রবিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমেরিকায় ক্রিকেট উন্মাদনা

ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আগমন যেন প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে উৎসবের আমেজ নিয়ে এসেছিল। শুক্রবার রাতে টাইগারদের সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রবাসী বাঙালিরা। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়া উদ্দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আমেরিকায় ক্রিকেট উন্মাদনা

ফ্লোরিডায় প্রবাসী বাঙালিরা সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে —সংগৃহীত

ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ নেই আমেরিকানদের। মার্কিনরা ব্যস্ত বাস্কেটবল, আইস হকি, আমেরিকান ফুটবল, বক্সিং, গলফ, বেসবল নিয়ে। সকারেও (ফুটবল) বেশ আগ্রহী তারা। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আরেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র চীনেও ক্রিকেট হয় না বললেই চলে। তবে বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা করতে হলে এই দুই দেশের জড়িত হওয়ার বিকল্প নেই!

ক্রিকেট মূলত এশিয়া অঞ্চলে জনপ্রিয় খেলা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে দক্ষিণ এশিয়ায়। উপমহাদেশের প্রধান খেলা ক্রিকেট। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পর আফগানিস্তান, নেপালও উঠে আসছে। আফগানরা তো এখন ক্রিকেটে অনেক এগিয়ে গেছে। টি-২০তে তারা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ওপরে। এখন নেপালিরাও ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেছে। কিছুদিন আগেই তারা ওয়ানডে মর্যাদাও পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দলটি শুক্রবার ওয়ানডেতে নেদারল্যান্ডসকে ১ রানে হারিয়েছে। এটি ছিল তাদের প্রথম জয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজেও দারুণ জনপ্রিয় ক্রিকেট। কিন্তু ক্যারিবীয়ানরা ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলের (সকার) দিকে বেশি ঝুঁকছে। অস্ট্রেলিয়াতেও ক্রিকেট জনপ্রিয়তার শীর্ষে নেই। যদিও দেশটি সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে। ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের জন্ম হলেও এই খেলাটি কখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্থান করে নিতে পারেনি।

ইউরোপের আরও বেশ কয়েকটি দেশ ক্রিকেট খেলছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে তাদের প্রতিবেশি দেশ ওয়েলস এক হয়ে ক্রিকেট খেলে। গ্রেট ব্রিটেনের অন্য দল স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যে থাকলেও তারা আলাদা দেশ হিসেবে অংশ নেয়। এছাড়া আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস টপ লেবেলে ক্রিকেট খেলে। তবে তারা কখনোই ক্রিকেটকে প্রধান খেলা হিসেবে বেছে নেয়নি।

মজার বিষয় হচ্ছে, ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে লন্ডনের ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলছে বাংলাদেশ কিন্তু গ্যালারিতে মাশরাফিদের সমর্থক বেশি। এমন দৃশ্যই প্রমাণ করে, ক্রিকেট তাদেরকে ততটা স্পর্শ করেনি, ক্রিকেট নিয়ে যতটা পাগল দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়ামোদীরা। এশিয়ার সবচেয়ে ক্রীড়া ইভেন্ট এশিয়ান গেমস। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেনে অনুষ্ঠিত সব শেষ আসরে ক্রিকেট ছিল। কিন্তু বড় দেশগুলোর আগ্রহ না থাকায় বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর অলিম্পিকেও ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। পাওয়ারফুল দেশগুলো ক্রিকেট না খেলার কারণে এমনটা হচ্ছে। ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসির জন্য এমন ঘটনাগুলো ‘অশনি সংকেত’ই বটে! এ কারণেই কিনা ক্রিকেটের বিশ্বায়নে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে আইসিসি। তারই অংশ হিসেবেই হয়তো আমেরিকার অন্যতম প্রধান অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড স্টেডিয়ামকে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ভেন্যুর মর্যাদা দিয়েছে।

ফ্লোরিডায় খুব বেশি ক্রিকেট ম্যাচ হয়নি। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগে মাত্র ছয়টি খেলা হয়েছে। তবে ক্যারিবীয়ান প্রিমিয়ার লিগের খেলা নিয়মিত হয় ফ্লোরিডায়। আমেরিকায় খেলার অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে ওই অঞ্চলে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেওয়া।

সাকিবদের খেলা নিয়ে আমেরিকান প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ। অনেক দূরের প্রবেশ থেকেও খেলা দেখতে এসেছিলেন। কেউ কেউ কানাডা থেকে চলে এসেছিলেন ফ্লোরিডায়। কিন্তু সবাই ম্যাচের টিকিট পাননি। তারপরেও বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সমর্থন দিতে ফ্লোরিডায় চলে এসেছিলেন।

ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আগমন যেন প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে উৎসবের আমেজ নিয়ে এসেছিল। শুক্রবার রাতে তারা টাইগারদের সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রবাসী বাঙালিরা। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়া উদ্দিন।

আজ ভোরে ফ্লোরিডায় খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। এতক্ষণে হয়তো ম্যাচের ফলাফলও জেনে গেছেন পাঠকরা। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টি-২০ সিরিজ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। অবশ্য ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কাছে পেয়েই অনেক বেশি খুশি প্রবাসীরা। আমেরিকায় বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের এমন আগ্রহের দৃশ্য আইসিসিকেও স্বস্তি দিতে পারে। কেন না ক্রিকেটারদের অভিভাবক এই সংস্থার লক্ষ্যই তো ক্রিকেটের বিশ্বায়ন ঘটানো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি প্রবাসীদের উৎসাহ-উদ্যোগ তো সে কাজটাই করছে!

সর্বশেষ খবর