সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এ যেন সোনালি দিনের প্রতিচ্ছবি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এ যেন সোনালি দিনের প্রতিচ্ছবি

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জাতীয় দলের ফুটবলাররা —বাফুফে

অনেক দিন পর জাতীয় দলের ফুটবলাররা প্রশংসিত হলেন। অথচ জয় নয়, হেরেই মাঠ ছেড়ে ছিলেন জীবন, জামালরা। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকায় ফুটবলারদের নিয়ে শুধু তিরস্কারের ঝড় বয়ে যেত। তারই ব্যতিক্রম ঘটল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। শুক্রবার সিলেটে বাংলাদেশ গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ফিলিপাইনের বিপক্ষে। অনেকের ধারণা ছিল ফিলিপাইন সহজ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বে। জিতেছে তারাই। কিন্তু জামাল, জীবন, জনি, মতিন মিঞাদের পারফরম্যান্স দেখে দর্শকরা অভিভূত। ০-১ গোলে জিতে ফিলিপাইন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু ম্যাচের পারফরম্যান্স বিচার করলে বাংলাদেশেরই সেদিন জয় পাওয়া উচিত ছিল। বলা যায় খেলল বাংলাদেশ জিতল ফিলিপাইন।

জাতীয় দলের পুরুষ ফুটবলাররা কবে প্রশংসায় ভেসেছিলেন তা স্মরণ করা মুশকিল। তবে এতটুকু মনে পড়ে ২০১৩ সালে ঢাকায় পাকিস্তানকে ৩-০ গোলে হারানোর পর প্রশংসিত হয়েছিলেন এমিলিরা। এবার ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচে ভুটান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবু সেভাবে প্রশংসিত হয়নি দল। ম্যাচ জয়ের পরও মামুনুল, জামালদের সমালোচনা সহ্য করতে হয়। সেখানে হারের পর দর্শকরা হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাবে তা কী ভাবা যায়!

কথা হচ্ছে ফিলিপাইনের বিপক্ষে কী এমন ম্যাজিক প্রদর্শন করল যে, হারের পরও ফুটবলাররা বাহবা পাচ্ছে। ফুটবল নিয়ে কোনো উদাহরণ টানলে ৭০ বা ৮০ দশকের কথা স্মরণ করা হয়। সেসময়েও বড় কোনো ট্রফি জেতার কৃতিত্ব ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু ফুটবলের সোনালি অধ্যায় বলতে ৭০ কিংবা ৮০ দশককেই বোঝানো হয়। তখন গ্যালারি ভরা দর্শক ছিল। মাঠে খেলোয়াড়দের গতি দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যেতেন।  যদি বলা হয় শুক্রবার সিলেটে জীবনরা ফুটবলে নতুন জীবন দেন তা কী বাড়িয়ে বলা হবে? ম্যাচটি ঢাকার বাইরে ছিল বলে ৭০ বা ৮০ দশকের অনেক দর্শকই গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশ-ফিলিপাইনের লড়াই দেখতে পারেনি। টিভিতেও যদি কেউ দেখে থাকেন নিশ্চয় আফসোসে ছটফট করেছেন। সত্যি বলতে কী বাংলাদেশের ফুটবল এখন শুধুই আক্ষেপে ভরা। সেদিন কিন্তু আক্ষেপের বদলে অনেক ফুটবলপ্রেমী আফসোসে চোখের পানি ফেলেছেন। খেলল বাংলাদেশ জিতল প্রতিপক্ষরা। ৭০ ও ৮০ দশকে এই ধরনের অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। কিন্তু এক ম্যাচের স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় সাফ গেমস ফুটবল ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি হয়। ম্যাচে আসলামের গোলে বাংলাদেশ এগিয়েও গিয়েছিল। পরে ভারত তা শোধ করে দেয়। একতরফা ম্যাচে বাংলাদেশ গতিময় খেলায় যে সুযোগ পেয়েছিল তাতে নির্ধারিত সময়ে বড় ব্যবধানে আসলামরা সোনা জিততে পারতেন। অথচ শেষ পর্যন্ত কি না টাইব্রেকারে সোনা জিতে নেয় ভারত।

ফিলিপাইনের বিপক্ষে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলা যায়। যদিও নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ হেরে গেছে। গোলটাও হজম করতে হয়েছে ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের ভুলে। এরপরও বাংলাদেশ বড় ব্যবধানেই জিততে পারত। শুরু থেকেই আক্রমণ করে ফিলিপাইনকে দিশাহারা করে রাখে। এখনকার ফুটবলারদের দম নেই বলে অনেকে অভিযোগ তোলেন। মাঠেও প্রমাণ মিলে তার। ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে ৬০ মিনিটেই ক্লান্ত হয়ে যায় সবাই। শুক্রবার দেখা গেল ব্যতিক্রমী দৃশ্য। জয়ের লক্ষ্যে শুরু থেকে গতিময় খেলা খেলেছেন জীবন, জনি, সবুজ, বিপলু, রবিউলরা। কমপক্ষে নিশ্চিত ৫/৬টা গোলের সুযোগ হাত ছাড়া করেছেন তারা। টোকা বা হেড করলেই বল ফিলিপাইনের জালে জড়ায়। অথচ তা পারেনি তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ। দর্শকরা ভেবেছিলেন যে কোনো সময়ে গোল হয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। এমন গতিময় খেলা বাংলাদেশ গত ১৫ বছর খেলেছে কি না সংশয় রয়েছে। রবিউল, জীবনদের দেখে মনে হচ্ছিল আসলাম, সালাম মুর্শেদী, বাদল রায়, আলফাজ, নকিবরা মাঠে দৌড়াচ্ছেন। অনেক দিন পর প্রশংসা পাওয়ার মতো এক ম্যাচ খেললেন ফুটবলাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হারের আফসোসে পুড়েছে।

কোচ জেমি ডে চেয়েছিলেন ফিলিপাইনকে হারাতে। তা হলে সেমিফাইনালে সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়া যাবে। কক্সবাজারে ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলবে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে অনেকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফিলিস্তিনকেই এগিয়ে রাখছেন। তা হলে কী সেমিতেই জামালদের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে? প্রতিপক্ষ হিসেবে ফিলিস্তিন অবশ্যই শক্তিশালী। কিন্তু ফিলিপাইনের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে পারফরম্যান্স শো করেছে তা ধরে রাখতে পারলে ফাইনালের আশা করা যায়। আসলে ফিলিস্তিনকে যতটা ভয়ঙ্কর মনে হয়েছিল তা কিন্তু মাঠে দেখা যায়নি। নেপালের বিপক্ষে তারা ঘাম ঝরানো জয় পেয়েছে। বাংলাদেশ বরং দুই ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছে। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে সেমিতে জয় আশা করা যেতেই পারে। একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে জেমি ডে দায়িত্ব নেওয়ার পর ফুটবলের চেহারাও বদলাতে শুরু করেছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যর্থতার পরও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জামালরা দারুণ খেলছে। বাফুফের উচিত হবে হুট করে কোচ পরিবর্তন না করে জেমিকে রেখেই নতুন চিন্তাভাবনা করা। কারণ ফুটবলও জ্বলে উঠতে পারে তার প্রমাণ অন্তত মিলেছে সিলেটে।

সর্বশেষ খবর