মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

১০০ ছাড়িয়ে কৃষ্ণা মারিয়ারা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

১০০ ছাড়িয়ে কৃষ্ণা মারিয়ারা

প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়ার পর খোশ মেজাজে ভুটান শহর ঘুরে বেড়াচ্ছেন নারী ফুটবলাররা —বাফুফে

ফুটবলে এ এক নতুন রেকর্ড বা ইতিহাসই বলা যায়। যা গড়েছেন বাংলাদেশের কিশোরীরা। ১৬ ম্যাচে মেয়েরা ১০৩ গোল করেছেন। যা অবিশ্বাস্যই বলা যায়। বিশ্বে মহিলা ফুটবলে কোনো দেশের এমন গোল উৎসবের নজীর কমই আছে। যারা এই রেকর্ড গড়েছে তা আবার জাতীয় দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশ জুনিয়র লেভেলে ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। ১৫, ১৬ ও ১৮ বয়সী সীমাবদ্ধ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এই বিরল রেকর্ড গড়েছে মারিয়া, কৃষ্ণা, মার্জিয়া, স্বপ্না, আঁখি, শামসুন্নাহাররা।

ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের আগমন বেশিদিনের নয়। ২০০৩ সাল থেকেই প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে অভিষেক হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাঠে নামাটা আরও পরে। ১৫ বছর ধরলেও নারী ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা বিশ্ব রেকর্ডই গড়ে ফেলেছে বলা যায়। কেননা এত স্বল্প সময়ে ১৬ ম্যাচ খেলে কোনো দেশ গোলের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে এই রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কিশোরীরা প্রতি আসরে গোল উৎসবে মাতছে। অথচ পুরুষ ফুটবলে কী করুণ দশা। বয়সভিত্তিক দলগুলো গোল পেলেও জাতীয় দল যেন জাল চিনতেই ভুলেই গেছে। স্বাধীনতার পর পুরুষ জাতীয় দল ১৯৭৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অংশ নিচ্ছে। ৪৫ বছরে একেবারে কম আসরে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ। এত বছরে কত গোল করেছে এই পরিসংখ্যান খুঁজে না পাওয়া গেলেও সেই সংখ্যা হয়তো ১০০ ছাড়িয়ে যায়নি। ছাড়ালেও নিশ্চয় তা মেয়েদের মতো ১৫ বছর খেলে রেকর্ডটি গড়তে পারেনি।

এত কম সময়ে কিশোরীদের ১০০ ছাড়িয়ে যাওয়াটা বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন এক ইতিহাস। নারীরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে ফুটবল খেলা শুরু করেছিল। নারী ফুটবল নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দল আন্দোলনের ডাকও দিয়েছিলেন। তবু দমে যায়নি। অক্লান্ত পরিশ্রম ও জেদ নিয়ে নারী ফুটবলাররা বাংলাদেশকে এখন শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে। পুরুষদের কাছে যা স্বপ্ন হলেও নারীরা তা অল্প দিনের মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে।

সত্যি বলতে কি বাংলাদেশের ফুটবলে আশার বাতিটা জ্বালিয়ে রেখেছে নারীরা। ক্রিকেটে সাকিব, মাশরাফি, তামিমরা মহাতারকা হলেও বাংলাদেশের ফুটবলারদের এখন অনেকেই চেনেন না। এক সময় সালাউদ্দিন নান্নু, মঞ্জু, টুটুল, আসলাম, কায়সার, মুন্না, মহসিন, কাননদের রাস্তায় দেখা মিললেই ভক্তদের ভিড় জমে যেত। এখন মাঠে পুরুষ জাতীয় দলের ফুটবলারদের চিনতে হয় জার্সি নম্বর দেখে। বাংলাদেশের ফুটবলে এমন করুণ পরিণতি হবে কখনো কী কেউ ভেবেছিল।

সাবিনা, মারিয়া, কৃষ্ণা, আঁখিরা রাস্তায় বের হলে হয়তো ভক্তরা ভিড় জমায় না। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে এখন এরাই তারকা বা পরিচিত মুখ। অথচ এক সময় এমনও কথা শোনা গিয়েছিল যারা বলে লাথি মারতে পারে না তারা খেলবে ফুটবল? ফুটবলে ৩০ লাখ শহীদের পাওয়া বাংলাদেশের লাল-সবুজের বিজয় পতাকা উড়াচ্ছে নারীরাই। পুরুষ জাতীয় দল কারোর বিরুদ্ধে খেললে ম্যাচে কী হবে বলা মুশকিল। নারীরা নামলে শুধু আশা থাকে জয়েরই। হয় চ্যাম্পিয়ন কিংবা রানার্সআপ নারী ফুটবলে এটা স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু পুরুষ জাতীয় দলের অসহায়ত্বের চেহারা বার বার ফুটে উঠছে। ১৬ ম্যাচে ১০৩ গোল করাটা কি চাট্টিখানি কথা!

অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ম্যাচে মৌসুমীর নেতৃত্ব দেওয়া কিশোরীরা জয় পাবে এ নিয়ে কারোর সংশয় ছিল না। অপেক্ষায় ছিল শত গোল পূরণ হয় কিনা? ভুটানে এই টুর্নামেন্টে মাঠে নামার আগে ১৫ ম্যাচে বাংলাদেশের গোল ছিল ৮৬টি। সেখানে এক ডাবল ও এক হ্যাটট্রিকসহ বাংলাদেশের নারীরা ১৭ গোল করে। এতেই সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৩। টুর্নামেন্টের এখনো ম্যাচ বাকি আছে মারিয়াদের। আজ নেপাল তারপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেললে তিন ম্যাচ। সুতরাং অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে গোল সংখ্যা কত হয় সেটাই অপেক্ষা।

১০৩ গোলের পরিসংখ্যান শুধু ১৬ ম্যাচের পাঁচ টুর্নামেন্ট ঘিরে। নারী জাতীয় দল বা বয়সভিত্তিক অন্য টুর্নামেন্ট ধরলে গোল সংখ্যা প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি এসে ঠেকবে। ১৬ ম্যাচে ১০৩ গোল। মারিয়ারা হজম করেছে মাত্র ৩টি। অর্থাৎ ১০৩-০৩। ফুটবলে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে।

সর্বশেষ খবর