বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

রাশেদুর রহমান

বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

সেমিফাইনালে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ফেবারিট ফিলিস্তিন। মাঠে নামার আগে গতকাল নিজেদের শেষ প্রস্তুতিটা সেরে নিচ্ছেন জাতীয় দলের ফুটবলাররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। একই বছরে বেশ কয়েকটা ট্রফি তারা ঘরে তুলেছে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায়। অন্যদিকে দীর্ঘদিন হয়ে গেল, ছেলেরা কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালই খেলতে পারছে না। এই দূরবস্থা দূর করার শপথ নিয়েই যেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলতে নেমেছিলেন জামাল ভুইয়ারা। কোচ জেমি ডে কোনো কথা না দিলেও তার স্বপ্ন ছিল ফাইনাল খেলা। আকারে-ইঙ্গিতে তিনি বার বার একথা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। আজ সেই স্বপ্নপূরণের দিন। কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে ফিলিস্তিনকে হারিয়ে সেই স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন কি জামাল ভুইয়ারা! তবে এই স্বপ্নপূরণের পথে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে আজ কঠিন বাধাই অতিক্রম করতে হবে বাংলাদেশকে। শক্তিশালী ফিলিস্তিনিরা তো আছেই। পাশাপাশি আছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপও। স্বপ্ন অনেক বড়। কিন্তু বাস্তবতাও তো স্বীকার করতে হবে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০০ নম্বরে থাকা ফিলিস্তিন সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা নেই অধিনায়ক জামাল ভুইয়ার। গতকাল তিনি টিম হোটেলে বলেছেন, ‘আমরা স্বাগতিক হলেও ওরা আমাদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিং এবং শক্তিতে অনেক এগিয়ে।’ তবে চেষ্টার কোনো কমতি নেই দলের মধ্যে। শিষ্যদের সামনে উদাহরণ স্থাপন করেছেন ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। সোমবার বুকে ব্যথা অনুভব করায় হাসপাতালে ছিলেন কোচ। ইসিজিতে সামান্য ব্যতিক্রম ধরা পড়েছিল। বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। যে কোনো ধরনের উত্তেজনা কোচ জেমি ডে’র স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিন্তু বিশ্রামের কথা ভুলে তিনি অনুশীলনে শিষ্যদের সময় দিলেন। শরীরের চেয়েও গুরুত্ব দিলেন কর্তব্যকে। জেমি ডে বললেন, ‘চিকিৎসক একটু বিশ্রাম নিতে বলেছেন। তবে এখন সেই সময় কোথায় বলুন। এখন বেশ সুস্থ বোধ করছি। সমস্যা নেই।’ প্রস্তুতি সম্পর্কে কোচ বললেন, ‘আমরা সবাই ফাইনাল খেলতে চাই। ফাইনাল খেলতে হলে আগের দুই ম্যাচের চেয়ে ভালো খেলতে হবে।’

ফিলিপাইনের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছিল বাংলাদেশ। কোচ জেমি ডে দারুণ প্রশংসা করেছিলেন দলের। ফিলিপাইনের বিপক্ষে জয় না পেলেও দারুণ খেলে দর্শকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। তবে ফাইনাল খেলতে হলে আগের দুই ম্যাচের চেয়েও ভালো খেলতে হবে বাংলাদেশকে। কোচ জেমি ডে বলেন, ‘ফাইনাল খেলতে হলে আগের দুই ম্যাচের চেয়ে ভালো ফুটবল খেলতে হবে।’ বাংলাদেশের মূল সমস্যা গোল করতে না পারা। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিন কাজ। গোলের জন্য এসব খুব প্রয়োজন। কোচ বলেন, ‘গোল টেকনিকের বিষয়। পজিশন সেন্স, প্লেসমেন্ট, পাওয়ার। সবকিছুর সমন্বয়ে গোল হয়। আর আমাদের ছেলেরা এমন সমন্বয় খুব কমই করতে পারে।’ দুর্বলতা আছে। তবে শিষ্যদের উপর আস্থাও রাখছেন কোচ জেমি ডে।

বাংলাদেশের মতো এতকিছু ভাবছে না ফিলিস্তিনিরা। মূলত এশিয়া কাপের প্রস্তুতি নিতেই এখানে এসেছে তারা। ফাইনাল খেলতে পারবে কি না, এই নিয়ে তেমন একটা চিন্তা নেই তাদের। ফিলিস্তিনি কোচ নুরউদ্দিন বললেন, ‘আমাদের দল গঠনই মূল উদ্দেশ্য। ফাইনাল খেলা কিংবা চ্যাম্পিয়ন হওয়া মুখ্য বিষয় নয়।’ এর অর্থই হলো, ফিলিস্তিনিরা নির্ভার হয়েই খেলবে।

বাংলাদেশ শেষ কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে ২০১৫ সালে। সেবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে নেপালের কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে সাফ গেমসে সোনা জয়ের পর আর কোনো টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশের ছেলেরা। দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। দর্শকরা ছুটে আসছেন গ্যালারিতে। বাংলাদেশের ফুটবলও এখন দর্শকদের মাঠে টানার শক্তি রাখে। এ অবস্থায় ফুটবলারদের কাছে দাবি অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু ফাইনাল খেলার স্বপ্নপূরণ হবে কি না বলা কঠিন। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। দুবার হেরেছে। একবার ড্র করেছে। অতীতের এই পরিসংখ্যানও তো ফিলিস্তিনের পক্ষেই। তবে নিজ দেশের মাটিতে সমর্থকদের সামনে জীবনরা নিশ্চয়ই সেরা খেলাটাই খেলবেন!

সর্বশেষ খবর