শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গ্রুপ সেরা হতে চায় বাংলাদেশ

রাশেদুর রহমান, সিলেট থেকে

গ্রুপ সেরা হতে চায় বাংলাদেশ

ফিলিপাইনের বিপক্ষে আজ গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নামার আগে শিষ্যদের কৌশল শেখাচ্ছেন বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘আগুন, আগুন’ বলে চেঁচিয়ে উঠল এক পরিচ্ছন্নকর্মী। হোটেল রোজ ভিউর লবিতে হঠাৎ করেই সব নিরবতা ভেঙে গেল। তৎপর হলো সবাই। অগ্নিনির্বাপক অক্সিজেনের জার নিয়ে ছুটে এলেন একজন। ততোক্ষণে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খাবার টেবিলের আশপাশটা। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে এলো। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই এই ধোঁয়ার কুণ্ডলি। ততোক্ষণে বৈদ্যুতিক তার পোড়ার গন্ধও ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।

মাঠে দর্শক আসছে। সিলেটের মানুষ জোর গলায় দাবি করে, এখানে ফুটবলের জনপ্রিয়তা সবার চেয়ে বেশি। এর প্রমাণও তারা দেয়। বাংলাদেশের ম্যাচ হলে তো কথাই নেই, অন্যান্য দলের খেলাতেও দর্শক সমাগম হয় গ্যালারিতে। হয়ত উপচে পড়ে না, তবে গ্যালারি শূন্যও থাকে না। আজ আবার মাঠে নামবে বাংলাদেশ। টিকিটের সংকট তো আছেই। একদল কলেজের ছাত্রের সঙ্গে রাস্তায় দেখা। পরিচয় পেয়ে ফুটবল নিয়ে নানান কথা বলল। বাংলাদেশের খেলায় হাজির হয়ে দলকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানাল। সিলেটের এমন আগ্রহ-উদ্দীপনায় অভিভূত বাংলাদেশের ফুটবলাররাও জয়ের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরও আজ ফিলিপাইনের বিপক্ষে ম্যাচে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নামছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। জয়টা চাই-ই।

লাওসের বিপক্ষে ফিলিপাইনের জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের। কিন্তু এই নিশ্চয়তার প্রভাব খেলায় পড়ুক, চায় না বাংলাদেশের কেউই। গতকাল বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুশীলন করতে এসে অধিনায়ক জামাল ভূইয়া বলে গেলেন, ‘আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলব। প্রতিপক্ষ যেই হোক, আমাদের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।’ কোচ জেমি ডে বললেন অনেক কথা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে তার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলতে বলতে তার কণ্ঠে ফুটে উঠে পরম আত্মবিশ্বাস। এই দল অনেক দূর যেতে পারবে। কোচের কণ্ঠে এমন বিশ্বাসের সুর খুব কমই শোনা যায় বাংলাদেশের ফুটবলে। ‘এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টে আমার ছেলেরা খুব ভালো খেলা উপহার দিয়েছে। উন্নতির যে ধারাবাহিকতা তারা দেখাতে চাচ্ছে, তা সত্যিই অসাধারণ।’ কোচ জেমি ডে বলতে গেলে একটা নতুন দল গড়ে তুলেছেন। পুরনোদের মধ্যে এখন টিকে আছেন কেবল মামুনুল-জামালদের মতো হাতে গোনা কয়েকজন। তরুণ দলটার উপর দিনে দিনে আস্থা কেবল বেড়েই চলেছে কোচের। গতকাল টিম হোটেলের লবিতে বসে বললেন, ‘এই টুর্নামেন্টটা খুবই কঠিন। এখানে প্রতিপক্ষদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। শারীরিক দিক থেকে ওরা অনেক শক্তিশালী। এই একটা দিকে আমরা অনেক পিছিয়ে।’ তারপরও কোচ জেমি ডে’র শিষ্যরা ম্যাচের পুরোটা সময় নিজেদের উজাড় করে খেলতে পারে। সত্তর মিনিট খেলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে না। এখনো অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। কোচ জেমি বলেন, ‘যে কোনো সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের জন্য অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। আসলে হুট করেই কোনো সমস্যা মিটে যায় না। আমরা কাজ করে চলেছি।’ সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, এখনকার দলটার মধ্যে লড়াকু একটা মানসিকতা এসেছে। হার না মানার এই অনুভূতিটা খুব দরকার ছিল।

প্রতিপক্ষ ফিলিপাইন। অনলাইনে অনুসন্ধানে জানা গেল, আগেও এই দলের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। দুবারের সাক্ষাতে বাংলাদেশ একবার জিতেছে। একবার হেরেছে। জয়টা এসেছে বেশ আগে। ১৯৮৪ সালের আগস্টে। সেসব ইতিহাস ঘেঁটে আসলে খুব একটা লাভ নেই। এখন নতুন পরিবেশ। নতুন করে ফুটবলকে রপ্ত করছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে এশিয়ান ফুটবলে ধীরে ধীরে শক্তিশালী দল হয়ে উঠছে ফিলিপাইন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা ১১৪ নম্বরে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে এসেছে ফিলিপাইন। এই দলের পক্ষে বাংলাদেশ জয়ের আশা করতেই পারে। বাংলাদেশ দল অবশ্য চাপমুক্ত থেকে খেলতে চায়। এর একটা প্রমাণ পাওয়া গেল কোচের বক্তব্যে। দলে পরিবর্তন যে আসছে তা মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। কোচ বললেন, ‘পরিবর্তন হবে। তবে কয়টা তা আমি এখনই বলতে রাজি না। একটিও হতে পারে, পাঁচটিও হতে পারে।’ আজ একাদশে থাকতে পারেন ইমন বাবু। পাঁচটা হলুদ কার্ড আছে দলে। এই কার্ডগুলো উঠে যাওয়ার জন্য বদলি হিসেবে বেশ কয়েকজনকে মাঠে নামাতে পারেন কোচ। তবে দল যাই হোক, বাংলাদেশ যে জয়ের দৃঢ় লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে সেমিফাইনালে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়া যাবে, এই সত্যটা সবার মধ্যেই কাজ করছে। নাবিব নেওয়াজ জীবন তো বলেই গেলেন, ‘সেমিফাইনালে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়ার জন্য আমাদের জয়টা খুব প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর