বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফিলিস্তিনের প্রতিটি নিঃশ্বাসই চ্যালেঞ্জের

রাশেদুর রহমান, সিলেট থেকে

ফিলিস্তিনের প্রতিটি নিঃশ্বাসই চ্যালেঞ্জের

মোহাম্মদ বাসিম

‘তোমাদের অধিনায়ক এসেছেন কী?’ দুপুরের খাবার খেতে রোজ ভিউ হোটেলের লবিতে নেমে এসেছে ফিলিস্তিন দলের সদস্যরা। একজনকে জিজ্ঞেস করতেই দীর্ঘদেহী অধিনায়ক আবদেলতিফ বাহদারিকে দেখিয়ে দিল একজন। সালাম দিয়ে কাছে যেতেই হাত বাড়িয়ে দিল। ইংরেজিতে কথা শুরু হতেই দুই হাত জোর করে ক্ষমা চাইলেন। আরবি ছাড়া কোনো ভাষা জানেন না ৩৪ বছর বয়সী অধিনায়ক। ফিলিস্তিন দলের অনেকেই ইংরেজিটা জানেন না। তাহলে উপায়! অধিনায়ক হাত তুলে দেখিয়ে দিলেন মোহাম্মদ বাসিমকে। তখন খাবারের সময়। খাবারের পর দেখা করার অঙ্গীকার করলেন মোহাম্মদ বাসিম। কিছুক্ষণ পর উদয় দাব্বাঘকে সঙ্গে নিয়ে এলেন তিনি। আলোচনা চলল ফিলিস্তিনের ফুটবল, বর্তমান, অতীত আরও অনেক কিছু নিয়ে। একসময় ফুটবলের সীমানা পেরিয়ে গেল আলোচনা।

উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে বাসিম খেলেন হিলাল আল কুদসে। জাতীয় দলের হয়ে ১৪ ম্যাচে করেছেন ৮ গোল। বাসিমকে একথা জানাতেই বললেন, ‘দেখ ভাই, উইকিপিডিয়া সব সময় সঠিক তথ্য দেয় না। আমি লিগে শাবাব আল বিরাহ দলে খেলি। তবে উদয় আল কুদসে খেলে।’ উদয় দাব্বাঘও মোহাম্মদ বাসিমের বক্তব্য সমর্থন করলেন। ফিলিস্তিনিদের জন্য ফুটবল খেলা কতটা চ্যালেঞ্জিং? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন পরে না। যাদের প্রতিটা নিঃশ্বাসই চ্যালেঞ্জের তাদের জন্য অন্য কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। অস্ত্রের ঝনঝনানি, ট্যাঙ্ক বহরের ছুটে চলার শব্দ, বোমারু বিমানের উড়ে যাওয়া, ধোঁয়া, শব্দ, আরও কত কী! প্রতিদিন এসব দেখতে দেখতেই ফিলিস্তিনিরা জীবন কাটিয়ে দেয়। সেখানে ফুটবলের বিনোদন নেওয়ার সুযোগ কোথায়! সীমান্ত পাড়ি দিতে গেলে ফুটবলার পরিচয় পেলে হামাসের খবরি সন্দেহে আটকে রাখে ইসরায়েলি সৈনিকরা। দুঃসহ বন্দী জীবন কাটাতে হয় তাদেরকে। এসব বাধা পাড়ি দিয়েও জীবনের পথে এগিয়ে চলে ফিলিস্তিনিরা। দুঃসাহসী ওরা জীবনের জয়গান গাইতে পারে লড়াইয়ের ময়দানেও। বহু যুগ ধরে ফিলিস্তিনি ভূমি যুদ্ধের ময়দান হয়ে আছে। এখানে তাই ফুটবলের বিনোদন অনেক অনেক চ্যালেঞ্জিং। তারপরও তাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারে না ইসরায়েলিরা। উন্নতির যেসব সিঁড়িতে চড়ে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছা যায়, সগুলোতেই তাদের পদচারণা।

ফিলিস্তিনিদের পেশাদার লিগের নাম ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক প্রিমিয়ার লিগ। ২০১০-১১ মৌসুম থেকে নিয়মিত এই লিগের আয়োজন করছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তবে তারও অনেক আগে থেকে ফুটবল ফিলিস্তিনের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। মোহাম্মদ বাসিম বললেন, ‘আমরা ফুটবল খেলতে পছন্দ করি। এই খেলাটা আমাদেরকে লড়াই করার মানসিকতা এনে দেয়।’ সব ফিলিস্তিনিই বুঝি এমন লড়াকু মানসিকতার। খুবই রুক্ষ স্বরে কথা বলে ওরা। যেন দুনিয়ার কাউকে তাদের পরোয়া নেই। আর হবেই বা কেন! যে জাতির বাচ্চা-বুড়োরা ট্যাঙ্ক বহরের বিপক্ষে ইট-পাটকেল নিয়ে লড়াইয়ে নেমে যায়, তাদের দুঃসাহস নিয়ে প্রশ্ন তোলাও তো অন্যায়। ফুটবলটাকেও মোহাম্মদ বাসিমরা নিজেদের লড়াইয়েরই একটা অংশ মনে করেন। একদিন বিশ্ব জয় করতে চান তারা ফুটবল খেলে। মুক্তি পেতে চান সব শৃঙ্খল থেকে। ফিলিস্তিনিরা আজ যাত্রা করছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তান। ম্যাচ ঘিরে দুই দলই জয়ের আশা করছে। ফিলিস্তিন ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে আছে। তবে তাজিকিস্তানও খুব একটা পিছিয়ে নেই। তাছাড়া মোহাম্মদ বাসিমের মতোই অনেক তরুণ ফুটবলার নিয়ে এসেছে ফিলিস্তিন। তাজিকিস্তানের মিডফিল্ডার সুলেমানভ শাহরম বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটা ম্যাচই জয়ের জন্য খেলতে নামছি। আশা করি ফিলিস্তিনের বিপক্ষেও ভালো ফুটবল খেলবো।’ অন্যদিকে মোহাম্মদ বাসিমরা জানিয়ে গেলেন, ফিলিস্তিনও প্রস্তুত। দুই দলেরই আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া খাবারের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে পারছেন না। তবে ফুটবলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে তারা মোটেও কসুর করবেন না বলে      জানিয়ে গেলেন তাজিকিস্তান ও ফিলিস্তিনের ফুটবলাররা।

সর্বশেষ খবর