শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোন ফরমেশনে খেলা উচিত

কোন ফরমেশনে খেলা উচিত

বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠছে জাকার্তা এশিয়ান গেমসের। ১৯৭৮ সাল থেকে গেমসে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এবার ১৪টি ইভেন্টে লড়বে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। পদক জেতার সম্ভাবনা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আমি হকি খেলোয়াড় বলে শুধু হকির প্লান নিয়ে আলোচনা করব। বলতে দ্বিধা নেই হকিতে পদক জয়ের সম্ভাবনা নেই। সেমিফাইনালে খেলা বড় প্রাপ্তি বলব আমি। পদক জয়ে এগিয়ে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া বা জাপান।  গেমসে আমাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ওমান, থাইল্যান্ড ও স্বাগতিক ইন্দোনেশিয়া। আমি মনে করি আমাদের বড় সমস্যা ধারাবাহিকতার অভাব। হকি খেলছি একশ বছরের ওপর। ১৯০৭-১৯০৮ সালে নবাব সলিমুল্লাহ  কলকাতার হোয়াইওয়েজ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে নবাব বাড়ির যুবকদের জন্য হকি স্টিক আনেন। সেই শুরু। নবাব বাড়ির ইউসুফ রেজা ভারতের অলিম্পিক দলেও ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অলিম্পিক না হওয়াতে ইউসুফ রেজা নিশ্চিত স্বর্ণপদক বঞ্চিত হন। হকিতে আমরা শতবর্ষ পার করেছি। ১৯৭০ সালে বিশ্বজয়ী পাকিস্তান দলকে ঢাকার মাঠে আবদুস সাদেক হতবাক করে দিয়েছিলেন। তানভির দ্বারের পেনাল্টি কর্নারের একমাত্র গোল মুখ রক্ষা করেছিল পাকিস্তান। তখনকার খেলার পদ্ধতি ছিল ২-৩-৫। একে পিরামিড পদ্ধতিও বলে। আবার রোলিং সেন্টার হাফ পদ্ধতিও বলে। এই ২-৩-৫ পদ্ধতি এখন প্রয়োজন বাদে কোনো দল ব্যবহার করে না। ১৯৮২ সালে টোটাল ফুটবল শুরু। ৪-৩-৩ বা ৪-২-৪ বা ৩-৪-৩ এ ধরনের সব পদ্ধতি চলে আসে, হকিও ১১ জনের খেলা। তাই হকিতেও শুরু হয় স্ট্যামিনাকে পুঁজি করে যে কোনো পজিশনে খেলার কৌশল। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পাকিস্তানকে একদম কোণঠাসা করেছিলাম ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে। এবারের গেমসে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে ৪-২-৪ আর মালয়েশিয়া, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩-৫-২ ফরমেশনে খেলা উচিত। আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ওমান। ৩-৫-২ পদ্ধতি এখানে ব্যবহার করা যায়। ৩-৫-২ পদ্ধতিতে থাকে তিন জন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। মিডফিল্ডের পাঁচ জনকে ব্যবহার করতে হবে ডিফেন্স এবং অ্যাটাকিংয়ে। রাইট আর লেফট উইং ব্যাক এই পদ্ধতিতে যথেষ্ট স্পেস পারে অ্যাটাকিং এর। মিড ফিল্ড থেকে বার বার অ্যাটাকে গেলে কাউন্টার অ্যাটাকের ভয় থাকে। প্রতিপক্ষ এ ধরনের পদ্ধতির ডিফেন্স ভাঙ্গার জন্য স্কুপ আর ‘থ্রু’ উপরই বেশি নির্ভর করে। এই স্কুপ আর ‘থ্রু’ রুখতে পারলে ভালো করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে স্পিড আর ‘স্ট্রেন্থ’ থাকতে হবে। আমাদের মূল সমস্যা শুরুতে ডিফেন্স না গুছিয়ে অ্যাটাকে যাওয়া। সঙ্গে ‘হ্যাং’ করার বদ অভ্যাস তো রয়েছেই। ডিফেন্সের থেকে বড় বড় ‘স্কুপে’ নোম্যান্সল্যান্ডে ফেলাও এ খেলার ফলাফল তৈরিতে সহায়তা করবে। মালয়েশিয়ান কোচ গোপীনাথান ৩-৫-২ পদ্ধতি প্রয়োগে আগ্রহী। দল খেলার মধ্যে আছে। মাঠের ভিতর অধিনায়ক তার প্রয়োজনীয়তা কি তা বুঝতে হবে। যদি ৩-৫-২ পদ্ধতি প্রয়োগের থেকে স্ট্রাইকার একজন বাড়ানোর দরকার মনে করে তবে ৩-৫-২ থেকে ৩-৪-৩ পদ্ধতিতে যাবে। খেলার পার্থক্য একজন অধিনায়কের দল পরিচালনার উপরই নির্ভর করে।

মেজর চাকলাদার (অব.) লেখক, জাতীয় হকি দলের সাবেক অধিনায়ক

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর