বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এতটুকুই আশা

১৫ বছর ধরে শিরোপাহীন বাংলাদেশ। বার বার বলা হচ্ছে একটা ট্রফিই বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের ফুটবল। গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলের যে দুঃসময় যাচ্ছে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এতটুকুই আশা

ফুটবলে সু-খবর মেয়েদের ঘিরেই। পুরুষরা না পারলেও বয়সভিত্তিক আসরে মেয়েরা বার বার দেশকে উপহার দিচ্ছে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। এক বছরের তিন ফাইনাল খেলে দুই শিরোপা। সব মিলিয়ে ৭টি ট্রফি জেতার কৃতিত্ব রয়েছে তাদের। অথচ আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেয়েদের পদার্পণ বেশি দিনের নয়। অল্প সময়ে কৃষ্ণা, মারিয়ারা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনেক দূরে। যেভাবে এগুচ্ছে তাতে এশিয়ার শক্তিশালী দলে পরিণত হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

মেয়েদের এমন সাফল্যের পরও ফুটবল সেভাবে জাগছে না। জাগার কথাও নয়। কেননা একটা দেশের ফুটবলের প্রধান আকর্ষণতো পুরুষ জাতীয় দল। বাংলাদেশ এখানেই মার খেয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে ফুটবলে জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। জনপ্রিয়তা এখনো আছে। তবে মান নেই। ৭০ ও ৮০ দশকেই ফুটবলের স্বর্ণযুগ বলা হয়। সেই সময়েও বড় কোনো ট্রফি জেতার কৃতিত্ব ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু ছন্দ ছিল। তাই তো সালাউদ্দিন, নান্নু, আসলাম, কায়সার, সাব্বির, মুন্নাদের নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। না আছে ছন্দ না গতি।

জাতীয় দল ২০০৩ সালে শেষ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ শিরোপা জিতেছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়েই। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের কিশোররা শিরোপা জিতে। ফুটবলে পুরুষদের শেষ সাফল্য ছিল এটিই। জাতীয় দল ১৫ বছর ধরে ট্রফি জিততে পারছে না। ২০০৫ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে উঠলেও রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ১০ বছর পর আরও একবার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ফাইনালে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে মুখোমুখি হয়ে ২-৩ গোলে হেরে যান মামুনুলরা।

১৫ বছর ধরে শিরোপাহীন বাংলাদেশ। বার বার বলা হচ্ছে একটা ট্রফিই বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের ফুটবল। গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলের যে দুঃসময় যাচ্ছে তাতে শিরোপার আশাটাও এখন অনেকে ছেড়েও দিয়েছেন। এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে সেমিফাইনাল খেলাটায় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ সুযোগ পায় না। ভরসা ছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে ঘিরেই। সেই আসরেও হতাশা আর হতাশা। ২০০৯ সালের পর সেমিফাইনালে দেখা নেই। সাফে টানা চার আসরে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি। এরচেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কী হতে পারে।

শিরোপা আর ফাইনাল বাদ দিয়ে বাংলাদেশের আশা সেমিফাইনাল। এতটুকু আশাও পূরণ হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে এবার সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। লাওসকে প্রথম ম্যাচ হারিয়েই শেষ চারে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জামাল ভুইয়ারা গতকাল মুখোমুখি হয়েছিল ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। দল হিসেবে ফিলিস্তিন ফেবারিটই ছিল। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক জামাল ভুইয়াও বলেছিলেন ওরা শক্তিশালী দল। তবে আমরা জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে লড়ব। সত্যি বলতে কী ফিলিস্তিন ফেবারিট হলেও অনেকে বাংলাদেশের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। কারণও ছিল, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচে জামাল, জীবনরা ভালোই করেন। প্রথম ম্যাচে লাওসকে ১-০ গোলে হারায়। দ্বিতীয় ম্যাচে ফিলিপাইনের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়। তবে এই ম্যাচে সুফিল, জনিদের গতিময় খেলা দেখে ফুটবলপ্রেমীরা মুগ্ধ না হয়ে পাড়েননি। ম্যাচ হেরেছে, কিন্তু সুফিলরা শুরু থেকে যে আক্রমণাত্মক খেলা খেলে তাতে ৭০ ও ৮০ দশকের সোনালি দিনের স্মৃতি ভেসে উঠে। অনেক দিন প্রশংসা পাওয়ার মতো ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। আফসোস শুধু জয়টা আসেনি। এই পারফরম্যান্স দেখে সেমিফাইনালে আশাটা বেড়ে যায়। ফিলিস্তিন ফাইনালে গেলেও বাংলাদেশ সমান তালে লড়েছে। শুরুতে গোল হজম করার পর বাংলাদেশ যেন ফিলিস্তিনের দম বন্ধ করে দিয়েছিল। নাবিব নেওয়াজ জীবন একাই মিস করেছেন ২ গোল। সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে প্রথমার্ধে এগিয়ে যেতে পারত। দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ করেছে। কিন্তু আফসোস একটাই ঘরের মাঠে আবারও ফাইনালে দর্শক বাংলাদেশ।

যাক তৃপ্তি এতটুকুই বাংলাদেশ অন্তত টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে উঠতে পেরেছে। পারফরম্যান্সের উন্নতিও দেখা গেছে। কথা হচ্ছে পুরুষ জাতীয় দল ঘিরে কী এতটুকুই আশা। ভালো খেলে বড় জোর সেমিফাইনালে যাবে? মেয়েদের মতো পুরুষ জাতীয় দলের বিজয় উৎসব কী আর কখনো দেখা যাবে না। ফুটবল কী এতটুকু আশায় বন্দী হয়ে থাকবে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর