শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোহেলকে ঘিরে রহস্য কাটছে না

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সোহেলকে ঘিরে রহস্য কাটছে না

টানা দুই ম্যাচ জিতেও ঘরে মাঠে সেমিফাইনাল খেলতে পারল না বাংলাদেশ। নেপালের কাছে হার সত্যিই বেদনাদায়ক। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আগের তিন আসরেও গ্রুপপর্ব খেলে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ঘরের মাঠ বলেই প্রত্যাশা জেগেছিল ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। গ্রুপপর্বে ভুটান ও পাকিস্তানকে হারানোর পর শিরোপা উদ্ধারের আশাটাও জেগে উঠেছিল। অথচ বাংলাদেশ কিনা নেপালের কাছে ২-০ গোলে হেরে স্বপ্নটা ভেঙে গেল।

বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নেপাল ও মালদ্বীপ সেমিতে লড়ছিল। তখন বাফুফেরই বেশ কজন কর্মকর্তা আফসোস করে বলছিলেন ইস্ আজতো আমাদেরই খেলার কথা ছিল। সত্যি বলতে কি নেপালের কাছে হার বিস্ময়ের কিছু নয়। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়াও অন্য টুর্নামেন্টেও বাংলাদেশের হারের রেকর্ড রয়েছে।

সেদিনও ঢাকায় নেপাল দুর্দান্ত খেলে জয় পেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বিদায়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। আর তা গোলরক্ষক সহিদুল আলম সোহেলকে কেন্দ্র করেই। ব্যবধান ২-০ হলেও প্রশ্ন উঠেছে প্রথম গোল ঘিরেই। ফ্রি কিকে গোল করে নেপাল এগিয়ে যায়। অথচ বিমলের সেই শটে ক্যারিশমার ছাপ ছিল না। এই শট গোলরক্ষক আয়াসে দুই হাতের গ্লাভসে নিতে পারেন। কিংবা পাঞ্চ করে কর্নার করতে পারেন। উঁচু করে সরাসরি শটটি সোহেলের হাতে এলে তিনি যেন বল নিয়ে সার্কাস প্রদর্শন করেন।

সোহেলেরতো একেবারে অভিজ্ঞতা কম নয়। জাতীয় ও বড় বড় দলে খেলেছেন। আসছে মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীতে দেখা যেতে পারে। অথচ সেই সোহেল কিনা বল এহাত ওহাত করতে গিয়েই জালে পাঠিয়ে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে গ্যালারিতে বসা ২৫ হাজার দর্শক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। মূলত সোহেলের খামখেয়ালি বা দায়িত্বহীনতায় গোল হজম করে। মনোবল ভেঙে যায় জামাল, সুফিলদের। শেষের দিকে আরেক গোল খেয়ে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় বাংলাদেশের। অথচ ড্র করলেও জামালরা সেমিফাইনালে চলে যেতেন।

প্রশ্ন উঠেছে দলে আশরাফুল ইসলাম রানার মতো মানসম্পন্ন গোলরক্ষক থাকার পরও কেন তাকে নামানো হলো না। জাকার্তা এশিয়ান গেমসে রানাইতো ছিলেন বাংলাদেশের নিয়মিত গোলরক্ষক। প্রতিটি ম্যাচই তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। তাছাড়া সোহেলের মান যাচাই করতে নীলফামারী প্রীতিম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাকে সুযোগ দেওয়া হয়। তারই ভুলেই গোল খেয়ে বাংলাদেশ হেরে যায়। তবু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সোহেলকে সেরা একাদশে রাখা হলো কেন?

নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পরই সংবাদ সম্মেলনে কোচ জেমি ডে সরাসরি বলেছেন দল গঠনে কেউ হস্তক্ষেপ করেননি। তিনিই পারফরম্যান্স দেখেই সেরা একাদশ সাজান। কোচ এই কথা বলার পরও প্রশ্ন উঠেছে তিনি কী কোনো কিছু লুকাতে চাচ্ছেন। তাহলে সোহেলকে নামানোর রহস্যটা কী?

এখানে আলোচনা বা বিতর্কটা উঠছে দলীয় ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপুকে নিয়ে। রুপু আবার ঢাকা আবাহনী ফুটবল দলের দায়িত্ব পালন করছেন। গোলরক্ষক সোহেলও খেলবেন আবাহনীতে। এক্ষেত্রে ম্যানেজারের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতে এমন উদাহরণ অনেক দেওয়া যাবে। গতকাল এ নিয়ে আলাপ হয় রুপুর সঙ্গে। তিনি বলেন, যা শুনছি হাস্যকর ও দুঃখজনক। কেননা কোচ কখনো বেস্ট ইলেভেন গঠন নিয়ে আমার সঙ্গে আলাপ করার প্রয়োজন মনে করেননি। তিনিই প্রতিটি ম্যাচে দল সাজিয়েছেন।

রুপু বলেন, বিতর্কটা উঠেছে মূলত নেপালের বিপক্ষে হারের পর। সেদিন ম্যাচ ছিল সন্ধ্যা ৭টায়। বাংলাদেশের বেস্ট ইলেভেনে কারা খেলবে তা আমি জানি বিকাল পাঁচটার পর। এখানে আমার হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগই ছিল না। ওই ম্যাচ কেন? ভুটান বা পাকিস্তানের বিপক্ষে কারা খেলবে তা জেনেছি অনেক পরে। এমনকি রিজার্ভ খেলোয়াড় নামানোর সিদ্ধান্তটা শুধু কোচই নিবেন। তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন। বিষয়টি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তদন্তের প্রয়োজন মনে করছেন। রুপু বলেন, আমিও চাই তদন্ত হোক। যা সত্যি সেটাই জানানো হোক সবাইকে। রুপু বলেন, সোহেলকে বলা হচ্ছে আবাহনীর গোলরক্ষক। তার সঙ্গেতো শুধু আলোচনা হয়েছে। আরও কজনা আমাদের পছন্দের তালিকায় আছে। সুতরাং আমাকে ও সোহেলকে জড়িয়ে যে বিতর্কটা তোলা হচ্ছে তা কি হাস্যকর নয়।

সর্বশেষ খবর