রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আট ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি মারিয়াদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আট ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি মারিয়াদের

নেপালের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় ম্যাচে লড়বে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দল। মাঠে নামার আগে কোচ ছোটন শিষ্যদের পরিকল্পনা আঁকছেন —বাফুফে

ফাঁকা পোস্টে ছক্কার মতো বল হাঁকিয়ে বাইরে পাঠাচ্ছেন জাতীয় দলের ফুটবলাররা। গোল খরা কোনোভাবেই কাটছে না অথচ শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়ছে জাতীয় দল। এভাবেই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার বৃত্তেই আটকিয়ে আছে পুরুষ জাতীয় দল। গোল যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘরোয়া আসরে লাখ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলারদের জন্য। গোলের খরা কিভাবে কাটবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা তিন আসরে সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। শিরোপা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। হবেই না কেন গোলের খেলায় গোল করতেই ভুলে গেছে জাতীয় দল। সেখানে সাফল্য আসবে কিভাবে? পুরুষ ফুটবলে জুনিয়র লেভেলে কিশোররা অবশ্য ঠিকই গোলের দেখা পাচ্ছে। গেলবার অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ ফুটবলে প্রথমার্ধে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও বাংলাদেশ জিতেছিল ৪-৩ গোলে। যা বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন রেকর্ডই ছিল।

কিশোরদের দাপট ম্লান হয়ে গেছে বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলারদের নৈপুণ্য। জাতীয় দলের তারকারা যেখানে গোল করতে ভুলে গেছেন সেখানে ১৫ বয়সী মেয়েরা প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসিয়ে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে। ক্রিকেট ও হকিতে এগিয়ে থাকলেও ফুটবলে মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশর তুলনায় পাকিস্তান এখনো পিছিয়ে আছে। যদিও তারা সাফ গেমসে বাংলাদেশের অনেক আগেই সোনা জিতেছে। তবু ফুটবলে এগুতে পারেনি পাকিস্তান। যাক মান যাই হোক না কেন এখনো ফুটবলে কোনো ম্যাচে বাংলাদেশ জাতীয় দল পাকিস্তানকে হারাবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আসন্ন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল ও পাকিস্তান। সে কারণেই কারো কারো ধারণা তিন আসরে না পারলেও এবার ঘরের মাঠে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলবেই। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নেপাল না বাংলাদেশ হয় সেটাই অপেক্ষা। অর্থাৎ পাকিস্তানকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বাস্তবে কিন্তু ফুটবল বিশ্লেষকরা পাকিস্তানকে হাল্কা করে দেখছেন না। তাদের কথা তিন দলের মধ্যে নেপালকে ফেবারিট বলা গেলেও সেমিতে জায়গা করতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। অর্থাৎ পাকিস্তানকে ঘিরে ভয়টা থেকেই যাচ্ছে।

পরিসংখ্যানে জয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানকে সেভাবে নাস্তানাবুদ করতে পারেনি জাতীয় দল। সত্যি বলতে কি ফুটবলে পাকিস্তানকে গোলের বন্যায় ভাসাবে তা ভাবাই যেত না। ব্যবধান ৫-০ তা অবিশ্বাস্যই মনে হতো। বৃহস্পতিবার অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়েছিল বাংলাদেশ। মারিয়াদের এর আগে তাদের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। ২০১৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

চার ম্যাচে ১৩ গোল দিলেও হজম ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশের এমন রেকর্ড ফুটবলে কোনো আসরেই নেই।

তারপরেও প্রতিপক্ষ অচেনা পাকিস্তান বলেই অনেকে শঙ্কিত ছিলেন চ্যাম্পিয়ন মারিয়াদের যাত্রা জয় দিয়ে হবে কি না? কেউ কেউ বলেছিলেন ১ গোলে হলেও উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশের জয়টা জরুরি। তানা হলে চাপে পড়ে যাবে। শুরুতেই কি না পাকিস্তানের জালে ১৪ গোল দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন এক ইতিহাস লিখে ফেলল মারিয়ারা। যদিও নারী ফুটবলে এর চেয়েও বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। কিন্তু পাকিস্তানকে এভাবে লজ্জায় ডোবানোর রেকর্ড  কোনো খেলাতেই নেই।

পুরুষ জাতীয় দল যেখানে গোল করতে ভুলে গেছে সেখানে কি না এক বছরের মধ্যে কিশোরী ফুটবলাররা ৮ ম্যাচ খেলে ছাড়িয়ে গেছে অর্ধশতক গোল। যা বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন এক ইতিহাস গড়লো মারিয়া, শামসুন্নাহার, আঁখিরা। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় পুরুষ জাতীয় দলের। ৪৫ বছরের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলে প্রতিপক্ষের জালে হয়তোবা শত গোল দিয়েছে। বাফুফের কাছে পরিসংখ্যান নেই বলে সঠিক তথ্য দেওয়াটাও মুশকিল। ১ বছরে ৮ ম্যাচে ৫১ গোল দিয়ে কিশোরীরা প্রমাণ করেছে ফুটবল আসলেও গোলের খেলা। ভুটানে প্রথম ম্যাচ খেলেই ১৪ গোলের উৎসব করেছে। ১৩ আগস্ট নেপালের বিপক্ষে গ্রুপের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে। বাকি আছে সেমিফাইনাল। এরপর ফাইনাল খেললে ৫১ ছাড়িয়ে গোলের সংখ্যা কত হবে সেটাই দেখার বিষয়।

 

সর্বশেষ খবর