শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের দিন

রাশেদুর রহমান

বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের দিন

মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আগের দিন অনুশীলনে মারিয়া মান্ডারা —সৌজন্য

এক সময় ফুটবল নিয়ে মেতে থাকত পুরো দেশ। ক্লাব ফুটবলের লড়াই নিয়েও আলোচনা হতো গ্রামগঞ্জে। ফুটবলের সেই সোনালি সময় আর নেই। এখন আন্তর্জাতিক ফুটবল দেখেই মনের আশা পূরণ করে ভক্তরা। আর দেশীয় খেলা বলতে, ক্রিকেট। মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকদের খেলা দেখে অন্য ডিসিপ্লিনের ব্যর্থতা ভুলে যায় এ দেশের মানুষ। তবে সময় বদলে যাচ্ছে। দিনবদলের গান শোনা যাচ্ছে ফুটবলের উঠুনেও। অবশ্য ছেলেরা নয়, মেয়েদের হাত ধরে ছুটে চলেছে বাংলাদেশের ফুটবল। একের পর এক সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেই যাচ্ছে দলটা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন মারিয়া মান্ডারা আরও একবার এই শিরোপা জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আজ ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চাঙলিমিঠাঙ স্টেডিয়ামে মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত। কী হতে যাচ্ছে ফাইনালে! গতবারের পুনরাবৃত্তি নাকি ভিন্ন কিছু!

ছেলেরা ফুটবলে বহু পেছনে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৯৪ নম্বরে। অন্যদিকে মেয়েরা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১১২ নম্বরে অবস্থান করছে। নিচ থেকে যে দুরন্ত গতিতে উপরের দিকে ছুটে আসছেন আঁখি খাতুন আর মারিয়া মান্ডারা হয়তো খুব বেশি সময় লাগবে না তাদের সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে উঠে আসতে। গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে এবারের আসরে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে। ডিফেন্সে তারা ছিল ইস্পাতের মতোই কঠিন। প্রতিপক্ষের সব আক্রমণই তারা রুখে দিয়েছে অনায়াসে। টুর্নামেন্টে তিনটা ম্যাচ খেলে এখনো গোলবার অক্ষত রাখতে পেরেছে মারিয়া মান্ডারা। মিডফিল্ডেও দুরন্তপনা দেখিয়েছে দলটা। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। ড্রিবলিং আর কাউন্টার আক্রমণেও পারদর্শী দলটা। তিন ম্যাচে ২২ গোল করা লাল-সবুজের জার্সিধারী দলটা ফাইনালে কী করবে? গতকাল ছোটনের শিষ্যরা ৩৯ মিনিটের রিকভারি ট্রেনিং করেছে। পল থমাস স্মলির তত্ত্বাবধানে ট্রেনিং করে ফাইনালের জন্য পুরোপুরিই প্রস্তুত দলটা। গতকাল গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘আমরা সেমিফাইনালে স্বাগতিক ভুটানের বিপক্ষে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছি। গত সাত মাস ধরে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতেও ভালো খেলেছি। এবার ফাইনালেও নিজেদের সেরাটা খেলতে চাই। টুর্নামেন্ট খেলতে আসার সময়ই আমাদের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’ দলের প্রধান কোচ দেশের সবাইকে তাদের সফলতার জন্য প্রার্থনা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এবারের আসরে দলের অন্যতম তারকা তহুরা খাতুন। সর্বোচ্চ চারটি গোল করেছেন তিনি। অবশ্য চারটি করে গোল করেছেন বাংলাদেশের শামসুন্নাহার এবং ভারতের সিলকি দেবীও। তহুরা খাতুন বলেন, ‘আমরা ফাইনালে পৌঁছে গেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য শতভাগ ভালো খেলে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’ কেবল তহুরাই নয়, পুরো দলেরই স্বপ্ন সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করা। অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা বলেন, ‘ম্যাচের শুরুতেই গোল করে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করতে চাই আমরা।’ দলের অন্য ফুটবলাররাও ফাইনাল জিততে বদ্ধপরিকর। অবশ্য ভারতও চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নামবে। গতবার বাংলাদেশের কাছে হেরেই শিরোপাবঞ্চিত হয়েছিল ভারতীয় মেয়েরা। সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার একটা ইচ্ছা তো ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে আছেই। দেখা যাক, ভারতীয়দের প্রতিশোধ স্পৃহা বাংলাদেশের মেয়েদের দুরন্তপনার কাছে আরও একবার উড়ে যায় কিনা!

অনূর্ধ্ব-১৫ লেভেলে মারিয়া মান্ডাদের সম্ভবত এটাই শেষ টুর্নামেন্ট। এরপর তারা আরও সিনিয়র দলে খেলবেন। জাতীয় দলে স্থান করে নেবেন এই দলের অনেকেই। তাদের হাত ধরেই হয়তো এক সময় বিশ্বকাপেও খেলবে বাংলাদেশের মেয়েরা!

 

সর্বশেষ খবর