শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

লড়াই এবার আমেরিকায়

মেজবাহ্-উল-হক

লড়াই এবার আমেরিকায়

ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ দুটি টি-২০ ম্যাচ —ইন্টারনেট

আমেরিকার প্রথম ক্রিকেট ভেন্যু সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড স্টেডিয়াম। ফ্লোরিডার এই স্টেডিয়ামটি ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসির কাছ থেকে ‘ওয়ানডে ভেন্যু’র স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৬ সালের মার্চে। এই স্টেডিয়ামেই রবিবার ভোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। আমেরিকার মাটিতে টাইগারদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ!

ফ্লোরিডার এই স্টেডিয়ামে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলেছে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। যে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান করেছিল কিউইরা। এটি শুধু ফ্লোরিডায় নয়, আমেরিকার মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। ওই সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়।

তবে এর আগেই সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড স্টেডিয়ামে ‘মার্টিন লুথার কিং টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’ নামে একটি ঘরোয়া আসর বসেছিল। যেখানে অংশ নিয়েছিল স্থানীয় ক্রিকেটার ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। এরপর সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে আরেকটি টুর্নামেন্ট হয়েছিল, যেখানে জাভেদ মিয়াদাঁদ, মোহাম্মদ আজহার উদ্দীন ও রিচি রিচার্ডসনের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা অংশ নিয়েছিলেন।

ফ্লোরিডায় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালে। ওই সিরিজে অংশ নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছে ক্যারিবীয়রা।

২০১৬ সালে ক্যারিবীয়ান প্রিমিয়ার লিগের বেশ কয়েকটি টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে এই সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড স্টেডিয়ামে। একই বছর এই ভেন্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের আরেকটি টি-২০ সিরিজ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পণ্ড হয়ে গিয়েছিল। তবে ওই সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ছিল টি-২০র ঐতিহাসিক এক ম্যাচ!

ওই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে ব্যাট করে ২৪৫ রানের পাহাড়সম স্কোর করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৪৪ রানে থেমে যায় ভারত। মাত্র ১ রানে জিতে যায় ক্যারিবীয়রা।

ভারতের ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল মাত্র ৪৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। আন্তর্জাতিক টি-২০তে তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। টি-২০তে প্রথম দ্রুততম সেঞ্চুরি ৩৫ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার এবং ভারতের রোহিত শর্মা করেছেন। দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক ব্যাটসম্যান রিচার্ড লেভি ৪৫ বলে।

লোকেশ রাহুলের আগে ফ্লোরিডায় সবচেয়ে দ্রুত গতির ইনিংসটা খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার এভিন লুইস। তিনি মাত্র ৪৯ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। অবশ্য একই ম্যাচে পরের ইনিংসে লুইসের রেকর্ডটি ভেঙে দেন রাহুল। ফ্লোরিডায় এখন পর্যন্ত এই দুটি সেঞ্চুরিই হয়েছে।

সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের টি-২০র সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছে। ক্যারিবীয়দের ২৪৫ রানের ইনিংসটি টি-২০ চতুর্থতম সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ভারতের ২৪৪ রানের স্কোরটি পঞ্চম সর্বোচ্চ এবং তাদের নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চতম। টি-২০তে সর্বোচ্চ রানের স্কোর অস্ট্রেলিয়ার ২৬৩ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬০ রানের স্কোরের মালিক ভারত এবং শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪৮ রানের স্কোর অস্ট্রেলিয়ার।

সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড স্টেডিয়াম ক্যারিবীয়দের জন্য ‘পয়মন্ত’ ভেন্যু। এখানে তারা কোনো ম্যাচে হারেনি। ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত ছয় ম্যাচের মধ্যে চারটিতে অংশ নিয়েছে ক্যারিবীয়রা। তিন ম্যাচে জিতেছে এবং এক ম্যাচ বৃষ্টির জন্য পরিত্যক্ত হয়েছে। দুই ম্যাচেই ২ শতাধিক রানের স্কোর করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

টাইগাররা কি পারবে ক্যারিবীয়দেরকে তাদের পছন্দের ভেন্যুতে পরাজিত করতে? সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের ওয়ার্নার পার্কে বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজে ফিরতে হলে সামনের ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজে টাইগাররা জিতেছিল ব্যাটসম্যানদের দাপুটে পারফরম্যান্সের জন্যই। বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু প্রথম টি-২০ ম্যাচে সিনিয়ররা ভালো করতে পারেননি। তাই স্কোরও বড় হয়নি। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্যই হেরে যায় বাংলাদেশ।

ক্যারিবীয় দ্বীপে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন  তরুণ ক্রিকেটাররা। পুরো সিরিজেই তারা ছিলেন সিনিয়রদের ছায়ায়। তবে আমেরিকায় কি ঘুম ভাঙবে তরুণদের?

যেকোনো ক্রীড়া ইভেন্টে দর্শকই হচ্ছেন প্রাণ। কিন্তু ক্যারিবীয় দ্বীপে গ্যালারিতে বাংলাদেশের দর্শক ছিল না বললেই চলে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দল অনেক সমর্থন পাওয়ার কথা! যদিও এই স্টেডিয়ামে দর্শক ধারণক্ষমতা মাত্র ২০ হাজার। অনেকেই ধারণা করছেন, গ্যালারিতে বাংলাদেশি দর্শকই বেশি থাকতে পারে! কারণ ফ্লোরিডায় অনেক বাংলাদেশির বাস করে। তা ছাড়া অন্যান্য প্রদেশ থেকেও খেলা দেখার জন্য ফ্লোরিডায়  যেতে পারেন। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও মনে করেন, গ্যালারির সমর্থন পেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা উজ্জীবিত হতে পারেন। ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ জিততে পারলে সিরিজে সমতা আনার পাশাপাশি ক্যারিবীয়দের প্রথমবারের মতো পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দিতে পারে। কিন্তু আমেরিকার মাটিতে টাইগাররা কি রুখতে পারবে ক্যারিবীয়দের!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর