সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আবারও লাল-সবুজের বিজয় উৎসব

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আবারও লাল-সবুজের বিজয় উৎসব

এক বছরে তিন ফাইনালে দুই শিরোপা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এমন সাফল্য স্বপ্নই বলা যায়। বিশেষ করে ফুটবলে তা ভাবাই যায় না। অথচ ফুটবলের মাধ্যমে এক বছরে তিন ফাইনালে দুই শিরোপার স্বপ্ন পূরণ হলো। যা আবার করে দেখাল নারী ফুটবলাররা। গতকাল সন্ধ্যায় অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নেপাল। ভুটানে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে মাছুরা, মৌসুমী, মারিয়া, কৃষ্ণা, স্বপ্নারাই ছিলেন ফেবারিট। এই নেপালকেই ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লড়াইটা ফাইনাল বলেই ফুটবলপ্রেমীরা টেনশনে ছিলেন। কেননা গ্রুপ পর্বে যাই হোক না কেন নেপাল ফাইনালে জায়গা করে নেয় আরেক ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে।

নারী সাফ ফুটবলে যে কোনো আসরে বাংলাদেশ-ভারতের ফাইনাল খেলাটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ধরে নেওয়া হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও দুই দল ফের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে। সেখানে ভারত হেরে যাওয়ায় নেপালকে কী আর খাটো করে দেখা যায়? তাছাড়া টুর্নামেন্টে তারাও তো দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারায় ১২-০ গোলে। বাংলাদেশের কাছে হারলেও লড়াই করেছেন নেপালি  মেয়েরা। সব ভয়কে জয় করে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘ফাইনালে কেউ ফেবারিট নয়। ম্যাচে যে কোনো ফল হতে পারে। ট্রফি জিততে হলে আমাদের সেরাটাই দিতে হবে। আমার বিশ্বাস মেয়েরা জানপ্রাণ দিয়ে লড়বে। ছোটনের শিষ্যরা তাই করেছেন। ফাইনালে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ফুটবলে আবারও বাংলাদেশকে বিজয়ের উৎসবে মাতিয়েছেন মারিয়ারা।

নারী সাফ ফুটবলে এক বছরে তিন ফাইনালে দুই শিরোপা বাংলাদেশের। গত বছর ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারতকে হারায় মারিয়া, আঁখিরা। চলতি বছর আগস্টে একই টুর্নামেন্টে ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় অনূর্ধ্ব-১৫ দল। দুই মাস পর সেই ভুটানেই অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে ফাইনাল খেলল মৌসুমীর নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ। নেপালকে হারিয়ে নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করল বাংলার কিশোরীরা। এক বছরে তিন ফাইনালে দুই শিরোপা। ১৯ ম্যাচে ১১০ গোল করল কিশোরীরা। এ এক বিরল রেকর্ড বা ইতিহাস বলা যায়।

সাফ চ্যাম্পিয়শিপে বাংলাদেশের পুরুষ জাতীয় দল গত চার আসরে সেমিফাইনালই খেলতে পারেনি। এবার ঘরের মাঠেও ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ঘুরে ফিরে নারীরাই সাফল্য দেখাচ্ছে। হয় চ্যাম্পিয়ন না হয় রানার্সআপ। নারী ফুটবলে এই প্রাপ্তিই এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে মেয়েরা ফুটবলে ঠিকমতো লাথি মারতে পারবে কিনা সংশয় ছিল তারাই কিনা একের পর এক দেশকে ট্রফি উপহার দিচ্ছে। ফুটবলে যত প্রশংসা এখন মারিয়া, স্বপ্নাদের ঘিরেই।

ভুটানে যাওয়ার আগে অধিনায়ক মৌসুমী, সহ-অধিনায়ক মারিয়া দৃঢ় কণ্ঠে বলে যান লক্ষ্য আমাদের একটাই শিরোপা। যেমন কথা, তেমন কাজ। আরও একটা স্বপ্নের ট্রফি জিতে স্বপ্ন পূরণ করল নারী ফুটবল দল। ছোটনের যোগ্য শিষ্যরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পুরুষরা যতটা পিছিয়েছে তার চেয়ে অনেক দূর এগিয়েছে নারীরা। অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে নিজেদের মনোবলও বাড়িয়ে নেয় মারিয়ারা। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্বে তারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নেয়। ভুটানের টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচেই মৌসুমীরা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেয় ১৭-০ গোলে। এ ছিল অন্য রকম এক প্রতিশোধ। ১৯৭৮ সালে এশিয়ান গেমস হকিতে বাংলাদেশ ০-১৭ গোলে হারে পাকিস্তানের কাছে। যা ছিল পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের যে কোনো খেলায় বড় বিপর্যয়। সেই হকির প্রতিশোধটা নিয়ে লজ্জা দূর করল নারী ফুটবলাররা।

ভুটানে ফাইনাল হলেও গতকাল ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ। ভরসা থাকলেও ভয় ছিল নেপাল আবার কিছু করে ফেলবে কিনা। কারণ তারা ফাইনালে এসেছে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে। আরও একটা ভয় কাজ করছিল পুরুষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে ঘিরে। নেপালের কাছে হেরেই জামালরা সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি। সত্যি বলতে কী গতকাল ফাইনালে নেপালও জ্বলে উঠেছিল। তবুও সব ভয়কে জয় করে লাল-সবুজের পতাকা উড়াল মারিয়ারা। এই বিজয় হয়তো অনুপ্রাণিত করবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলা পুরুষ জাতীয় দলকে। সামনেই তাদের ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াই। মেয়েদের শিরোপা আর পুরুষরা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফাইনাল খেললে মরা ফুটবলে প্রাণও ফিরে আসতে পারে। অনূর্ধ্ব-১৮ শিরোপা জেতায় বাংলাদেশ নারী দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর