গত প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। তারও আগে থেকেই দর্শকরা দেশীয় ফুটবলের উপর সব উৎসাহ হারিয়েছিল। মূলত নতুন শতকে বাংলাদেশের ফুটবল পুরনো গৌরবের নিচে চাপা পড়েছিল। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কসরত চলছিল। অবশেষে কোচ জেমি ডে এসে অনেকটা বদলে দিলেন চিত্র। পূর্ণ শক্তিতে নব্বই মিনিট খেলার যোগ্যতা অর্জন করল দল। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করার পরিবর্তে গোল করে জয় ছিনিয়ে আনল। দর্শকরা আরও একবার বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আগ্রহ দেখাতে শুরু করল। মাঠে আসতে শুরু করল তারা। লাল-সবুজের জার্সিধারীদের সমর্থকের অভাব রইল না। কিন্তু এত কিছুর পরও বাংলাদেশের পুরনো একটা রোগ রয়েই গেল। গোল মিসের পুরনো বদ অভ্যাসটা ছাড়তে পারল না লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। গোল মিসের কারণেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনাল মিস করল কোচ জেমি ডে’র শিষ্যরা। সেমিফাইনালের লড়াইয়ে ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হেরে গেল বাংলাদেশ।
ম্যাচ শুরু হতে তখনো কয়েক ঘণ্টা বাকি। কক্সবাজারের বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরে উঠল দর্শকে। হাজার হাজার দর্শকের সামনে খেলতে নেমে নিজেদের ফুটবলের সেরাটাই খেলল বাংলাদেশ। কিন্তু ফিলিস্তিনের কৌশলের সামনে আত্মসমর্পণ করতে হলো কোচ জেমি ডে’র শিষ্যদের। ম্যাচের শুরুতেই ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৯৩ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিন এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ সতর্ক হওয়ার আগেই গোল করেন ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ বালাহ। ম্যাচের অস্টম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে আক্রমণে যান মুসাব আল বাত্তাত। তার ক্রসে বল পেয়ে হেডে দারুণ এক গোল করেন মোহাম্মদ বালাহ। গোলরক্ষক আশরাফুলের তেমন কিছুই করার ছিল না। ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে গেলেও দুর্দান্ত ফুটবল খেলে বাংলাদেশ। একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। জীবন, সুফিল, জনিরা দারুণ সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। তাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট শটগুলো কেবল দর্শকদের আফসোসই বাড়িয়েছে। বিশেষ করে জীবন বেশ কয়েকটা সহজ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও গোল করতে পারেনি বাংলাদেশ। গোল মিসের কারণেই ফাইনাল মিস করল বাংলাদেশ। অন্যদিকে ম্যাচের অতিরিক্ত মিনিটে আরও এক গোল করে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ফিলিস্তিনিরা। উদয় দাব্বাঘের পাসে বল পেয়ে গোল করেন সামিহ মারাবা। এই গোলের মধ্য দিয়েই ভেঙে যায় বাংলাদেশের সব স্বপ্ন।
কোচ জেমি ডে আগেও বলেছেন, দলটার মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে গোল করার জন্য যেসব বিষয়ের সমন্বয় থাকতে হয় সেগুলো বাংলাদেশের ফুটবলারদের মধ্যে তেমন একটা নেই। বর্তমানে দলের সেরা তারকা হিসেবে জীবনের নাম বলেছেন তিনি বেশ কয়েকবার। সেই নাবিব নেওয়াজ জীবনও গোল-সমস্যার সমাধান দিতে পারছেন না। কোচ অবশ্য বলেছেন, ‘যে কোনো সমস্যারই স্থায়ী সমাধানের জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন।’ জেমি ডে দায়িত্ব নেওয়ার পর খুব বেশিদিন হয়নি। এরই মধ্যে বেশ উন্নতি চোখে পড়ছে। ব্রিটিশ এই কোচ আরও কিছু সময় পেলে হয়ত গোল না পাওয়ার বেদনাও ঘুচবে বাংলাদেশের!বাংলাদেশকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে তাজিকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে ফিলিস্তিন। প্রথমবার খেলতে এসেই দুই দল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে উঠে এল। ২০১৪ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ জয়ের পর প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্ট জয়ের সুযোগ এসেছে ফিলিস্তিনের সামনে।
২০১৪ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে তারা ফিলিপাইনকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। দেখা যাক, এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে তাজিকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে কি না! তাজিকিস্তানও ২০০৬ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ জয়ের পর আর কোনো টুর্নামেন্ট জিতেনি। দেখা যাক, এবার তারা কী করে!