সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রথমবার নক আউটে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রথমবার নক আউটে বাংলাদেশ

কাতারকে হারিয়ে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে শেষ ষোলেতে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে জয়ের নায়ক (জার্সি নম্বর ৪) জামাল ভুইয়াকে নিয়ে উল্লাস —সংগৃহীত

স্বপ্নপূরণ বাংলাদেশের। বহুদিন ধরে যে স্বপ্ন দেখেছেন এ দেশের ফুটবলপ্রেমীরা, জামাল ভুইয়ার দৃষ্টিনন্দন গোলে গতকাল সেটা পূর্ণতা পেল  জাকার্তায়। এশিয়ান গেমস ফুটবলে বাংলাদেশ এবার অংশ নেয় ভালো খেলার প্রত্যাশায়। অসাধারণ ফুটবল খেলে সেই প্রত্যাশার পূরণ করে ইতিহাস লিখেছেন জামাল, সুফিলরা। র‌্যাঙ্কিংয়ে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা কাতারকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমস ফুটবলের নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয় আবার এশিয়ান গেমসে নিজেদের ইতিহাসে বাংলাদেশের চার নম্বর। ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়াডে মালয়েশিয়াকে ২-১, ১৯৮৬ সিউল এশিয়াডে সালে নেপালকে ১-০ এবং ২০১৪ সালে ইনচন এশিয়াডে আফগানিস্তানকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল। এশিয়া কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে ২০১৬ সালের অক্টোবরে ভুটানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর জাত গেল বলে সমালোচকরা ছিঁড়ে ছিবড়ে ফেলছিলেন দেশের ফুটবল ও ফুটবলারদের। অবশ্য পারফরম্যান্সও সমালোচনায় রসদ জুুগিয়েছে সমালোচনায়। ব্যর্থ হতে হতে র‌্যাঙ্কিংয়ে তলানিতে নেমেছে দেশের ফুটবল। জাকার্তা গেমসে অংশ নেয় র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৯৪তম স্থানে থেকে। ‘বি’ গ্রুপের বাকি তিন দল উজবেকিস্তান, থাইল্যান্ড ও কাতার এগিয়ে যোজন যোজন। তারপরও নতুন কোচ জেমি ডে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ভালো খেলার। যদিও প্রথম ম্যাচে উজবেকিস্তানের কাছে হেরে যায় ৩-০ গোলে। তারপরও থাইল্যান্ড ও কাতারকে হারানোর বিশ্বাস রেখেছেন মনে। আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন শিষ্যদের। দ্বিতীয় ম্যাচে থাইল্যান্ডের সঙ্গে এগিয়ে থেকেও গোলরক্ষক আশরাফুলের ভুলে জেতা ম্যাচ ড্র করে মাঠ ছাড়েন জামালরা। থাইল্যান্ডের সঙ্গে জিতলেই নকআউট পর্ব নিশ্চিত হতো দলের। কিন্তু সেটা হয়নি। তারপরও ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক কাতারের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে জয়কে পাখির চোখে দেখেছেন কোচ জেমি ডে। উৎসাহিত করেছেন শিষ্যদের জয়ের জন্য। তাগিদ দিয়েছেন ইতিহাস গড়ার। কাতারকে হারালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসের নকআউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে-এমন সমীকরণ যখন সামনে, তখন অপেক্ষায় থাকতে হতো উজবেকিস্তানের বিপক্ষে থাইল্যান্ডের হার কিংবা ড্রয়ের। থাইল্যান্ড ড্র করলেও যদি বাংলাদেশ জিতে যায়, তাহলে ৪ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে যাবেন জামালরা। হেরে গেলেও বাংলাদেশকে জিততে হতো। এমন সমীকরণ যখন দুই দলের সামনে, তখন উজবেকিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হেরে গেমস থেকে বিদায় নেয় থাইল্যান্ড এবং ৯৩ মিনিটে জামাল ভুইয়ার ইতিহাস গড়া গোলে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ১৯৪ এবং কাতার ৯৪। শক্তির বিচারে এগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এছাড়া দুই দলের চারবারের মুখোমুখিতে একবারও জিতেনি বাংলাদেশ। সাফল্য সাকল্যে এক ড্র। এই পরিসংখ্যান নিয়ে গতকাল মুখোমুখি হয় দুই দল। ৮ মিনিটে সুফিল কাতারের গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। প্রথমার্ধে গোলের জন্য দুই দলই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করে খেলে। কিন্তু গোল হয়নি। খেলা নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্যভাবে শেষ হয়। তখন চতুর্থ রেফারি ৪ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেন খেলা চালানোর। তাতেই বাজিমাত। তাতেই ইতিহাস রচনা করে বাংলাদেশ। মধ্যমাঠ থেকে বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে যান মাসুক মিয়া জনি। প্রতিপক্ষের দুজনকে কাটিয়ে জনি বল নিয়ে ঢুকেন পড়েন ডি বক্সে। এরপর ব্যাক পাস করেন আগুয়ান অধিনায়ক জামালকে। জামাল বল ধরে ২/৩ স্টেপ এগিয়ে ডান পায়ে মাটি কামড়ানো শট নেন। বলটি কাতারের গোলরক্ষকে বোকা বানিয়ে জালে ঠাঁই নেয় (১-০)। জামালের ওই গোলেই ইতিহাস লিখে ফেলে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক জয়ে বাংলাদেশ নকআউট পর্বে। ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ‘এফ’ গ্রুপ রানার্সআপ সৌদি আরব অথবা ইরান।

সর্বশেষ খবর