রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাফ মুকুট মালদ্বীপের

কষ্ট লাগে এই মালদ্বীপই কিনা আশির দশকে বাংলাদেশ জাতীয় দল তো বটেই, মোহামেডান আবাহনীর সামনেও দাঁড়াতে পারত না। ভেসে যেত গোলের বন্যায়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাফ মুকুট মালদ্বীপের

সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন উল্লসিত মালদ্বীপ দল —রোহেত রাজীব

একেই বলে ভাগ্য! সেমিফাইনালেই বাদ পড়ে যাচ্ছিল। টসভাগ্যে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছিল মালদ্বীপ, তারাই কিনা সাফের ব্রাজিল বলে খ্যাত ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে হারানো মুকুট উদ্ধার করল। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১২তম সুজুকি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সাতবারের চ্যাম্পিয়নদের ২-১ ব্যবধানে ধরাশায়ী করে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতল মালদ্বীপ। ২০০৮ সালে এই ভারতকে হারিয়ে সাফে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা।

পরের বছরও ঢাকায় দুই দল ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু শিরোপা জিতে নিয়েছিল ভারত। সেই প্রতিশোধটা ভালোভাবেই নিল একসময় ফুটবলের তলানিতে থাকা দেশটি। ঢাকায় সাফের তিন আসরেও ফাইনাল খেলেছিল মালদ্বীপ। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়। দুই আসরে ব্যর্থ হলেও এবার আর মালদ্বীপকে কাঁদতে হয়নি। স্বপ্নের ট্রফি নিয়েই দেশে ফিরছে তারা।

সেমিতে মালদ্বীপ ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে নেপালকে। তার পরও ফাইনালে ভারতই ছিল ফেবারিট। হবেই না কেন, সাফের এক আসর ছাড়া প্রতিবারই তারা ফাইনাল খেলেছে। সাতবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সাফের ব্রাজিল খ্যাতিটাও পেয়ে গেছে। সাফে তাদের আর পাওয়ার কিছু নেই। তাই তো এবার জাতীয় দলের পরিবর্তে জুনিয়রদের নিয়েই ভারত নেমেছিল। শিরোপার কাছাকাছিও চলে এসেছিল। কিন্তু মালদ্বীপের ক্যারিশমার কাছে পেরে উঠতে পারল না।

গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপকে ২-০ গোলে হারানোয় অনেকে ভেবেছিলেন ভারতের বিজয়টা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সেমিতে ওঠার পরই মালদ্বীপ কোচ পিটার সের্গার বলেছিলেন, ‘অবশ্যই ভাগ্য আমাদের ফেবার করেছে। তবে সেমিতে মালদ্বীপের ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে পারবেন।’ কোচের এই কথা পুরোপুরি মিলে গিয়েছিল। নেপালকে দাঁড়াতেই দেয়নি। ফাইনালে ওঠার পরও কোচের একই কথা— ‘হোক না ভারত, আমার ছেলেরাই বিজয়ের পতাকা ওড়াবে।’

বাংলাদেশ বিদায় নেওয়ায় ফাইনালে সেভাবে দর্শকের দেখা না মিললেও যারা গ্যালারিতে ছিলেন তারা মালদ্বীপের নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়েছেন। তবে প্রথম কয়েক মিনিট ভারত যে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়েছিল তাতে মনে হচ্ছিল ভারত গোল পেয়ে যাবে। গ্যালারিতে হাতে পতাকা নিয়ে ভারতের সমর্থকরা অপেক্ষায় ছিলেন কখন উৎসবে মাতবেন।

গোলের দেখা মিলল ঠিকই। তবে ভারত নয়, এগিয়ে গেল মালদ্বীপ। পাল্টা আক্রমণ থেকে ভারতের অর্ধে ঢুকে পাস দেন নাইজ হাসান। বল পেয়ে সতীর্থ ইবরাহিম প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠালে মালদ্বীপ উৎসবে মেতে ওঠে। সমতা আসার সুযোগ পেয়েছিল ভারত। কিন্তু মালদ্বীপের ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় জালে বল পাঠাতে পারেনি। প্রথমার্ধে ১ গোলে এগিয়ে থাকে মালদ্বীপ। ৬৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মোহাম্মদ হামজা। ভারতের গোলরক্ষক এগিয়ে এলে তিনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে জালে বল পাঠান। তবে ইনজুরি টাইমে সুমিত পাসির গোলে ভারত ব্যবধান কমালে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরে আসে। না, শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপই বিজয় উৎসব করে।

এই শিরোপায় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে টপকে গেল মালদ্বীপ। এতদিন চার দলই একবার করে শিরোপা জেতা দল ছিল। মালদ্বীপ সেখানে দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। এতেই প্রমাণ মেলে ফুটবলে তাদের অগ্রগতি। বাংলাদেশ যেখানে টানা চার আসরেই গ্রুপ খেলে বিদায়, মালদ্বীপ সেখানে সাফের মুকুট উদ্ধার করল।

কষ্ট লাগে এই মালদ্বীপই কিনা আশির দশকে বাংলাদেশ জাতীয় দল তো বটেই, মোহামেডান-আবাহনীর সামনেও দাঁড়াতে পারত না। ভেসে যেত গোলের বন্যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর