বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বসুন্ধরা কিংস ভেন্যুতে ফুটবলের জয়

শেখ কামাল স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বসুন্ধরা কিংস ভেন্যুতে ফুটবলের জয়

নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার প্রীতি ফুটবল ম্যাচে দর্শকের ঢল নেমেছিল। কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারির এই দৃশ্যই প্রমাণ করে এখনো শেষ হয়ে যায়নি ফুটবলের জনপ্রিয়তা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ফুটবলেও বাংলাদেশে উপচেপড়া দর্শক সমাগম হতো তা বর্তমান প্রজন্মের ক্রীড়ামোদীদের বিশ্বাস করানো যায় না। ৭০ ও ৮০ দশকে মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ ঘিরে পুরো দেশ উন্মাদনায় মেতে উঠত এই কথা রূপকথার কাহিনী বলে উড়িয়ে দেন অনেকেই। আসলে বিশ্বাস হবেইবা কীভাবে? মানের অবনতির ঘটায় ফুটবলে জনপ্রিয়তার ধস নামে। ঘরোয়া আসরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গ্যালারি থাকছে প্রায় ফাঁকা। যে দুই দলের ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনায় কাঁপতো দেশ সেই মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচেও করুণ দশা। গ্যালারির হাল এতটা করুণ যে মর্যাদার লড়াইয়েও দর্শক যেন হাতে গোনা যায়।

ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ও বিপিএল ঘিরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের গ্যালারি যেন কাঁপে। ডে-নাইট ম্যাচ অথচ মিরপুর স্টেডিয়ামে ভোর বেলা থেকেই ভিড়। টিকিট পেয়ে দর্শকদের উন্মাদনা দেখে মনে হয় তারা যেন বিশ্বকাপ জয় করে ফেলছে। অথচ এক সময়ে ফুটবলেও একটা টিকিট পেতে ভোরবেলা থেকে দর্শকরা স্টেডিয়াম আঙিনায় ছুটে বেড়াত তা বিশ্বাস করানো যাবে না।

সত্যি বলতে কি ফুটবলে কবে যে ঘরোয়া বা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে গ্যালারি ভরে গিয়েছিল অনেকে তা মনে করতে পারবে না। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কোটি টাকার সুপার কাপ ফাইনালে মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ। ২০১১ সালে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া প্রীতিম্যাচে চোখে পড়ার মতো দর্শক সমাগম হয়। ঢাকার বাইরে দর্শক হলেও তা অবাক করার মতো ছিল না। সত্যি বলতে কি বিশ্বকাপ বা ইউরোপিয়ান লিগ ঘিরে দেশের ক্রীড়ামোদীরা এতই উত্তেজনায় কাঁপুক না কেন ঘরের মাঠে জনপ্রিয় এই খেলার দৈন্য দশা নেমে এসেছিল।

ফুটবলে দর্শক সোনার হরিণে পরিণত হয়েছিল। ঘরের মাঠে দর্শক ভরে যাবে তা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়। সেই হতাশার দিন কেটে যাওয়ার অভ্যেস মিলেছে। বাংলাদেশের ফুটবলেও উপচেপড়া দর্শক সমাগম হয় তা বর্তমান প্রজন্মের ক্রীড়ামোদীরা প্রমাণ পেল। নীলফামারীতে শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক ম্যাচে গতকাল হাজার হাজার দর্শকের সমাগম ঘটে। বাফুফে ঢাকার বাইরে ম্যাচ আয়োজন করে ধন্যবাদ পেতেই পারে। কিন্তু এর পেছনে বড় অবদান বসুন্ধরা গ্রুপের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের। কেননা দেশের উত্তরাঞ্চলে ফুটবল জেগে উঠতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংসই।

বৃহত্তর রংপুর বিভাগে ফুটবল যখন একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখনই পেশাদার লিগে নতুন দল বসুন্ধরা কিংসই এগিয়ে আসে। চলতি বছরই রংপুরে সিনিয়র ও জুনিয়র লেভেলে টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। যা অতীতে কেউ পারেনি। বসুন্ধরা কিংসই ব্যতিক্রমী টুর্নামেন্ট আয়োজন করে উত্তরাঞ্চলের ফুটবল জাগিয়ে তুলে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়নের পরই বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ঘোষণা দিয়েছিলেন পেশাদার লিগে তারা হোম ভেন্যু হিসেবে রংপুর বা নীলফামারীকে বেছে নিতে পারে।

রংপুর বিভাগের আট জেলার ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বসুন্ধরা কিংস। সবকিছু আলোচনা ও পরামর্শ করে বসুন্ধরা কিংস হোম ভেন্যু হিসেবে নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়াম বেছে নেয়। এখন পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংস কোনো ম্যাচ না খেললেও ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত হয়ে উঠে নীলফামারীর নাম। বাফুফেও আর দেরি করেনি। আন্তর্জাতিক ম্যাচের ভেন্যু হিসেবে শেখ কামালকে বেছে নেয়।

বসুন্ধরা কিংস ভেন্যু গতকাল নীলফামারীতে দর্শকের ঢল নেমেছিল। ২২ হাজার আসনবিশিষ্ট পুরো গ্যালারি ভরে যায়। যা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল তা কিংসের ছোঁয়ায় নীলফামারীরই প্রমাণ করল বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এই ম্যাচে বাংলাদেশের তারকা ফুটবলাররা খেলেননি। তবু দুদিন আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। শুধু নীলফামারী নয়, আশপাশ জেলা থেকেও স্মরণীয় ম্যাচ দেখতে ছুটে আসেন দর্শকরা। আন্তর্জাতিক এই ম্যাচ নিজ চোখে দেখার জন্যে ঢাকা থেকেও দর্শকরা ছুটে যান নীলফামারীতে।

বিকালে খেলা অথচ গ্যালারি ভরে যায় দুপুরের আগে। এ যেন ৭০ ও ৮০ দশকের সোনালি দিনের কথা মনে করিয়ে দিল। মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ সন্ধ্যায় হলেও ঢাকা স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরে যেত দুপুরের মধ্যে। মাঠে হাজার হাজার দর্শক। স্টেডিয়ামের বাইরেও টিকিট না পেয়ে অনেকে কাঁদছে। এ দৃশ্য গতকাল নীলফামারীতেও দেখা গেল। সব মিলিয়ে ফুটবলের সোনালি দিন ফিরে আসে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার প্রীতি ম্যাচ ঘিরে।

বসুন্ধরা কিংস ভেন্যুতে বাংলাদেশ জিততে না পারলেও ফুটবলের জয় হয়েছে ঠিকই। সঠিক পদক্ষেপ ও জয় এলে ফুটবলে যে দর্শক আসবে তারই প্রমাণ মিলল নীলফামারীতে। বসুন্ধরা কিংস গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে ভেন্যু হিসেবে নীলফামারীকে বেছে নেয়। এই সিদ্ধান্ত যে কতটা উপকৃত হবে তা আভাস পাওয়া যায় গ্যালারিভরা দর্শকের উপস্থিতিতে। ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন ফুটবল এমন সময় জেগে ওঠার আভাস পেল যখন আর কয়েকদিন পরই ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ।

এশিয়ান গেমসে প্রথমবার গ্রুপপর্ব পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড খেলেছে। দর্শকও ফিরেছে। এতে সাফ ফুটবলে অনুপ্রেরণা পাবে ফুটবলাররা এ নিয়ে সংশয় নেই। দর্শক উন্মাদনায় শেষ হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক ম্যাচ। নীলফামারীর অভিষেকটাও স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এখানেই তো শেষ নয়। বরং শুরুই বলা যায়। বসুন্ধরা কিংসের হোম ভেন্যুই বলে এখানে দেশসেরা আসর পেশাদার লিগের খেলা হবে। খ্যাতনামা তারকা ফুটবলারদের লড়াইয়ে রংপুর বিভাগে ফুটবলে হারানো গৌরব ফিরবে এটাই প্রত্যাশা। নীলফামারীর দেখাদেখি অন্য জেলাও ফুটবল জেগে উঠবে এই আশা করা যেতেই পারে।

 

সর্বশেষ খবর