বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইতিহাস গড়ার হাতছানি মারিয়াদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইতিহাস গড়ার হাতছানি মারিয়াদের

শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামছে বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগে অনুশীলনে ব্যস্ত মারিয়ারা —বাফুফে

বিশ্বকাপ এলেই উত্তেজনায় কাঁপে বাংলাদেশ। যে অবস্থা দাঁড়ায় তাতে মনে হয় লাল-সবুজের জার্সি পরেই লড়ছে ফুটবলাররা। অথচ বাংলাদেশ কখনো বিশ্বকাপ খেলতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই অন্যদেশকে সমর্থন দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটবলে বাংলাদেশের মান কখনো আহামরি ছিল না। তবু জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। বিশ্বকাপ এলে যেমন দেশ জুড়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ে। সত্তর বা আশির দশকে মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ ঘিরে সেই অবস্থা হতো। খেলা ঢাকা স্টেডিয়ামে উত্তেজনায় কাঁপতো পুরো দেশ।

মান নামতে নামতে যে সংকটাপন্ন অবস্থা তাতে ঘরোয়া ফুটবলে এখন দর্শক পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটাই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অবশ্য নারী ফুটবলে বাংলাদেশ বেশ এগিয়েছে। বাছাইপর্ব পেরিয়ে এএফসি কাপে চূড়ান্ত পর্বের খেলছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারছে বাংলাদেশ। পুরুষরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যর্থতার বৃত্তে আটকিয়ে থাকলেও মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মূল আসরে রানার্স আপ হয়েছে।

জাতীয় দলের পরিবর্তে পুরুষ ফুটবলে ছোটরা দর্শকদের মুগ্ধ করছে। তবে ট্রফি জেতার কৃতিত্ব নারীদেরই। এটা অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে, যে টুর্নামেন্টে ভারত আছে সেখানে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেই নিয়ম ভেঙে দিয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারী কিশোরী ফুটবলাররা। বেশি  দিনের কথা নয়। গত ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফ ফুটবল। চার জাতি এই টুর্নামেন্টে ভারত ছিল বলেই অনেকে ধরে নিয়েছিলেন ঘরের মাঠ হলেও বাংলাদেশ বড় স্কোর রানার্সআপ হতে পারে। মারিয়া, আঁখি, মনিকারা সেই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছেন। ভারতসহ লিগ পর্বের ম্যাচে প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে উঠেছিল। ভারতকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন।

ফুটবলে হতাশা কিছুটা কেটে যায় মারিয়াদের এই সাফল্য। অপরাজিততো বটেই। কোনো গোল হজম না করেই চ্যাম্পিয়ন। এ এক নতুন ইতিহাসই বলা যায় বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য। আট মাস পর আবারও সেই অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফ ফুটবল। এবার আর ঘরের মাঠ নয়। খেলতে হবে পাহাড় ঘেরা ভুটানে। এখন ফুটবলে যে হাহাকার চলছে তাতে দেশ বা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ সাফল্য পাবে সেই আশা করতে কেউ সাহস পান না। কিন্তু মারিয়ারা খেলছে বলেই ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা একটাই শিরোপা। ভারতের কাছে পুরুষরা যেখানে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে,  সেখানে মারিয়ারা দুই দুবার হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সুতরাং শিরোপা ছাড়া আর কি কিছু ভাবা যায়?

সেই প্রত্যাশা নিয়েই আজ সন্ধ্যায় সাফ জুনিয়র মিশনে বাংলাদেশের কিশোরীরা মাঠে নামছে। গ্রুপের প্রথম ম্যাচেই মারিয়াদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। প্রতিপক্ষ হিসেবে পাকিস্তানকে পাওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু জুনিয়র লেভেলে মহিলা ফুটবলে এটাই প্রথম দেখা বাংলাদেশের। ১৩ আগস্ট গ্রুপের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ নেপালের বিপক্ষে। আরেক গ্রুপে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান। দুটো সেমিফাইনাল ১৬ আগস্ট আর ফাইনাল ১৮ আগস্ট। কী করবে মারিয়ারা আজ। পুরুষ জাতীয় দল হলে এ জবাব দিতে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু টুর্নামেন্ট নারীদের বলেই উত্তর আসবে একটাই জয়। যদিও অচেনা প্রতিপক্ষ তারপরও নারী ফুটবলে পাকিস্তান ততটা শক্তিশালী নয়। তাই বড় কোনো অঘটন না ঘটলে জয় দিয়েই মারিয়াদের যাত্রাটা শুভ হবে আশা করা যায়। নেপাল শক্তিশালী দল। সেক্ষেত্রে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন কে হবে বলা মুশকিল। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেছেন, প্রস্তুতি আমাদের ভালোই হয়েছে। মেয়েরা যোগ্যতা প্রদর্শন করলে শিরোপা ধরে রাখাটা কঠিন কিছু হবে না। তবে কাউকে আমরা খাটো করে দেখছি না। আমি বিশ্বাস করি সবাই তাদের সেরাটা দিতে চাইবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা বলেছেন, শুরুতে জয় পেতেই হবে। যা পরবর্তীতে আমাদের শক্তির টনিক হিসেবে কাজ করবে। শিরোপা ধরে রাখতে হলে প্রতিটি ম্যাচেই আমাদের সেরাটা দিতে হবে।

ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে মারিয়াদের। সাফ ফুটবলে যে কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতার রেকর্ড নেই। ১৯৯৯ সালে কাঠমাণ্ডুতে সাফ গেমসে সোনা জেতার পর ২০০৯ সালে তা উদ্ধার করে বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলের পর বাংলাদেশ আর ট্রফিই জিততে পারেনি। ইতিহাস গড়ার সুযোগটি এসেছে মারিয়া, আঁখিদের। সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা সেটাই দেখার অপেক্ষা।

সর্বশেষ খবর