শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভলিবলে বদলে যাওয়া গ্রাম

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

ভলিবলে বদলে যাওয়া গ্রাম

কুমিল্লা নগরী লাগোয়া গোমতী নদী। নদী পার হলে শিমপুর। সদর উপজেলার এই গ্রামটি অর্ধ শতক বছর ধরে ভলিবলের জন্য বিখ্যাত। ভলিবল খেলে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময় তারা সুনাম কুড়িয়েছে।

এই গ্রামের খেলোয়াড় দিয়ে কুমিল্লা জেলা যুবদল দুইবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওই সময়ের জেলা ভলিবল দলের ১২ জনের ১১ জনই শিমপুর গ্রামের খেলোয়াড়। বর্তমানে শিমপুর গ্রামের খেলোয়াড় কোটায় সেনাবাহিনীতে ৩৫ জন, পুলিশে ২২ জন, নৌ-বাহিনীতে তিনজন এবং বিমান বাহিনীতে দুইজন নিয়োগ পেয়েছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে দুইজন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে দুইজন চাকরি করেন। প্রতি বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়াড় কোটায় তিনজন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। বর্তমানে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে বিভিন্ন দলে শিমপুর গ্রামের ২০ জন খেলোয়াড় খেলছেন। শিমপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ইউনুস মিয়া। তার পাঁচ ছেলে। তার মধ্যে তিনজন ভলিবল খেলেন। তিনজনের মধ্যে বাপ্পি ও অনিক নামের দুই ছেলে গত বছর সেনাবাহিনীতে চাকরির সুযোগ পেয়েছেন। ইউনুস মিয়া বলেন, ছেলেরা ভলিবল খেলে চাকরি পাওয়ায় পরিবারে এখন সুখের দিন এসেছে। শিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ভলিবল প্রশিক্ষক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বলেন, ৫০-এর দশক থেকে শিমপুর গ্রামে ভলিবল খেলা শুরু হয়। কুমিল্লা সদর উপজেলার ঘিলাতলী চৌধুরী বাড়ির আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী পড়তেন লিয়াকত টেকনিক্যালে। যাতায়াতের সুবিধার্থে তিনি শিমপুর ডাক্তার বাড়িতে লজিং থাকতেন। তিনি তার সহপাঠীদের নিয়ে এই খেলা শুরু করেন। খেলা হতো বয়স্ক শিক্ষার নাইট স্কুলের সামনে। তার সঙ্গে যোগ দেন প্রয়াত আবদুল লতিফ, সিদ্দিকুর রহমান, আসকর আহমেদ, হাসান আলী পেশকার, আবদুল আজিজ। তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন আয়াত আলী, জবেদ আলী, মোহাম্মদ আলী, আবদুল হাকিম মাস্টার, ফিরোজ আহমেদ লিলু মিয়া, আলী আক্কাস ও আবুল কাশেম। তাদের পরবর্তীতে বর্তমানে জেলা যুবদলের প্রশিক্ষক মোবারক হোসেন, খেলোয়াড় সুজন আহমেদসহ অন্যরা শিমপুর গ্রামের ভলিবলের অগ্রযাত্রায় কাজ করছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ ভলিবল দলের সাবেক ম্যানেজার, কুমিল্লা ভলিবল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুসের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন।

জেলা যুব ভলিবল দলের কোচ মোবারক হোসেন বলেন, ভলিবল খেলার মাধ্যমে শিমপুর একটি আদর্শ গ্রামে পরিণত হয়েছে। খেলার কারণে যুবকরা চাকরি পাচ্ছে। মাদকসহ নানা খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকছে। শিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় ঘিরে আমাদের ভলিবল চর্চা হয়ে থাকে। যারা চাকরিজীবী তারা খেলার বিষয়ে সহযোগিতা করেন। কুমিল্লা ভলিবল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস বলেন, শিমপুর গ্রামের যুবকরা খেলোয়াড় কোটায় চাকরি ও শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এ বিষয়টি আমাদের আনন্দ দেয়। শিমপুরের সঙ্গে ভুবনঘর, আমড়াতলী, শিমড়া ও বানাশুয়ার যুবকরাও ভলিবল খেলায় উৎসাহিত হচ্ছে। ভলিবলের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত লীগ আয়োজন করা প্রয়োজন।

শিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুল হক বলেন, শিমপুর স্কুলের মাঠে ভলিবল খেলা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চর্চা করে আসছে। আমাদের স্কুল পর পর চারবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক রোমেন বলেন, দুইবার আমরা যুব ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ ছাড়া কয়েকবার রানার্স আপ হয়েছি। দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় শিমপুর গ্রামের। ভলিবলের হাত ধরে বদলে গেছে শিমপুর গ্রাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর