শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইতিহাস গড়ার ম্যাচ বাংলাদেশের

হকিতে বাংলাদেশ-কোরিয়া মুখোমুখি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইতিহাস গড়ার ম্যাচ বাংলাদেশের

চয়নের বিদায়ী ম্যাচ

হকি ফেডারেশন প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি রাখেনি। ঘরের মাঠে ও বিদেশে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে জিমি, চয়ন, আশরাফুলরা। এমনকি ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে ১১টি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। এর চেয়ে ভালো প্রস্তুতি আর কী হতে পারে। মালয়েশিয়ান কোচ কামাল গোপীনাথান কৃষ্ণমূর্তিও বলেছেন, ছেলেদের ঠিকমতো ঝালাই করে নিতে পেরেছি। তবে তিনি ভুলেও লক্ষ্য হিসেবে সেমিফাইনালের কথা বলেননি। গোপীর একটাই কথা, যা সম্ভব নয় সেই আশা দিতে পারি না। তবে এতটুকু বলব, আগের চেয়ে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ভালো করবে।

সত্যি বলতে কি, কোচ কথা রেখেছেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ এশিয়ান গেমসে হকিতে প্রথম অংশ নিয়েছে ১৯৭৮ সালে। সেবার কোনো ম্যাচ না জিতলেও বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থান দখল করে। এরপর এ অবস্থানে থাকাটাই স্বপ্নে পরিণত হয়। এবার গ্রুপে তৃতীয় স্থান দখল করে চল্লিশ বছর পর বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থান নিশ্চিত করে। এখন পঞ্চম স্থান দখল করলে তা হবে দেশের হকির জন্য বড় প্রাপ্তি।

পদক বা সেমিফাইনাল নয়, পাঁচে থাকাটাই বাংলাদেশের কাছে শিরোপাতেই পরিণত হয়েছে। এবার কি জিমি চয়নরা পারবেন ইতিহাস গড়ে হকির সুনাম বাড়াতে? আজ সেই কাঙ্ক্ষিত ম্যাচ। জাকার্তায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া। সোনার লড়াইয়ে মালয়েশিয়া-জাপান আর তামা জিততে লড়বে হকির দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ভারত ও পাকিস্তান। মালয়েশিয়া বা জাপান জিতলে তা হবে হকির নতুন ইতিহাস।

পদক নয় বাংলাদেশের ম্যাচটাও অঘোষিত ফাইনালে পরিণত হয়েছে। কেননা এই প্রথম পাঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে। জিতলেও পদক তালিকায় নাম উঠবে না জিমিদের। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে যদি গেমস ইতিহাসে প্রথম পঞ্চম স্থানে থাকতে পারে তা হবে দেশের হকির বড় অর্জন।

গত দুই এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল আটে। এ নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। এবারও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারবে কি-না এ নিয়েও শঙ্কা ছিল। কেননা গ্রুপে মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ছাড়াও ছিল ওমান। মালয়েশিয়া বা পাকিস্তানের সঙ্গে জেতার কেউ আশাও করেননি। ভয়টা ছিল ওমানকে ঘিরেই। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে যে কোনো টুর্নামেন্টে ওমানই ছিল জিমিদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের বিপক্ষেও জয়ের নিশ্চয়তা ছিল না। তাই গ্রুপ পর্বে ওমানের সঙ্গে হারা মানেই ষষ্ঠ স্থানও হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। যাক সেই ভয়কে এবার জয় করা গেছে। উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ ২-১ গোলে ওমানকে পরাজিত করে। এই জয়ের পরই বাংলাদেশের পঞ্চম স্থান নির্ধারণী খেলা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হারলেও পরবর্তীতে কাজাখস্তান ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে জয় পেয়ে বাংলাদেশ অনেক প্রাপ্তির ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে। অনেকে নিশ্চিত ছিলেন জাপানের বিপক্ষেই বাংলাদেশ পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে লড়বে। কেননা ‘এ’ গ্রুপে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া সেমিফাইনাল খেলবে এ নিয়ে কারও সংশয় ছিল না।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে জাপানই কি-না দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয়। শুধু সেমি নয়, পাকিস্তানকে হারিয়ে জাপান সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখছে। ভারতকে হারিয়ে গেমস ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠেছে মালয়েশিয়া। পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আজ দক্ষিণ কোরিয়া। জাপানকে হারানোর রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। তাই আবারও ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। এখন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া হওয়ায় পঞ্চমের আশাটা ফিকে হয়ে গেছে। জাপান জিততে পারে, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশ হারাবে তা স্বপ্নই বলা যায়। তবু সেরাটা দিতে চাইবেন জিমিরা। শেষ পর্যন্ত অঘোষিত ফাইনালে বাংলাদেশ যদি জিতে যায়, তা সোনার চেয়েও কম প্রাপ্তি হবে না। এই ম্যাচ দিয়ে মামুনুর রহমান যেন জাতীয় দল থেকে অবসর নেবেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি চার এশিয়ান গেমসসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। চয়নের বিদায়ী ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাতে পারলে জাতীয় দলে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানতে পারবেন তিনি।

সর্বশেষ খবর