শিরোনাম
বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

চোখ এবার এশিয়া কাপে

রাশেদুর রহমান

চোখ এবার এশিয়া কাপে

ছয় বছর আগের কথা। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সাকিবের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছিলেন মুশফিকুর রহিম। স্টেডিয়ামে ছিল পিনপতন নীরবতা। মুহূর্ত কয়েক আগে বিজয়ের প্রস্তুতি নেওয়া দর্শকরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কী হলো! মাত্র ২ রানে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ! প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্ট শিরোপার খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু ২ রানের দূরত্বে গিয়ে থেমে যেতে হয় মুশফিকদের। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৬ সালেও। একই মাঠে। প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের বদলে ভারত। এবার হয়ত কিছু একটা হবে। আশায় বুক বাঁধলেন ভক্তরা। বৃষ্টিসিক্ত টি-২০ ম্যাচটা কেটেছেঁটে ১৫ ওভারের করা হলো। নাহ, এবারেও হলো না। বাংলাদেশের ১২০ রান ভারত পাড়ি দিয়েছিল ৭ বল হাতে রেখেই। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে ১৯৮৬ সাল থেকে। ১২ বারের অংশগ্রহণে সেরা সাফল্য দুবার ফাইনাল খেলা। নতুন শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে ফাইনাল খেলার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বাংলাদেশ এবার কী করবে!

আরও একটা এশিয়া কাপ সামনে। এবারের আয়োজন সংযুক্ত আরব আমিরাত। অংশগ্রহণকারী দল বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং আরও একটি। এশিয়া কাপ খেলার জন্য বাছাই পর্বে অংশ নিবে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৬টি দল। এ গ্রুপে ভারত ও পাকিস্তান ছাড়া খেলবে বাছাই পর্বের বিজয়ী দল। অন্যদিকে বি গ্রুপে খেলবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। এশিয়া কাপের বাছাই পর্ব শুরু হবে ২৯ আগস্ট থেকে। অবশ্য চূড়ান্ত পর্ব শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। সময় খুব বেশি নেই। এরই মধ্যে প্রাক-টুর্নামেন্ট প্রস্তুতি ক্যাম্পের দিন ক্ষণ ঠিক হয়ে আছে। সাকিবরা আগামীকাল দেশে ফেরার পরই এশিয়াকাপের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে গিয়ে টেস্ট সিরিজে বাজেভাবে হেরে যাওয়ায় অনেকেই আশাহত হয়েছিলেন। এই দলটা এখনো কিছুই শিখল না! এমন বিস্ময়কর মন্তব্য করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু ওয়ানডে আর টি-২০ খেলতে নেমেই বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিল, সমালোচকদের ধারণা মোটেও সত্যি নয়। টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পরাজয়ের পর ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজ জিতেছে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে। তামিম ইকবালের ব্যাট জ্বলে উঠেছে। সাকিব আল হাসান বলে-ব্যাটে ম্যাজিক দেখিয়েছেন। মাশরাফির নেতৃত্বে ছন্দ খুঁজে পেয়েছে দল। সবমিলিয়ে দারুণ সময় কাটিয়ে বাড়ির পথ ধরছেন টাইগাররা। এরপর প্রায় তিন সপ্তাহের ছুটি। এশিয়া কাপের অনুশীলন ক্যাম্প শুরু ২৭ আগস্ট থেকে। অবশ্য কেবল এশিয়া কাপই তো নয়, বাংলাদেশের সামনে ব্যস্ত সূচি। এশিয়া কাপের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ অক্টোবর-নভেম্বরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসবে ডিসেম্বরে। তারপর আগামী বছরে মে মাসে শুরু হবে বিশ্বকাপ। দম ফেলার ফুরসত নেই টাইগারদের! অবশ্য ব্যস্ত সূচির এই চ্যালেঞ্জটা নিতে প্রস্তুত টাইগাররা।

মোটামুটি সবকিছুই ঠিক আছে। তবে কিছু শঙ্কার বিষয়ও রয়েছে। দলের বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর হাতে ২৫টি সেলাই পড়েছে। চাডউইকটের বুটের তলায় পিষ্ট হয়ে তার হাতের অবস্থা খুব খারাপ। এশিয়া কাপের আগে সুস্থ হতে পারবেন কি না বলা কঠিন। অন্যদিকে দলের অন্যতম স্তম্ভ সাকিব আল হাসানের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে প্রচণ্ড ব্যথা। ছুরির তলায় না গেলে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারবেন না তিনি। এই দুটি দুঃসংবাদ দলের জন্য একটা চ্যালেঞ্জই নিয়ে আসল। সাকিবের অপারেশনটা অবশ্য পরে করলেও চলবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক ডাক্তার দেবাশীষ চৌধুরী। আপাতত ইনজেকশন নিয়েই কাজ চলবে। তবে অপারেশন করতেই হবে সাকিবকে। এসব বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখছে, দুবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা দলটা এবার আর হতাশ করবে না। নিজেদের মাটিতে যা হলো না তা আরব আমিরাতেই হয়ত হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে এই আশা আরও বড় করে তুলেছেন তামিম ইকবালরা। ব্যাটে-বলে একটা দারুণ দল হিসেবে প্রমাণ করার পর এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্ন দেখলে খুব কী অন্যায় হবে! সাকিবরা দেশে ফিরুক নিরাপদে। বিশ্রাম নিক কয়েক সপ্তাহ। তারপর নেমে যাক এশিয়া কাপ জয়ের মিশনে। এই কামনাই করে কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর