বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারুণ্যের কেতন উড়িয়ে বাংলাদেশের শুরু

রাশেদুর রহমান

তারুণ্যের কেতন উড়িয়ে বাংলাদেশের শুরু

শুরুতেই গোল। তপু বর্মণকে নিয়ে উল্লাসে মাতেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। উদ্বোধনী ম্যাচে ভুটানকে হারিয়ে সাফে দারুণ সূচনা করেন স্বাগতিকরা —রোহেত রাজীব

‘ওই নতুনের কেতন ওড়ে’ কোরাস গাইতেই পারেন কোচ জেমি ডে। কেবল কোচ কেন, পুরো বাংলাদেশ গাইতে পারে এই কোরাস। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে নতুনকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। সেই নতুনদের গড়ে তুলতে তিনি ছুটে বেরিয়েছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। দীর্ঘ চার মাসের কঠোর পরিশ্রমে সম্ভাব্য সেরা উপায়ে জমা করেছেন অভিজ্ঞতা। কখনো হেরেছেন, কখনো বা বিজয়ী হয়েছেন। অবশেষে পরীক্ষায় নেমে নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ভুটানকে হারিয়ে সাফ সুজুকি কাপে দারুণ সূচনা করল বাংলাদেশ। ২-০ ব্যবধানে জিতে গ্রুপের শীর্ষস্থানটা আপাতত দখল করে নিল জেমি ডের শিষ্যরা। ভুটানের বিপক্ষে হেরেই বাংলাদেশের ফুটবল অনেকটা মৃতপ্রায় হয়েছিল। সেই ভুটানকে হারিয়েই ফুটবলে নবযাত্রা করলেন জামাল ভূঁইয়ারা। একই সঙ্গে ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে হারের প্রতিশোধও নিল বাংলাদেশ।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করেছিল বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচ শুরুর আগেই। উত্তপ্ত গরমের পরিবর্তে শীতল পরিবেশ। ফুটবল খেলার জন্য বড্ড উপযোগী। এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কয়েক হাজার দর্শক হাজির বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। সাফ সুজুকি কাপে বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচে দারুণ কিছু হবে, এই আশায় মাঠে এসেছে তারা। শূন্য গ্যালারি কিছুটা হলেও ভরাট হয়েছে! বাংলাদেশের খেলা দেখতে দেখতে দর্শকদের মনে নিশ্চয়ই উঁকি দিয়েছিল সোনালি প্রজন্মের ফুটবলশৈলী! কী দুর্দান্ত ড্রিবলিং! কী দুরন্ত গতি! পুরো ম্যাচ খেলার পরও মনে হচ্ছিল, আরও একটা ম্যাচ খেলতে প্রস্তুত দলটা!

থাইল্যান্ডের রেফারি ম্যাচ শুরু হওয়ার বাঁশিতে ফুঁ দিতেই হরিণের মতো চঞ্চল হয়ে উঠল বাংলাদেশ। জেমি ডের শিষ্যরা প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণের পর আক্রমণ করতে থাকে। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে কর্নার পায় বাংলাদেশ। সেই কর্নার কিক হওয়ার আগেই ডি বক্সের ভিতরে সাদ উদ্দিনকে ফাউল করেন ভুটানের ডিফেন্ডার তুশেরিং দরজি। সঙ্গে সঙ্গেই হলুদ কার্ড দেখিয়ে পেনাল্টির নির্দেশ দেন থাইল্যান্ডের রেফারি শিবকর্ন পু-উদোম। তপু বর্মণ পেনাল্টি শটে দারুণ এক গোলে দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়ে দেন। ম্যাচের শুরু থেকেই ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকারে চারপাশ কেঁপে উঠছিল। গোলের পর এই চিৎকার বেড়ে যায় বহুগুণে। প্রথম গোলের পরই শুরু হয় সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আফসোস। ম্যাচের অষ্টম মিনিটে মাহবুবুর রহমান সুফিল মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে দুর্দান্ত ড্রিবলিং করতে করতে পৌঁছে যান ভুটানের ডি বক্সে। তবে ফিনিশিংটা করতে পারেননি তিনি। ভুটানের গোলরক্ষক তুশেরিং দেন্দুপ সামনে এগিয়ে এসে রুখে দেন সুফিলকে। এরপর মাসুক মিয়া জনি আর বিপলু গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করেন। বিপলুর দারুণ শটটা গোলরক্ষক অনেকটা লাফিয়ে উঠে গোলবারের ওপর দিয়ে ঠেলে দেন। প্রথমার্ধটা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই শেষ করে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধে নেমেও ঠিক প্রথমার্ধের মতোই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠে বাংলাদেশ। ৪৭তম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে ডান পায়ের দারুণ এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন সুফিল। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর আর পরাজয়ের কোনো শঙ্কাই থাকেনি বাংলাদেশ দলে। কোচ জেমি ডে আগেই শিষ্যদের বলেছিলেন, ফুটবলটা উপভোগ করতে শেখ। জয়-পরাজয়ের ভয়টাকে ঝেড়ে ফেল। এই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েই কী সফল হলো বাংলাদেশ! কেবল একটা মন্ত্রেই শিষ্যদের দীক্ষা দেননি কোচ জেমি। আরও অনেক কিছুই শিখিয়েছেন। ফুটবল মানেই হলো, বল নিয়ে দ্রুততালে ছুটতে পারা। ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষকে কাঁবু করা। ট্যাকল করতে পারা। আর নিখুঁত পাসিং-প্লেসিং। সব ক্যাটাগরিতেই বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতিটাই চোখে পড়ল গতকাল। ঝিমিয়ে পড়া ভাবটা কেটে গেছে। পুরো নব্বই মিনিট বুনো ষাঁড়ের মতোই দৌড়াতে পারে দলটা। পুরনোদের ঝেড়ে ফেলে এ কারণেই বুঝি কোচ জেমি ডে তারুণ্যের শক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। গতকাল বাংলাদেশের প্রথম একাদশে কেবল তিনজন ছিলেন পঁচিশোর্ধ্ব। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া (২৮), গোলরক্ষক শহিদুল আলম (২৯) ও ডিফেন্ডার ওয়ালি ফয়সাল (৩৩)। পাঁচজন ছিলেন ২০ ও ২০র নিচে। তরুণ এই দলটা সত্যিই আশার বাণী শুনিয়ে দিল গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। গ্রুপ পর্বে আরও দুটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগামীকাল। নেপালের বিপক্ষে শনিবার। প্রথম ম্যাচ জিতে অনেকটাই এগিয়ে থাকল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচটা জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ঢাকার মাঠেই সেমিফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর তো গ্রুপ পর্বের বাঁধাই ডিঙাতে পারেনি। দেখা যাক, এবার নিজেদের মাটিতে কতদূর যেতে পারে জেমি ডের শিষ্যরা!

সর্বশেষ খবর