শিরোনাম
রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অভিষেকেই বসুন্ধরা কিংসের ইতিহাস

বসুন্ধরা কিংস ৪ : ১ নিউ রেডিয়্যান্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অভিষেকেই বসুন্ধরা কিংসের ইতিহাস

আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মালদ্বীপ নিউ রেডিয়্যান্টের জালে বল পাঠিয়ে উৎসবে মেতেছেন বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। ম্যাচে সবুজরা ৪-১ গোলে জিতে মাঠ ছাড়েন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চমকের পর চমক বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা কিংসের। দেশ সেরা ফুটবল আসর পেশাদার লিগে এখনো তাদের অভিষেক হয়নি। নভেম্বরে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। অথচ তার আগেই ফুটবল উন্নয়নে তারা নানা কর্মসূচি দিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া ফেলে দিয়েছে। সব কিছুতেই নতুনত্বের ছোঁয়া বসুন্ধরা কিংসের। যা আগে কখনো দেখা যায়নি তা করে দেখিয়ে দিচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। পেশাদার লিগে যাত্রার আগে নতুন ইতিহাস গড়ে ফেলল দেশের আলোচিত ক্লাবটি। পেশাদার লিগে মাঠে নামার আগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বপ্নিল অভিষেক হয়ে গেল তাদের। নিজেদের মাঠে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচে মালদ্বীপ চ্যাম্পিয়ন নিউ রেডিয়্যান্টকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন এক ইতিহাস লিখে ফেলল বসুন্ধরা কিংস।

এর আগে বাংলাদেশের কোনো ক্লাব ঘরোয়া আসরে অভিষেকের আগে বিদেশি দলের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেয়নি। বসুন্ধরা কিংসই সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেল। শুধু কি তাই বড় ব্যবধানে জয়ে আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে তাদের অভিষেকটা স্মরণীয় হয়ে থাকল। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই ম্যাচ দেখতে নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল নেমেছিল। বিকাল ৪টায় ম্যাচ হলেও দুপুরের মধ্যেই গ্যালারি ভরে যায়। ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ ঘিরে উপচেপড়া দর্শকের সমাগম ঘটেছিল। শুক্রবারও একই দৃশ্য। এতেই প্রমাণ মিলে নীলফামারীকে হোম ভেন্যু করায় বসুন্ধরা কিংস যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নিউ রেডিয়্যান্ট শুধু মালদ্বীপ চ্যাম্পিয়ন নয়। ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা দল। কিছুদিন আগেও এই ক্লাব এএফসি কাপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া মালদ্বীপ এবার ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বে আসনে বসে যায়। নীলফামারীতে এমন দুর্দান্ত দলের সামনে বসুন্ধরা কিংস পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় জেগেছিল। বাংলাদেশের মান রেখেছে বসুন্ধরা কিংসই।

ঘরের মাঠ বলেই এবার ক্রীড়ামোদীদের প্রত্যাশা ছিল সাফে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। আশা আনন্দের বদলে হতাশাতেই বন্দী থেকে যায়। গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচ জিতলেও গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় বাংলাদেশের। এমন হতাশায় ফুটবলার ও ক্রীড়াপ্রেমীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তখুনি বসুন্ধরা কিংস বাংলাদেশকে এনে দিল বিরল এক সম্মান। সাফ চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের সেরা দল নিউ রেডিয়্যান্টকে হারানোটাই ছিল স্বপ্ন। সেখানে কিনা ৪-১ গোলে জয় কিংসের। প্রীতি হলেও এই ম্যাচের প্রাপ্তি অনেক। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা দল হলেও শেখ কামাল স্টেডিয়ামে রেডিয়্যান্টকে সাধারণ মানের দল মনে হয়েছে। হাজার হাজার দর্শকের সমর্থনে শুরু থেকেই বসুন্ধরা কিংস ছিল উজ্জীবিত। এএফসি কাপে আবাহনীর বিপক্ষে রেডিয়্যান্টের রক্ষণভাগকে মনে হয়েছিল চীনের প্রাচীর। ডি-বক্সে বল নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। শুক্রবার কিংসের পরিকল্পিত আক্রমণে রেডিয়্যান্টের ডিফেন্সে অসহায়ত্বের চেহারা ফুটে উঠেছিল। কোনোভাবেই সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না গতিময় কিংসকে। বিশ্বকাপ তারকা বলেই বাড়তি আগ্রহ ছিল কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিন ড্রেসকে ঘিরে। বসুন্ধরা কিংসের জার্সি চড়িয়ে মাঠে নামার পর তাকে দেখে দর্শকদের সে কী উল্লাস। নীলফামারীতে অভিষেক ম্যাচে ড্যানিয়েল গোল না পেলেও তার পাসিং ও ড্রিবলিং ছিল চোখে পড়ার মতো।

২০ মিনিটেই বসুন্ধরা কিংসকে এগিয়ে রাখেন হাইতির জাতীয় দলে খেলা বিলফোর্ড। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে তিনি জালে বল পাঠালে উৎসবে মেতে উঠে গ্যালারি। এগিয়ে যাওয়ার পরই ম্যাচ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় বসুন্ধরা কিংস। চার মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন অধিনায়ক তৌহিদুল আলম সবুজ। গ্যালারিতে তখন পত পত করে উড়ছে বাংলাদেশ ও কিংসের পতাকা। এদৃশ্য থেকে খেলোয়াড়দের গতি আরও বেড়ে যায়। কিংসের দাপুটে খেলার কাছে রেডিয়্যান্টের আসহায়ত্ব দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো মহল্লার দল।

দুই গোল হজম করার পর ম্যাচে ফেরার সুযোগও পেয়েছিল রেডিয়্যান্ট। পেনাল্টি থেকে অধিনায়ক আলি ফাসির গোল করতে ব্যর্থ হলে ব্যবধান কমানো সম্ভব হয়নি সফরকারী দলের।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই গাম্বিয়ার ওসমান জ্যালো কিংসের পক্ষে তৃতীয় গোলটি করেন। ১০ মিনিট পর ব্যবধান এক হালি পূরণ করেন মাহবুবুর রহমান সুফিল। এরপর কিপসন অযুরী রেডিয়্যান্টের পক্ষে একটি গোল শোধ করলেও কিংসের বড় জয় ঠেকানো যায়নি। এই জয় দিয়ে বসুন্ধরা কিংস শুধু নীলফামারী নয় দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিল। যে রেডিয়্যান্টের বিপক্ষে গোলের বন্যায় ভেসে গিয়ে ছিল ঢাকা আবাহনী। যে মালদ্বীপ কিছুদিন আগে ঢাকায় সাফ জিতেছে। তাদেরই চ্যাম্পিয়ন দলকে উড়িয়ে দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।

ইতিহাস গড়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হলো বসুন্ধরা কিংসের। এতে হতাশায় থাকা বাংলাদেশের ফুটবলাররা মনোবল খুঁজে পাবে। সামনেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলবে জাতীয় দল। কিংসের এই জয় নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা জোগাবে জামালদের। ফুটবল উন্নয়ন ও জাগরণে বসুন্ধরা কিংসের উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে সর্ব মহলে।

সর্বশেষ খবর