বসুন্ধরা কিংস পেশাদার লিগে এখনো মাঠে নামেনি। অথচ একের পর এক চমক দেখিয়ে চলেছে। সত্যি বলতে ফুটবলে চমকের নাম বসুন্ধরা কিংসই। যা নতুন তা সবই এখন কিংসকে ঘিরেই। বাফুফের কর্মকর্তাদের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে তারাই। খেলা পাগল শহর ঢাকাতেই যখন দর্শক হয় না। তখন অন্য জেলায় করে লাভ কী—এই চিন্তাটা কর্মকর্তাদের পেয়ে বসেছিল। তাইতো গত দুই মৌসুমে পেশাদার লিগ ঢাকাতেই বন্দী।
বসুন্ধরা কিংস চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলা অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফুটবল জাগরণে নতুন কিছু করতে হবে। ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান বরাবরই একটা কথা বলে আসছেন ফুটবল উন্নয়নে ও জাগরণে দায়িত্ব শুধু বাফুফের নয়, ক্লাবগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। অন্যরা নীরব থাকলেও বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা কিংসই ধাপে ধাপে নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। চলতি বছরই রংপুরে এই ক্লাবের উদ্যোগে সিনিয়র ও জুনিয়র লেভেলে একই সঙ্গে দুটো টুর্নামেন্ট করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।
নীলফামারীকে পেশাদার লিগে নিজেদের হোম ভেন্যু ঘোষণার পর তো ফুটবল ঘিরে উত্তর অঞ্চলে বিপ্লব ঘটে যায়। যার বড় প্রমাণ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার প্রীতি ম্যাচ। বাংলাদেশ এই ম্যাচ হারলেও শেখ কামাল স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল নেমেছিল। ২২ হাজার আসনবিশিষ্ট পুরো গ্যালারি ভরে যায়। বাংলাদেশে ফুটবলে দর্শক হয় তা অনেকেই ভুলতে বসেছিল। নীলফামারীই তা দেখিয়ে দেয় ফুটবল বাঙালির প্রাণের খেলা।ফুটবলে এই বিপ্লব ঘটানোর নায়ক তো বসুন্ধরা কিংসই। তারা হোম ভেন্যু ঘোষণা করার পরই তো উত্তর অঞ্চলে মৃতপ্রায় ফুটবল জেগে ওঠে। বাফুফে সাহস পায় নীলফামারীতে আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচ আয়োজন করার।
এক মাস যেতে না যেতেই বসুন্ধরা কিংস হোম ভেন্যুতে আবারও ফুটবল উন্মাদনা। নায়ক সেই কিংসই। এবারের আয়োজনটা ব্যতিক্রমী বা বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাসই বলা যায়। আগামীকাল বিকালে নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা কিংস ও মালদ্বীপ নিউ রেডিয়্যান্ট আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচ খেলবে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এই প্রথম ঢাকার বাইরে ক্লাব পর্যায়ে আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচ হতে যাচ্ছে। শুধু কি তাই এর চেয়েও বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ফুটবলে জাতীয় দলের যে সংকটাপন্ন অবস্থা তাতে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবে বিশ্বকাপ খেলা তারকা খেলবেন তা ভাবাই যায় না। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে বসুন্ধরা কিংসই।
পেশাদার লিগে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে খেলতে রাশিয়া বিশ্বকাপে কোস্টারিকার পক্ষে খেলা ড্যানিয়েল কলিন ড্রেস চুক্তিও করে ফেলেছেন। এখন শুধু বসুন্ধরা জার্সি চড়িয়ে মাঠে নামার অপেক্ষা। বিশ্বকাপ তারকা কলিন ড্রেসের বাংলাদেশে অভিষেক হচ্ছে নীলফামারীতে।
এতদিন টিভিতেই শুধু বিশ্বকাপের তারকাদের খেলা উপভোগ করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। যেখানে কিনা নীলফামারীর দর্শকরা স্বচক্ষে দেখবেন বিশ্বকাপের তারকার নৈপুণ্য। বাংলাদেশের ফুটবলে এ এক নতুন ইতিহাস। শুধু নীলফামারী কেন? এই প্রথম ঢাকার বাইরের দর্শকরা বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড়ের খেলা দেখবেন। আগে থেকেই বসুন্ধরা কিংস ঘোষণা দিয়েছিল তাদের হয়ে কলিন ড্রেস নীলফামারীতে খেলবেন। সেই মহেন্দ্রক্ষণ দিন কালই। ফুটবলে নতুন এক ইতিহাস লিখে ফেলবে নীলফামারী।
আকর্ষণ অবশ্যই বিশ্বকাপ তারকা কলিন ড্রেস। তবে আরও কজন বিদেশি তারকা দুই দেশেরই হয়ে মাঠে নামবেন। বসুন্ধরা কিংস এমন সময় ম্যাচটি আয়োজন করতে যাচ্ছে যখন সাফ ব্যর্থতায় ফুটবলে নতুন করে হতাশা নেমে এসেছে। এমন মেগা ম্যাচে ফুটবলার ও দর্শকরা উজ্জীবিত হয়ে উঠবেন। যা শক্তির টনিক হিসেবে কাজ করবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। ফুটবল বাঙালির কতটা যে প্রিয় তার প্রমাণ মিলে বসুন্ধরা কিংসের আগমনে। কিংসের অনুশীলন দেখতেই উপচে পড়া ভিড়। নিউ রেডিয়্যান্টও চলে এসেছে। বসুন্ধরা কিংসের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম মিনহাজের আশা প্রীতি হলেও এই ম্যাচ ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।