মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কুকের নতুন ইতিহাস

মেজবাহ্-উল-হক

কুকের নতুন ইতিহাস

টেস্ট ক্রিকেটের ১৪১ বছরের ইতিহাসে যা কখনোই ঘটেনি, তাই ঘটিয়ে ফেললেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালিস্টার কুক। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি এবং সেঞ্চুরির পর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচের দুই ইনিংসেও হাফ সেঞ্চুরি এবং সেঞ্চুরি করেছেন। টেস্টের ইতিহাসে যেন নতুন অধ্যায় সংযুক্ত করলেন কুক। অভিষেক এবং শেষ টেস্টে সেঞ্চুরির ঘটনা বিরল, কিন্তু নতুন নয়। এর আগেও চার ব্যাটসম্যান ভারতের মোহাম্মদ আজহার উদ্দীন, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ চ্যাপেল, আর এ ডাফ এবং ডব্লু পোন্সফোর্ড ক্যারিয়ারের প্রথম এবং শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আছে। সেই তালিকায় পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে যুক্ত হলো অ্যালিস্টার কুকের নাম।

তবে অভিষেক ও শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি ছাড়াও একটি করে হাফ সেঞ্চুরি থাকার কারণে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন কুক। ভারতের বিরুদ্ধে ওভাল টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৭১ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন ১৪৭। কুকের সঙ্গে ওভাল টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন জো রুটও। তাদের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভারতের বিরুদ্ধে চতুর্থ জয়টা যেন দেখতে পাচ্ছে ইংল্যান্ড। তবে এই ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন কুক। এই ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালের নাগপুরে এই ভারতের বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংস ৬০ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৪ রানের ক্যারিশম্যাটিক ইনিংস খেলেছিলেন এই ইংলিশ ওপেনার।

কুক হচ্ছেন ইংল্যান্ডের এক রান মেশিন। টেস্ট ক্রিকেটাতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৪৫-এর উপরে গড়, ১২ হাজারের উপরে রান। ৩৩টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫৭টি হাফ সেঞ্চুরি। টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের দিক দিয়ে তার ধারে কাছেও নেই অন্য কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যান। ২০১৮ সালের প্রথম ৯ টেস্টে এই রান মেশিনের গড় কিনা মাত্র ১৮.৬২। এ কারণেই চার দিক থেকে ধেয়ে আসছিল সমালোচনা তীর। কুকও এই চাপ সহ্য করতে পারছিলেন না। সে কারণেই ওভাল টেস্টের আগেই টেস্ট ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়ে দেন। মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই এমন কিংবদন্তির বিদায় ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দেয়।

অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কুক বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের হয়ে আমি দারুণ কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছি। যা আমি কখনো কল্পনাও করিনি তেমন কিছু অর্জন করেছি। আমি ছোটবেলা যখন ক্রিকেট বুঝেছি এবং একটু একটু করে খেলতে শিখেছি তখন থেকেই ভালোবাসি। ইংল্যান্ডের জার্সি কখনো আমি আমার দায়িত্বে অবহেলা করিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।’ শচীন টেন্ডুলকারের মতো গ্রেট ক্রিকেটার খেলেছেন ৩৮ বছর পর্যন্ত। নিঃসন্দেহে কুকও খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন। যথেষ্ট ফিটও ছিলেন। কিন্তু ফর্মহীনতা এবং কিছুটা অভিমান থেকেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে, অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পরই শেষ টেস্টে মাঠে আবার সেই পুরনো কুক (রান মেশিন)। সেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং। চাপ মুক্ত হওয়ার পরই যেন নিজেকে ফিরে পেলেন কুক। আগের ম্যাচে এমন পারফর্ম করতে পারলে হয়তো বিদায়ের লগ্নটাও আর কিছু বিলম্ব হতো, আরও কিছু গ্রেট ইনিংস উপহার দিতে পারতেন ক্রিকেটকে— তাই শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি ইনিংস দুটি হয়তো পরিতৃপ্তির সঙ্গে কুকের আফসোসেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর