মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

টাইগারদের আমেরিকা জয়

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের আমেরিকা জয়

প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়ে সিরিজ অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটে-বলে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে ওয়ানডের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজও জিতে নিল বাংলাদেশ —এএফপি

লিটন দাসের ৩২ বলে ৬১ রানের সাইক্লোন ইনিংস। মুস্তাফিজের ৩১ রানে ৩ উইকেট। আরিফুল অপরাজিত ১৮ এবং দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। একটি করে উইকেট নিয়ে রুবেল-সৌম্যও রাখলেন কার্যকরী ভূমিকা! তরুণদের জ্বলে ওঠার দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। পুরো সফরে ব্যর্থ ‘কোরাস’ গাওয়া সেই তরুণরাই যেন আমেরিকার মাটিতে নিজের হাতে লিখলেন নতুন ইতিহাস।

বাংলাদেশ আইসিসির টি-২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বর দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার আগেই তারা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। সেই দলটাই কিনা ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে বদলে গেল। পিছিয়ে পড়েও জিতল সিরিজ।

কাল প্রথমে ব্যাট করে ১৮৪ রান করে বাংলাদেশ। তবে যেভাবে শুরু হয়েছিল সেই গতিটা ধরে রাখতে পারলে দুই শতাধিক রানের স্কোর হয়ে যেত। তারপরও বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ক্যারিবীয়দের আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ।

গতকাল সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন পার্শ্ব নায়ক হয়ে। তবে নেপথ্যে থেকেই তারা তাদের দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করেছেন। সাকিব বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ২২ রানে নিয়েছেন এক উইকেট। ব্যাট হাতেও করেছেন ২৪ রানের দারুণ এক ইনিংস। তামিম ইকবাল যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন কাঁপিয়ে দিয়েছেন ক্যারিবীয় বোলারদের। মাত্র ১৩ বলে খেলেছেন ২১ রানের ইনিংস। লিটন দাসের সঙ্গে ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইনিংসকে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ স্লোগ ওভারে তুলেছিলেন ঝড়। খেলেছেন মাত্র ২০ বলে ৩২ রানের হার না মানা ঝড়ো ইনিংস। সাকিবের সঙ্গে ৪৪ এবং আরিফুলের সঙ্গে ৩৮ রানের দুটি জুটি গড়ে দলকে এনে দিয়েছেন বড় স্কোর। এই ম্যাচে জিততে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নতুন রেকর্ড গড়তে হতো। কেন না ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড স্টেডিয়ামে ১৬১ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। কিন্তু যে মাঠে ভারতের মতো দলের বিরুদ্ধে ক্যারিবীয়দের ২৪৫ রান করার ইতিহাস আছে ১৮৫ রানের টার্গেটে পৌঁছাটা অসম্ভব ঘটনা ছিল না মোটেও। তা ছাড়া দলে যেখানে সব ব্যাটসম্যান পাওয়ার হিটার সেখানে ভয় কি! কিন্তু কাল ক্যারিবীয়দের সুবিধা করতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। তবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন এক আন্দে  রাসেল। ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান যেভাবে একে একে ছয়টি ছক্কা হাঁকালেন মনে হচ্ছিল যেন একাই ম্যাচ শেষ করে দেবেন। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণদের ফিরে আসার ম্যাচে রাসেল নায়ক হয়ে যাবে, তা কি করে হয়!

কাটার মাস্টারের এক ফুলার ডেলিভারিতে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আরিফুলের হাতে বান্ডারির ওপর ধরা পড়েন রাসেল। থেমে যায় জ্যামাইকান ঝড়। ২১ বলে ৪৭ রান করেছিলেন রাসেল। তার আউটেই শঙ্কার কালো মেঘটা উড়ে চলে যায়।

বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাতে গতকাল বৃষ্টি যেন একটু আগেই এসে হাজির হয়েছিলেন। তাই শেষের ১৭ বল আর মাঠেই গড়ায়নি। যখন বৃষ্টি আসে তখন ক্যারিবীয়দের স্কোর ছিল ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৫ রান। ডার্কওয়াথ/লুইস পদ্ধতিতে ১৯ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ। অবশ্য বৃষ্টি না হলেও ম্যাচে ফেরার অবস্থা ছিল না ক্যারিবীয়দের। জয়ের জন্য দরকার ছিল আরও ৫০ রান। হাতে ছিল মাত্র ৩ উইকেট। বৃষ্টি বরং জয়ের ব্যবধানটা কমিয়ে দিয়েছে, এই যা! কালকের ম্যাচে আসলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটু যা ঝড় তুলেছিলেন রাসেল।

গতকাল ম্যাচসেরা হয়েছেন লিটন দাস। ম্যাচ শেষে টাইগার ওপেনার বলেন, ‘এটা আমাদের অনেক বড় জয়। আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছি। আমার ভালো লাগছে যে, এই ম্যাচে আমি টি-২০র প্রথম হাফ সেঞ্চুরিটা পেয়েছি।’

এমন সিরিজ জয়ের পর উচ্ছ্বসিত অধিনায়ক সাকিব, ‘ছেলেরা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। প্রথম ম্যাচে হারার পর আমাদের ভিতর বিশ্বাস ছিল, আমরা কামব্যাক করব। আমরা জানতাম, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে খেলছি, নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে। সেটাই আমরা করে দেখিয়েছি। এখানে ওয়ানডে সিরিজের পর টি-২০ সিরিজও জিতলাম। তবে টেস্ট নিয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে।’ এমন জয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা কোচ স্টিভ রোডসের। কেন না প্রথম অ্যাসাইনমেন্টের প্রথম সিরিজে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে এভাবে বাউন্স ব্যাক করাটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!

এই জয়ে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের পালে লেগেছে বাড়তি হাওয়া! সাকিবের বুদ্ধিমত্তার নেতৃত্ব এবং সিনিয়রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যদি তরুণরাও পারফর্ম করতে পারেন, তাহলে আর বাংলাদেশকে আটকায় কে? ওয়ানডের মতো টি-২০তেও সাফল্যের গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী হবে। উন্নতি হবে র‌্যাঙ্কিংয়েও। ক্যারিবীয়দের মাটিতে এই সিরিজ জয়ই হোক বাংলাদেশের টি-২০ সাফল্যের ‘গেটওয়ে’!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর