জনপ্রিয়তার তুলনায় হকিতে বাংলাদেশ সেভাবে এগোতে পারেনি। ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থানরত ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে এ কথাই বললেন তাহির জামান। হকিতে জাদুকরি নৈপুণ্যের কারণে পাকিস্তানের কিংবদন্তি খেলোয়াড় শাহবাজ আহমেদকে হকির ম্যারাডোনা বলা হতো। তার সঙ্গে পাকিস্তানের হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন তাহির জামানও। জিতেছেন বিশ্বকাপের ট্রফি।
১৯৯৪ সালে সুপার লিগে ঢাকা মোহামেডানে খেলতে আসেন শাহবাজ আহমেদ। সঙ্গে এসেছিলেন তাহির জামান ও কামরান আশরাফ। টানা চার মৌসুম খেলে গেছেন এই ঐতিহ্যবাহী দলে। ঊষা ক্রীড়া চক্রের কোচও ছিলেন। সুতরাং বাংলাদেশের হকিতে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাহির জামান। সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বললেন, মোহামেডানে খেলে যে সম্মান বা আতিথেয়তা পেয়েছি তা কখনো ভোলবার নয়। পৃথিবীর অনেক দেশের ক্লাবে আমি খেলেছি। কিন্তু হকির ঘরোয়া আসর এত জনপ্রিয় হতে পারে তা ঢাকায় না খেললে বুঝতে পারতাম না। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক হকিতে বাংলাদেশের অবস্থান আহামরি কিছু ছিল না। কিন্তু হকিকে ঘিরে যে উন্মাদনা দেখেছি তা পৃথিবীর অন্য কোথাও চোখে পড়েনি।
তাহির এবার এশিয়ান গেমসে ওমানের কোচের দায়িত্বে আছেন। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচেই তার দল বাংলাদেশের কাছে হেরে যায়। এই হারেই ওমানের পঞ্চম স্থানে লড়াইয়ে সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। তাহির বললেন, আমি অবাক হচ্ছি বাংলাদেশ এখন ওমানকেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে। শুধু জনপ্রিয়তা নয়, ৯০ দশকেই আমি বাংলাদেশে বেশ ক’জন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন খেলোয়াড় দেখেছি। শুনেছি জুম্মন লুসাই কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। ওর স্ট্রিক ওয়ার্ক মুগ্ধ করে ছাড়তো আমাকে। আমি বলবো বিশ্বমানে কোয়ালিটি বলতে যা বোঝায় তা ছিল জুম্মনের মধ্যে। নিক্সন, কামাল, সাদেক আরও অনেকের নাম মনে করতে পারছি না। ওরাও দারুণ খেলতো।তাহির কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বললেন, জনপ্রিয়তা ও মানসম্পন্ন খেলোয়াড় থাকার পরও বাংলাদেশের মান ততটা এগোয়নি। দেখছি আগের চেয়ে ছন্দপতন ঘটেছে। অবশ্য মানের দিক দিয়ে পাকিস্তান ও ভারতও অনেক পিছিয়ে গেছে। বলতে পারেন ভারত ছাড়া এশিয়ার অন্য কোনো দেশ এখন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াইয়ে সামর্থ্য রাখে না।
তারপরও ওমানকে হারাতে বাংলাদেশকে এখন টেনশনে থাকতে হবে কেন? আমিতো বলবো ভালো নার্সিং পেলে এতদিনে অন্তত হকিতে এশিয়ার মধ্যে ভালো একটা অবস্থানে থাকতে পারতো। বেশি বেশি ম্যাচ খেলে সাহস বাড়াতে হবে। একটা টুর্নামেন্টের পর হাত-পা ছেড়ে দিলেতো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এখনো বাংলাদেশে বেশ কজন মানসম্পন্ন খেলোয়াড় রয়েছে। ভালো রকম অনুশীলন করলে হকিতে একটা অবস্থান তৈরি করতে পারবে। ওমান বা কাজাখস্তানকে হারিয়ে বাহবা কিছুর নেই। বাংলাদেশকে আমি আরও ওপরে দেখতে চাই। তাহির কথা প্রসঙ্গে বলেন, শুনেছি বর্তমান ফেডারেশনের কমিটি বাংলাদেশের হকি নিয়ে অনেক কাজ করছে। যদি বাংলাদেশের কোচ হওয়ার অফার দেয় তাহলে কী করবেন? তাহির বলেন, হকি আমার প্রধান পেশা। সুতরাং ভালো অফার পেলে অবশ্যই কাজ করতে আগ্রহী।