শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গোল মিসের খেসারতে হার

রাশেদুর রহমান, সিলেট থেকে

গোল মিসের খেসারতে হার

মিছিলের পর মিছিল আসছে। সবার কণ্ঠ চিরে বের হচ্ছে কেবল ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনি। ম্যাচ শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টা আগেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের চারপাশ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়ে। তবে দর্শকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের। কাউন্টারে হাজার হাজার দর্শক টিকিট না পেয়ে স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে আক্রোশে ফুঁসছিলেন। অনেকে টিকিট হাতে নিয়েও প্রবেশাধিকার পাননি। বার বার মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল, টিকিটের দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু দ্বিগুণ টাকা দিলেই কি আর ম্যাচ না দেখার আফসোস মেটে! ম্যাচ চলাকালীনও তাই দর্শক স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেন হাজারে-হাজারে। তবে দর্শকদের এমন উৎসাহ-উদ্দীপনার মূল্য দিতে পারল না লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ১-০ গোলে পরাজয়ের হতাশা নিয়েই বাড়ি ফেরে দর্শকরা।

ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রথমে বাংলাদেশই পেয়েছিল। দারুণ একটা সুযোগ হারান নাবিব নেওয়াজ জীবন। চতুর্থ মিনিটে রহমানের থ্রো থেকে বল পেয়ে তপুর হেড। বাঁ দিকে পাখির মতো লাফিয়ে সেভ করেন ফিলিপাইনের গোলরক্ষক মাইকেল। দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেও একটা সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। ৫০ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন জীবন। মাঝ মাঠ থেকে ড্রিবলিং করে বিপজ্জনকভাবে ফিলিপাইনের ডি বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষটায় শটই নিতে পারেননি। ৭০ মিনিটে সবুজের বাতাসে ভাসানো পাসে বল পেয়ে হেড করেছিলেন জীবন। কিন্তু তার লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড গোলবারের বাইরে দিয়েই বেরিয়ে যায়। ৮৫ মিনিটে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ক্রসে বল পেয়ে হেড করেছিলেন জাবেদ খান। বল সরাসরি চলে যায় গোলরক্ষকের হাতে। এবারও ব্যর্থ বাংলাদেশ। অতিরিক্ত মিনিটেও দারুণ একটা সুযোগ হারান জীবন ও মতিন। ম্যাচের শেষ কর্নার থেকে গোল করার দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিলেন তারা। এবারও ফিলিপাইনের গোলরক্ষক বীরত্ব দেখিয়ে বাংলাদেশকে রুখে দেন।

বাংলাদেশ বার বার এমন ভুল করলেও ফিলিপাইন গোল বের করে নিতে খুব একটা দেরি করেনি। জয়ের রসদ তারা সংগ্রহ করে প্রথমার্ধেই। ম্যাচের ২৪ মিনিটে বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে কাউন্টার আক্রমণ থেকে ফিলিপাইনের ড্যানিয়েলস গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। পাস ছিল ফিলিপাইনের অধিনায়ক বাহাদুরানের। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রাখে তারা। বাংলাদেশের গ্যালারিপূর্ণ দর্শকদের চাপ উপেক্ষা করে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ফিলিপাইন। তবে দর্শকদের সমর্থনটা কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশ। দলে চারটা পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ জেমি ডে। সেমিফাইনালের আগে দলটাকে পরীক্ষা করে নিতে চাইছিলেন। কিন্তু তার নেওয়া পরীক্ষায় পাস করতে পারলেন না সবুজরা। সুফিল-জামালদের নিয়ে গড়া দলটাই ছিল সেরা। গতকালের দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা চোখে পড়েছে পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব। বেশির ভাগ সময়ই দ্রুত পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতস্তত করতে দেখা গেছে। এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলেই গোল পায়নি বাংলাদেশ। বার বারই ফিলিপাইনের আক্রমণভাগে ছুটে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন জীবন-সবুজরা। শেষ মুহূর্তে খেই হারিয়ে ফেলায় জয় বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ দলের কোচ জেমি ডে বলেন, ‘আমার ছেলেরা অনেক ভালো খেলেছে। তাদের আক্রমণগুলো নিশ্চয়ই আপনাদের চোখে পড়েছে। তবে দুর্ভাগ্য আমাদের। আমরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি।’ সেমিফাইনালে এমন ভুলের কোনো ক্ষমা হবে না। এটা কোচ জেমি ডের ভালোই জানা আছে। দেখা যাক, সেমিফাইনালে বাংলাদেশ নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করতে পারে কি না!

এই জয়ে ফিলিপাইন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল। ৯ অক্টোবর তারা এ গ্রুপের রানার্স আপের মুখোমুখি হবে কক্সবাজারে। অন্য সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ১০ অক্টোবর একই মাঠে মুখোমুখি হবে এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলের। আজ নেপালের সঙ্গে ড্র করলেও এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হবে ফিলিস্তিন। সেক্ষেত্রে সেমিফাইনালে ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর