শিরোনাম
সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাফ মিশনে স্বপ্নের দল বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাফ মিশনে স্বপ্নের দল বাংলাদেশের

এতদিন ৩০ জনকে নিয়ে অনুশীলন করলেও গতকাল বাংলাদেশ দলে সুযোগ পাওয়া ২০ খেলোয়াড়ই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নিজেদের ঝালাই করে নিচ্ছেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মান বা পারফরম্যান্স বিচারে বড় টুর্নামেন্টে কখনো শিরোপার জেতার সামর্থ্য ছিল না বাংলাদেশের। সাফল্য বলতে দুইবার এস এ গেমসে সোনা, সাফ চ্যাম্পিয়ন্সশিপ, মিয়ানমার চ্যালেঞ্জ কাপ ও প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপে একবার করে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেই সাফ শিরোপা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত সাফের এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে একবার। এগার আসরে ভারত যেখানে কিনা ট্রফি জিতেছে সাতবার। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান একবার করে সাফল্যে ভাগ বসিয়েছে। ২০০৩ সালে শেষবার বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর একবার ফাইনাল খেললেও ১৫ বছরে ট্রফি হাতে তুলতে পারেননি বাংলাদেশের ফুটবলাররা। এখন শিরোপা শুধু স্বপ্নই হয়ে দাঁড়ায়নি, গত তিন আসরে সেমিফাইনালেই জায়গা করে নিতে পারেনি ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে পাওয়া লাল সবুজের দল। সামর্থ্য কিংবা যোগ্যতা থাকার পরও ১৫ বছরে সাফ না জেতাটা ফুটবলে বাংলাদেশের বড় ব্যর্থতা। সত্যি বলতে কি জনপ্রিয় এই খেলাকে ঘিরে হাহাকার ও তিরস্কার সাফের ভরাডুবিতেই। তাই নিস্তেজ ফুটবলকে সতেজ করে তুলতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বড় প্রাপ্তিই হচ্ছে একমাত্র রাস্তা। ১৫ বছর পর হলেও বাংলাদেশ যদি এবার টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে তাহলে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজে পাবে ফুটবল। কেটে যাবে হতাশা ও যত ক্ষোভ। স্বপ্নের মিশনে ২০ সদস্যের সপ্নের দলও ঠিক করে ফেলেছেন কোচ জেমি ডে। কথা হচ্ছে ঘরের মাঠেই হারানো গৌরব উদ্ধার করতে পারবে কি বাংলাদেশ? ফুটবলে সব ভয়কেই জয় করা যায় তা বিশ্বকাপে দেখিয়ে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ফেবারিটদের পেছনে ফেলে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। স্বপ্নের ট্রফি জিততে পারেনি। কিন্তু বিশ্বতো পেয়েছে ফুটবলে নতুন শক্তিকে। তাই আগে যাই হোক না কেন এবারও যে সাফে বাংলাদেশ ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকবে তা ভাবাটা ঠিক হবে না। দীর্ঘ সময়ে শিরোপা না জেতায় তা স্বপ্নে পরিণত হলেও বাংলাদেশ কাপ জেতার সামর্থ্য রাখে। আগামীকালই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বহু প্রতীক্ষিত সাফ ফুটবলের পর্দা উঠছে। সব কিছু প্রস্তুত, এখন শুধু সাত দেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই মাঠে নামার অপেক্ষায়। স্বপ্নের মিশনে স্বপ্নের ট্রফি জিততে বাংলাদেশ দলে কারা খেলার যোগ্যতা রাখেন তা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন ইংলিশ কোচ জেমি ডে। প্রায় ৩ মাস অনুশীলন ও প্রস্তুতি ম্যাচে ৩০ জন ফুটবলারের পারফরম্যান্স যাচাই করে ২০ জনকে চূড়ান্তভাবে বেছে নিয়েছেন। নীলফামারী বসুন্ধরা হোম ভেন্যুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পরই গতকালই জেমি ডে শিষ্যদের নিয়ে অনুশীলনে নেমেছিলেন। সকালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দলে সুযোগ পাওয়া ২০ জন ফুটবলারই ঘাম ঝরান। বাফুফের স্বাক্ষরিত প্যাডে এখনো চূড়ান্ত দলের নাম ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু জেমি ডে বলেছেন এরাই খেলবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। কোচ শুরু থেকেই বলছিলেন, সাফে তিনি তরুণদেরই প্রাধান্য দেবেন। তরুণ ও অভিজ্ঞ মিশ্রণে দল গড়া হয়েছে। তবু বেশ কজন তরুণ ফুটবলারের চূড়ান্ত দলে সুযোগ না পাওয়ায় অনেকে বিস্মিত। বিশেষ করে বাদ পড়াদের মধ্যে জাফর ইকবালের নামটি বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে।

এই তরুণ ফুটবলার ভুটানে জুনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাজিক প্রদর্শন করেন। ভারতের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও বাংলাদেশ জিতেছিল ৪-৩ গোলে। মূলত জাফরের নজরকাড়া দুই অবিশ্বাস্য গোলে বাংলাদেশের যুবারা স্মরণীয় জয় পায়। সেই জাফর ইকবালই কি না স্বপ্নের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেই? এ ব্যাপারে জেমি ডে সরাসরি বলেছেন, ‘২০ জনকে বাছাই করা হয়েছে অনেক যাচাই করে। জাফর ইকবালের পজিশনে আরও ভালো মানের খেলোয়াড় থাকায় তাকে দলে নেওয়া প্রয়োজন মনে করিনি। তা ছাড়া এখানে আফসোস করার কিছু নেই। যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারলে অবশ্যই জাফর সামনে জাতীয় দলে সুযোগ পাবে। বাদ পড়েছেন মতিন মিয়া, রহমত মিয়া, আবদুল্লাহ, আনিসুর রহমান, মনসুর রহমান, প্রীতম ও রাব্বি। অথচ চূড়ান্ত দলে জায়গা হয়েছে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে না থাকা ওয়ালি ফয়সাল, ফয়সাল মাহমুদ, সাখাওয়াত রনি, ইমন বাবু, সোহেল রানা, নাসির উদ্দিন ও মামুনুল ইসলাম। বিশেষ করে ওয়ালি ও মামুন চূড়ান্ত দলে আসবেন তা ছিল ধারণার বাইরে।

জেমি বললেন, ‘দল ঘোষণা হলে অনেক প্রশ্ন উঠবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি বলব যাদের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি তাদেরই চূড়ান্ত দলে নিয়েছি। আমার বিশ্বাস এই ছেলেরা এবার সাফে দেশকে বড় কিছু উপহার দিতে পারবে।’ তা শিরোপা কি না? জেমি দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, ‘লক্ষ্য আমার একটাই সাফে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা।’ জেমি বলছেন যোগ্যতা বিচার করেই তিনি চূড়ান্ত দল গড়েছেন। যারা দক্ষ তাদেরকেই বেছে নিয়েছেন। কিন্তু বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন যোগ্যতা না থাকার পর কমপক্ষে তিন জনকে মূল দলে নেওয়া হয়েছে। যারা আগামী মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলে একটি বিশেষ ক্লাবে খেলবেন বলেই তাদের বেচে নেওয়া হয়েছে। ২০ জনের নাম ঘোষণায় কোচ একটা ভুল করেছেন। নিময় অনুযায়ী চূড়ান্ত দলে তিনজন গোলরক্ষক থাকার কথা থাকলেও তিনি নিয়েছেন দুই জনকে। আজ নাকি একজন গোলরক্ষক নেওয়া হচ্ছে। এতে অন্য পজিশনে একজন খেলোয়াড় বাধ পড়বেন। স্বপ্নের দল বলা হচ্ছে এই কারণে অনেক যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত দল গঠন করা হয়েছে। এখন স্বপ্নের মিশনে স্বপ্নের ফুটবলাররা দেশকে কি দেবেন সেটাই অপেক্ষায়।

 

ওরা ২০ জন

আশরাফুল ইসলাম রানা, শহিদুল আলম সোহেল, তপু বর্মন, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, বিশ্বনাথ ঘোষ, টুটুল হোসেন বাদশা, ওয়ালি ফয়সাল, সুশান্ত ত্রিপুরা, মাসুক মিয়া জনি, মামুনুল ইসলাম, ইমন মাহমুদ বাবু, ফয়সাল মাহমুদ, সোহেল রানা, বিপলু আহমেদ, আতিকুল ইসলাম ফাহাদ, জামাল ভুইয়া, শাখাওয়াত হোসেন রনি, মাহবুবুর রহমান সুফিল, সাদউদ্দিন ও রবিউল হাসান।

সর্বশেষ খবর