শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নতুন চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিন

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে তাজিকিস্তানকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফিলিস্তিন। ম্যাচ শেষে দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নির্ধারিত নব্বই এবং অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের খেলা শেষ। যোগ করা সময় এক মিনিট। এরই মধ্যে তাজিকিস্তানের কোচ আলিশের গোলরক্ষক পরিবর্তন করলেন। ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত সেভ করা রুস্তম রিজোয়েভকে উঠিয়ে মাঠে নামান তিনি বেখরুজকে। দর্শকরা ভাবলেন, তিনি বুঝি পেনাল্টি স্টপার হিসেবে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। কিন্তু টাইব্রেকারে তা প্রমাণ করতে পারলেন না। বরং ফিলিস্তিনি গোলরক্ষক রামি হামাদাই নায়ক হয়ে গেলেন দুটি পেনাল্টি থামিয়ে। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য থাকা ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে নেয় ফিলিস্তিন। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের পঞ্চম আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরল ফিলিস্তিনিরা। চ্যাম্পিয়ন দলের পক্ষে টাইব্রেকারে গোল করেন জোনাথন, মাহমুদ, মুসআব এবং অধিনায়ক আবদেলতিফ আল বাহদারি। অন্যদিকে তাজিকিস্তানের আবদুগাফুরভ, আখতাম ও আসররভ গোল করলেও কমরন ও তাবরেজির শট রুখে দেন ফিলিস্তিনি গোলরক্ষক রামি হামাদা।

ম্যাচের তখন অতিরিক্ত মিনিট চলছে। নির্ধারিত নব্বই মিনিটের খেলা শেষ। তাজিক ফুটবলার কমরন তুরসুনভের ক্রস ছুটে যায় বজোরভের দিকে। কিন্তু অমনোযোগী বজোরভ শেষ টাচটা দিতে পারেননি। এটাই ছিল নির্ধারিত সময়ে তাজিকিস্তানের শেষ সুযোগ। গোল করার এমন সুযোগ হারিয়ে আফসোসে নিশ্চয়ই মনে মনে জ্বলছিলেন বজোরভ। গোল মিসের এমন আফসোস ফিলিস্তিন দলেও কম ছিল না। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য থাকা ম্যাচটা গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে। এবার শেষ সুযোগটা পায় ফিলিস্তিন। ডি বক্সের ডান পাশ থেকে কিক নেন মারাবা। আবদেলতিফ আল বাহদারি হেডে পাস দেন উদয় দাব্বাঘকে। ডি বক্সের ভিতরে পোস্ট ফাঁকা পেয়েও হেডে গোল করতে ব্যর্থ হন দাব্বাঘ। এরপর আর কোনো সুযোগ ছিল না। ম্যাচ শেষের বাঁশিতে ফুঁ দেন রেফারি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথমার্ধটা দুই দলই নিজেদের ফুটবলশৈলী দেখাল। ফিলিস্তিন খেলেছে নিজেদের চেনারূপে। নিচ থেকে খেলতে খেলতে উপরের দিকে উঠেছে তারা। সংঘবদ্ধ আক্রমণে বিপর্যস্ত করেছে তাজিকিস্তানের ডিফেন্স লাইন। বার বারই প্রতিপক্ষের গোলবারে হামলে পড়েছে তারা। অন্যদিকে তাজিকিস্তান খেলেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে। হঠাৎ হঠাৎ ফিলিস্তিনের ডিফেন্স লাইন ভেঙে ঢুকে পড়েছে তারা। কাউন্টার আক্রমণ করে চুরমার করে দিয়েছে সব। দুই দল দুই পদ্ধতিতে খেললেও লড়াইটা ছিল সত্যিই দেখার মতো। কিন্তু প্রথমার্ধে বার বার গোলের সুযোগ পেয়েও এগিয়ে যেতে পারেনি ফিলিস্তিন। তুলনামূলকভাবে তারাই বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে অবশ্য একটা দুর্ঘটনা তাজিকিস্তানকে অনেকটা পিছিয়ে দেয়। ফিলিস্তিনের সামিহ মারাবা মাটিতে পড়ে যাওয়া তাজিক অধিনায়ক ফাতখুল্লুকে তুলতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফাতখুল্লু ঘুষি মেরে ফেলে দেন সামিহকে। এ নিয়ে দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে যায়। সাইডলাইন থেকে ছুটে যান আরও দুই রেফারি। কোচেরাও মাঠে প্রবেশ করেন। শেষ পর্যন্ত সহকারী রেফারিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাজিক অধিনায়ক ফাতখুল্লুকে লাল কার্ড দেখান বাংলাদেশি রেফারি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বার বার ক্ষমা চেয়েও পাড় পাননি তাজিক অধিনায়ক। এরপর থেকেই পুরোপুরি ডিফেন্সিভ হয়ে খেলে তাজিকিস্তান। তবে হঠাৎ কাউন্টার আক্রমণের অভ্যাসটা তারা পুরো ম্যাচেই ধরে রেখেছে। দর্শকরা তাদের আক্রমণের ধার দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।

দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে দশজনের দল নিয়েও তাজিকিস্তান দুর্দান্ত ফুটবল খেলে। ফিলিস্তিনকে নিজেদের দুর্বলতা মোটেও বুঝতে দেয়নি মধ্য এশিয়ার এই দলটি। বরং আক্রমণের সংখ্যায় তাজিকিস্তান অনেকটাই এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে ফিলিস্তিন সহজ সহ জ সুযোগ পেয়েও গোল করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। ফিলিস্তিনিদের হতাশ করার জন্য কৃতিত্ব দিতে হয় তাজিক গোলরক্ষক রুস্তম রিজোয়েভকে। তিনি অন্তত এক হালি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন পাখির মতো উড়ে গিয়ে। ২৯ ও ৫৬তম মিনিটে দর্শকরা গোল ভেবে উৎসবই শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু তাজিক গোলরক্ষক নিপুণ কৌশলে গোলবারের ওপর দিয়ে বল ঠেলে দেন বাইরে। এভাবেই খেলতে খেলতে ম্যাচটা অতিরিক্ত মিনিটে নিয়ে যায় দুই দল। ফাইনালে বাংলাদেশ নেই। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ারও কেউ নেই। নবাগত দুই দল ফিলিস্তিন ও তাজিকিস্তান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দর্শকের কমতি ছিল না গতকালের ফাইনালে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনাল দেখতে হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন।

সর্বশেষ খবর