শিরোনাম
বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সবাইকে ছাড়িয়ে শেখ কামালের আবাহনী

১৯৯৪ সালে ফুটবলে অধিনায়ক হওয়ার পর মোনেম মুন্নার সে কি কান্না।

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সবাইকে ছাড়িয়ে শেখ কামালের আবাহনী

সুপার স্টার তারকা যা বলি না কেন কাজী সালাউদ্দিনের যত অর্জন তা ঢাকা আবাহনীতে খেলেই। অথচ কথা প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন একদিন বলেছিলেন, বিশ্বাস করবেন না ১৯৭২ সালে শেখ কামাল যখন আবাহনীতে খেলার অফার দিল তখন হাসতে হাসতে সরি বলি। বলেছিলাম মোহামেডানের মতো নামকরা ক্লাব ছেড়ে অন্য কোথাও খেলার ইচ্ছা নেই। শেখ কামাল কথাটা শুনে বললেন, আমিও মানি মোহামেডান নামকরা ক্লাব। তবে এটাও বলছি দেখবে এই আবাহনী শুধু ফুটবল নয় একদিন দেশের সেরা দলে পরিণত হবে। অফার দিলাম ভেবেচিন্তে দেখ আবাহনীতে আসবে কিনা। কামাল এই কথা বলেই চলে গেলেন। পরে দেখলাম আবাহনী সত্যিই সত্যিই শক্তিশালী দল গড়ছে। তাই সিদ্ধান্ত বদল করে আবাহনীতেই চলে এলাম। টানা এক যুগ খেলেই এখান থেকে ক্যারিয়ারে ইতি টানলাম। অস্বীকার করব না খেলোয়াড়ি যত অর্জন সব পেয়েছি আবাহনীতে খেলেই।

শেখ কামাল সেই ১৯৭২ সালে সালাউদ্দিনকে বলেছিলেন দেখবে আমাদের এই নতুন আবাহনীই একদিন দেশ সেরা দলে পরিণত হবে। ট্র্যাজেডি হচ্ছে প্রতিষ্ঠাতা করার পরও শেখ কামাল তা দেখে যেতে পারেননি।

তবে  সালাউদ্দিনকে বলা তার এই কথা পুরোপুরি বাস্তবে রূপ দিয়েছে। বয়স ৪৬ হলেও ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এই তিন বড় খেলায় সবাইকে পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছে শেখ কামালের আবাহনী।

ক্রীড়াঙ্গনে আবাহনীর অভিষেক মূলত ফুটবল দিয়েই। ১৯৭২ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে উদ্বোধনী ম্যাচে নবাগত আবাহনী মুখোমুখি হয় চ্যাম্পিয়ন বিজেআইসির বিপক্ষে (বর্তমান টিম বিজেএমসি)। অধিনায়ক ছিলেন আবদুস সাদেক। দলে ছিলেন গোলাম সারোয়ার টিপু, সালাউদ্দিন, সুটার গফুর, আশরাফদের মতো তারকা ফুটবলারা ওই ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। যদিও সেই বছর লিগ শেষ হতে পারেনি। তবে আবাহনীর শুরুটা ছিল ড্র দিয়েই। ১৯৭৩ সালে রানার্সআপ। পরের বছর লিগ চ্যাম্পিয়ন। এরপর আবাহনীকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক শিরোপা জিতে সবাইকে পেছনে ফেলে ফুটবলে সেরা দলে পরিণত হয়েছে।

অনেকেই বলেন, আবাহনীর জন্মতেই ফুটবল নতুনভাবে জেগে উঠে। কেননা স্বাধীনতার পর অনেকের ধারণা ছিল মোহামেডানের মতো জনপ্রিয় দলের কাছে অন্য কেউ পাত্তাই পাবে না। শেখ কামালকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যার পর আবাহনীকে কম বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্লাব নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্রও করা হয়েছিল। কিন্তু শোককে শক্তিতে পরিণত করে আবাহনী আজ দেশের শীর্ষ ক্লাবে পরিণত হয়েছে।

ফুটবল নয়, পরবর্তীতে ক্রিকেট, হকি, টেবিল টেনিসে দল গড়েও সাফল্যের উৎসবে ভাসছে আবাহনী। যে দলের শুরুতে গ্যালারিতে সমর্থকও খুঁজে পাওয়া যেত না সেই শেখ কামালের আবাহনীর এখন কোটি কোটি সমর্থক। কত খেলায় কত খেলোয়াড় সৃষ্টি করেছে আবাহনী সেই হিসাব মেলানো মুশকিল। ১৯৯৪ সালে ফুটবলে অধিনায়ক হওয়ার পর মোনেম মুন্নার সে কি কান্না। বলেছিলেন আজ আমি ধন্য শেখ কামালের আবাহনীর অধিনায়ক হয়ে। শেখ মো. আসলাম যতবার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন তা উৎসর্গ করেছেন শহীদ শেখ কামালকে। বলেছেন, দেশজুড়ে আমার যে পরিচয় তা হয়েছে শেখ কামালের আবাহনীতেই খেলে। ক্লাবের জনকের স্মৃতি ধরে রাখতে আবাহনী উদ্যোগ নিয়েছে শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণে। শুধু ঢাকা নয়, জনপ্রিয়তা দেশজুড়ে বলে চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় গঠন হয়েছে আবাহনী ক্লাব। স্ত্রী খ্যাতনামা অ্যাথলেট সুলাতানা কামালের নামে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, দুই ভাই শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনপ্রিয় ক্লাব। ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের জন্য ক্রীড়ামোদী বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্মৃতি ধরে রাখতে চায়। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে।

সর্বশেষ খবর