত্তাই নেই। এবার মেসি ও নেইমারকে ঘিরে সে কি উন্মাদনা। মনে হচ্ছিল এই দুই দেশ ছাড়া অন্যদের কাপ জয়ের সামর্থ্য নেই। অথচ ব্রাজিল কোয়ার্টারে ও আর্জেন্টিনার বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় দ্বিতীয় রাউন্ডেই। এবারও ল্যাতিন আমেরিকার কোনো দেশই চ্যাম্পিয়ন হতে পারছে না। সেমিতে ইউরোপের চার দেশ উঠায় বিশ্বকাপের ট্রফি ইউরোপের নিশ্চিত হয়ে যায়। ২০০৬ ইতালি, ২০১০ স্পেন, ২০১৪ জার্মানি। এবারও চ্যাম্পিয়ন ইউরোপ। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি বিশ্বকাপ ইউরোপিয়ান কাপে পরিণত হয়েছে। চার আসর মানে ১৬ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে ল্যাতিনদের দাপট ম্লানই হয়ে গেছে। ২০২২ সালেও ইউরোপকে শিরোপা থেকে হটানো যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কথা হচ্ছে ল্যাতিনদের কেন এই বেহাল দশা। অন্য দেশের অবস্থা জানি না। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বার বার যদি ব্যর্থ হয় বিশ্বকাপ ঘিরে বাংলাদেশে এই উন্মাদনা থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইতালি এবার চূড়ান্ত পর্বেই খেলতে পারেনি। ২০১৪ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি গ্রুপপর্ব থেকেই আউট। এরপরও শেষ আটে ছয়টি দেশই ইউরোপের। সেমিতেও ইউরোপেরই দখলে। ল্যাতিনদের সর্বনাশ হয়ে গেছে তাদের খেলোয়াড়রা ইউরোপিয়ান লিগে অংশ নিয়ে। যেখানে অর্থের ছড়াছড়ি সেখানে ফুটবলাররা খেলবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা যে বড় ফাঁদ ল্যাতিনরা তা বুঝতেই পারছে না।

 এক সময় ল্যাতিনদের খেলায় আলাদা একটা ছন্দ ছিল। রোনাল্ডো, রোনালদিনহো, জিকো, বেবেতো, ম্যারাডোনা, বাতিস্তুতা, ক্যানাজিয়া এদের খেলা দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে যেতেন।

আর্জেন্টিনায় এখনো মেসির মতো বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার রয়েছে। ব্রাজিলেতো তারকার অভাব নেই। লিগে দাপট দেখালেও বিশ্বকাপে তারা ম্লান। ইউরোপিয়ানরা ল্যাতিনদের সব কৌশল জেনে গেছে। ব্যর্থতার নেপথ্য শুধু যে এটাই বড় কারণ তাও বলা যাবে না। এখানে অনেকের মধ্যে পা বাঁচানোর প্রবণতা রয়েছে। বিশ্বকাপ খেলে যদি ইনজুরি হয় তাহলে তো অর্থের পথটা বন্ধ হয়ে যাবে। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের ব্যর্থতায় ভক্তরা হা-হুতাশ করছে। কিন্তু ল্যাতিন ফুটবলে যে সংকটাপন্ন অবস্থা তাতে পরিবর্তন বা পরিকল্পনা করে না এগুলে বিশ্বকাপে ইউরোপের দাপট ভাঙানো মুশকিল হবে।

সর্বশেষ খবর