রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এক বছরে তিন ফাইনাল মারিয়াদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এক বছরে তিন ফাইনাল মারিয়াদের

ভুটানের থিম্পু শহরে হাস্যোজ্জ্বল মারিয়া, কৃষ্ণা, তহুরারা। আজ নেপালের বিপক্ষে ফাইনাল শেষে এ হাসি কি ধরে রাখতে পারবেন তারা —বাফুফে

এক বছরে তিন ফাইনাল। পুরুষ জাতীয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ শেষ ফাইনাল খেলেছিল ২০০৬ সালে। অবশ্য ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলে ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশের যুবারা। সিলেটে অনুষ্ঠিত এই আসরে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন কিশোররা। ২০১৭ সালে আবার রানার্সআপও হয় বাংলাদেশ। নারী ফুটবলে বয়সভিত্তিক সাফ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ আজ ফাইনাল খেলবে। ভুটানের চাংলিমিথান স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশর প্রতিপক্ষ নেপাল।

টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ-ভারত ছিল ফেবারিট দল। ধারণা ছিল ফাইনালে দুই দেশই মুখোমুখি হবে। মারিয়া, মৌসুমীরা সেমিফাইনালে প্রত্যাশিতভাবে ভুটানকে ৪-০ গোলে হারালেও ভারত পারেনি। টাইব্রেকারে নেপালের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায়। নারী ফুটবলে বর্তমান শক্তির বিচারে একে অঘটনই বলা যায়। ২০১৭ সালে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলে ভারতের বিপক্ষে। ১-০ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হন মারিয়া আঁখিরা। এই বছর আগস্টে থিম্পুতে আবার মাঠে গড়ায় একই টুর্নামেন্ট। প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসালেও ফাইনালে ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়।

আজ আবার অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ ফাইনাল। প্রতিপক্ষ নেপাল বলেই অনেকের আশা কিশোরীরা দেশকে আরও একটি ট্রফি উপহার দেবেন। ভারত সেমিফাইনালে হেরে গেলেও এই নেপালকেই গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ২-১ গোলে পরাজিত করেছিল। অনূর্ধ্ব-১৭ সাফেও দুই আসরে মারিয়ারা শোচনীয়ভাবে হারিয়েছিল পাহাড়ি দেশ নেপালকে। আত্মবিশ্বাসী কিশোরীরা ট্রফি ছাড়া কিছুই ভাবছে না। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বললেন, লক্ষ্য আমাদের একটাই শিরোপা। তবে নেপালকে কোনোভাবে হালকা করে দেখার উপায় নেই। ফাইনালে কেউ ফেবারিট নয়। তাছাড়া সেমিফাইনালে ভারতকে হারানোয় নেপালও আত্মবিশ্বাসী। সুতরাং লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। অধিনায়ক মৌসুমী বলেন, ফাইনালে প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবাটা বোকামি হবে। যোগ্যতা প্রদর্শন করেই নেপাল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলছে। ওরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন না হলেও টুর্নামেন্টে ভালোই খেলেছে। পাকিস্তানকে আমরা ১৭-০ গোলে হারিয়েছি। নেপাল ১২-০ গোলে। আমাদের সঙ্গে ব্যবধান ছিল ২-১। তাছাড়া যারা ভারতের মতো দলকে সেমিতে পরাজিত করেছে। তাদেরকে দুর্বল ভাবাটা কী ঠিক হবে? ওরা ট্রফি জিততে মরিয়া হয়ে লড়বে। আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে। সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। শিরোপা পেতে হলে নির্ধারিত সময়েই আমাদের জিততে হবে। তা না হলে যে কোনো ফলই হতে পারে। ফাইনালে বাংলাদেশকে সতর্ক হয়েই খেলতে হবে।

অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে মারিয়াদের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। পাকিস্তানকে ১৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয়। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফেও ১৪-০ গোলে হারায়। নেপালকে ২-১ ও সেমিফাইনালে স্বাগতিক ভুটানের বিপক্ষে ব্যবধান ছিল ৪-০। সিরাত জাহান স্বপ্না প্রথম ম্যাচেই ডাবল হ্যাটট্রিকসহ ৭ গোল করেন। নেপালের বিপক্ষে দেন ১ গোল। ৮ গোল দিয়ে তিনিই এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা। নেপালের বিপক্ষে মাংসপেশীতে টান পড়ে স্বপ্নার। আজ তার মাঠে নামার কথা থাকলেও ইনজুরি নিয়ে কতটা জ্বলে উঠতে পারবেন সেটাই দেখার বিষয়।

স্বপ্না খেললে আক্রমণভাগের চেহারা পাল্টে যাবে। না খেললেও বাংলাদেশ খুব যে চাপে থাকবে তাও বলা যাবে না। কেননা গোল করার আরও খেলোয়াড় রয়েছেন। কৃষ্ণা, শামসুন্নাহার, সানজিদা, আঁখি, মৌসুমী যদি নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেন তাহলে নির্ধারিত সময়ে জয়ের আশা করা যেতেই পারে। এক বছরে তিন ফাইনাল খেলছেন কিশোরীরা। ফুটবলে এ এক নতুন রেকর্ডই বলা যায়। সাফে জাতীয় দল গত চার আসরে সেমিতে নেই। এবার ঘরের মাঠেও ব্যর্থ। সেখানে নারীদের ফাইনাল খেলাটা মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

হয় শিরোপা। না হয় রানার্সআপ। নারীদের ফুটবল এখন এই সাফল্যে বন্দী। আগস্টে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৭ ট্রফি ধরে রাখতে না পারলেও ভেঙে পড়েননি মারিয়ারা। ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি কাপ বাছাই পর্বে ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নিয়েছে। স্বপ্ন আবারও চূড়ান্ত পর্বে খেলা। কী দুর্দান্ত পারফরম্যান্স কিশোরীদের। অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে পাকিস্তানকে ১৭ গোলে বিধ্বস্ত করে ১৬ ম্যাচে গোল পেয়েছে ১০৩টি। যা বিশ্ব ফুটবলেও নতুন ইতিহাস। ১৮ ম্যাচে মারিয়াদের গোল সংখ্যা এখন ১০৯। বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ৪ গোল। ফুটবলে নারীরা অল্প সময়ে মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে গেছেন।

সব কিছুই অনুকূলে মৌসুমী, মারিয়াদের। তারপরও ফাইনাল বলে যত কথা। এক সময়ে এই নেপালেরই কাছে পাত্তা পেত না বাংলাদেশ। এখন ঠিক তার উল্টো দৃশ্য। তবু আত্মতুষ্টিতে নেই কিশোরীরা। ফাইনালে সতর্ক হয়েই আজ তারা মাঠে নামবে। দেশ চেয়ে থাকবে তাদেরই দিকে।

সর্বশেষ খবর