বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিই

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মাশরাফি

পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিই

পাকিস্তানকে আজ হারালেই এশিয়া কাপের স্বপ্নের ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু কাজটি যে সহজ নয়, তা ভালো করেই জানেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাস্ট উইন ম্যাচে নামার আগে বিশ্রামে কাটিয়েছেন পুরোটা দিন। গতকাল বিশ্রামের ফাঁকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের লবিতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক আসিফ ইকবালের সঙ্গে নিজের প্রাপ্তি ও এশিয়া কাপ নিয়ে কথা বলেছেন একান্তে—

 

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা কি চ্যালেঞ্জের?

মাশরাফি : ক্রিকেটে সব ম্যাচই চ্যালেঞ্জের। আর বুধবারের ম্যাচটা তো দুই দলের বাঁচা-মরার। যারা জিতবে ফাইনালে চলে যাবে। সুতরাং এ ম্যাচে আলাদা একটা চাপ থাকবে দুই দলের ভেতর।

কী হতে পারে ম্যাচে?

মাশরাফি : বলা কঠিন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান জিততে সেরাটাই দিতে চাইবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজে পেয়েছি। পাকিস্তান শক্তিশালী দল। জিততে হলে আমাদের সেরাটাই দিতে হবে।

আফগানিস্তানকে হারানোর পর উজ্জীবিত?

মাশরাফি : অবশ্যই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে আমাদের কারোই প্রস্তুতি ছিল না। ভারত ম্যাচটি আবার আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল বেশি। ভারতের বিপক্ষে হার অপ্রত্যাশিত ছিল না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মানসিক প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। তাদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে পরিকল্পিত ক্রিকেট খেলেছি। 

ইমরুলের অন্তর্ভুক্তি...

মাশরাফি : দলে একটা কালচার তৈরি করতে চাইছি। যাদের আমরা নিব, তাদের ব্যাক করবো। যাতে কখনোই ভাবতে না পারেন, তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়নি। ইমরুলকে ৬ নম্বরে খেলানোর পরিকল্পনাই ছিল। যেহেতু রশিদ এবং মুজিবকে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ইমরুলের। নিরাপদে থাকার জন্য ইমরুলকে ওখানে পাঠিয়েছি।

অধিনায়কত্ব নিয়ে কি আলাদা কোনো পেপার্স ওয়ার্ক...

মাশরাফি : আমি পেপার্স ওয়ার্কের ওপর বিশ্বাস করি না। মাঠে পরিস্থিতি বুঝে আমি সিদ্ধান্ত নিই। তবে সব সময় যে ঠিক হয়, তা নয়।

শেষ ওভারে মুস্তাফিজকে কি বলেছিলেন?  

মাশরাফি : মুস্তাফিজ আমাকে বলছিল সে কিছুই করতে পারবে না। আমি বলেছি তুই কাটার করতে পারবি তো। সে বলেছে কাটার মারতে পারবো। আর কিছু করতে পারবো না। একটু উনিশ বিশ হলেই আমার লাগতেছে।

৬ বলে ৮ রান। মুস্তাফিজকে বল দেওয়ার সময় আপনি কি ভেবেছিলেন?

মাশরাফি : ১০০ ভাগ আত্মবিশ্বাস ছিল আমার। ওকে বলেছি তুই কাটারটা ঠিক জায়গায় মারিস। আর কিছু ভাবার দরকার নেই। যেহেতু তুই অন্য কোনো বল করবি না, তাহলে নিশ্চিত করবি বলটা যেন ঠিক জায়গায় পড়ে।  

অধিনায়কত্বে ভাগ্যে কতটা বিশ্বাস করেন?

মাশরাফি : অনেকবার বলেছি আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। আমার জীবনটাই ভাগ্যের ওপর দিয়ে। শুধু খেলা নয়, ভাগ্য ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই সম্ভব নয়।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেট...

মাশরাফি : (হাসি) আমি ক্রিকেট খেলি ম্যাচকে কেন্দ্র করে। মাঠে সব সময় সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। শরীর যখন ৫০-৫০ থাকার পরও চেষ্টা করেছি শতভাগ দিতে। ২৫০ উইকেট আমার কাছে ম্যাটার করে না। আবার এটাও ঠিক ২৫০ উইকেট, অবশ্যই আমার জন্য অনেক বড় অর্জন। খেলা শুরুর সময় আমার স্বপ্ন ছিল। এই অর্জন তেমনই একটি।

 কারণ আমার অনেক স্বপ্ন ছিল যখন ক্রিকেট শুরু করি। যেমন এখন তরুণরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে শুরু করে। আমরা যখন তরুণ ছিলাম একরকম স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছি। সেগুলো যখন অর্জন হয়নি। কিন্তু মিলিয়ে দেখলে আবার মনে হয়, মনে একটা শান্তি আছে। কখনো হাল ছাড়িনি। অনেক কঠিন সময় এসেছে। এতকিছুর পর এমন একটা অর্জন অবশ্যই নিজের আনন্দ দেয়।

জুনিয়রদের ভবিষ্যৎ........

মাশরাফি : যদি ব্যাকআপ না করেন তাহলে ভবিষ্যৎ কখনোই ভালো হবে না। ২০ বছর ধরে কখনো ভালো হয়নি। ব্যাকআপ পায়নি বলে। আমরা পাঁচজন ভাগ্যবান, আমি, সাকিব-মুশফিক-রিয়াদ-তামিম  আমরা লম্বা সময় খেলার সুযোগ পেয়েছি। এখানে কেউ সুপারম্যান ছিল না। এসেই ১০০-১৫০ মারছে। প্রত্যাশা এখন এত বেশি তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওদের পারফর্ম করা কঠিন। ওদেরকে একটু মাথা ঠাণ্ডা করতে হবে, ওদেরকে একটু সময় দিতে হবে। একটু ব্যাকআপ করতে হবে। যেমন লিটন, কয়জন আশা করেছে ও শেষ ম্যাচে রান করবে। কিন্তু ৪২ বলে ৪১ করছে। ও যখন বুঝতে পারছে যে, আমার দল আমাকে ব্যাকআপ করছে, আমার প্রতি আস্থা আছে, ও ভাববে আমার প্রতি এত আস্থা রাখছে আমি কেন ভালো করবো না। এমন জিনিস কিন্তু কাজ করে অনেক সময়। আপনার পরিবারেও দেখবেন কারও প্রতি আস্থা রাখবেন, দেখবেন যে আপনার জন্য জীবন দিয়ে দিবে। এসব খেলোয়াড়ের জন্য খুব প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর