শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দর্শকের ভূমিকায় আর কত দিন

শিরোপা না হয় বাদই দেওয়া গেল। অন্তত ফাইনাল খেলে আফসোস তো মেটানো যেত

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দর্শকের ভূমিকায় আর কত দিন

শেষ হয়ে গেল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল। প্রতি আসরের মতো বাংলাদেশের এই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ট্রফি জিতে নিয়েছে বিদেশি দলই। বাংলাদেশের শিরোপাটা স্বপ্নই থেকে গেল। মাঠের বদলে গতকাল ফিলিস্তিন ও তাজিকিস্তানের ফাইনাল ম্যাচ গ্যালারিতে বসেই দেখেছেন মামুনুলরা। প্রশ্ন হচ্ছে ফাইনালে আর কত দিন দর্শক হয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। দেশে ও বিদেশে একই পরিণতি। এখান থেকে বের হওয়া কি সম্ভব নয়?

মানগত কারণে ফুটবলে বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই বড় কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে পারছে না। ৭০ বা ৮০ দশকে ফুটবলে যখন আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা ছিল তখনো খুব যে বেশি বড় কোনো টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেত তাও বলা যাবে না। তারপরও মালয়েশিয়ায় মারদেকা কাপ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ বা থাইল্যান্ড কিংস কাপের মতো জনপ্রিয় আসরে নিয়মিত অংশ নিত। রেজাল্ট সুখকর না হলেও বড় টুর্নামেন্টে খেলতে তো পারত।

এখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলছে, কিন্তু এই আসরে তো ফিফা সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশই খেলার সুযোগ পেয়ে থাকে। এশিয়া কাপ বাছাই পর্বেও একই অবস্থা। টুর্নামেন্ট বড় বা ছোট তা মুখ্য নয়। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট তো। বাংলাদেশের ফিফার র‌্যাঙ্কিং নির্ধারণ হয় মূলত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচ ঘিরেই। এই তিন টুর্নামেন্টেও বাংলাদেশের হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় দলের শিরোপা জয়ের রেকর্ড আছে একবারই। এছাড়া দুবার রানার্সআপ হয়েছে। ১৩ আসরে বাংলাদেশ ফাইনালই খেলেছে তিনবার। বাকি আসরে দেশে বা বিদেশে বাংলাদেশ দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। নিজস্ব টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও একই অবস্থা। এবার নিয়ে এই আসরে সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচে। এখানে একবার ফাইনাল খেললেও শিরোপাটা স্বপ্নই থেকে গেছে। এখন জাতীয় দলের মান এতটা সংকটাপন্ন যে সেমিফাইনাল খেলাটাই স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত চার আসরেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ।

শিরোপা না হয় বাদই দেওয়া গেল। অন্তত ফাইনাল খেলে আফসোস তো মেটানো যেত। বার বার দর্শক হয়ে থাকবে তা কি মানা যায়? এমন নয় যে সাফ বা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খুবই শক্তিশালী দল অংশ নিচ্ছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিটি জাতীয় দল খেললেও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে এখনো স্বাগতিকরা ছাড়া প্রকৃত জাতীয় দলের দেখা মেলেনি। বাফুফে কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক মহলে কতটা যে গ্রহণযোগ্য এতেই বোঝা যায়। যাক টুর্নামেন্ট যে মাঠে গড়িয়েছে এটাই প্রাপ্তি। হতাশার মধ্যেও ফুটবলারদের প্রশংসা করতে হয়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে তারা একেবারে খারাপ খেলেননি। বিশেষ করে জীবন, সুফিলরা ফিলিপাইনের বিপক্ষে যে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন তা সত্যিই অসাধারণ। অনেক দিন পর ফুটবলে বাংলাদেশ প্রশংসা পাওয়ার মতো এক ম্যাচ খেলে। সেমিফাইনালে ফিলিস্তিনের বিপক্ষেও বাংলাদেশ ভালো খেলে। কিন্তু লাভ হলো কি? দুই ম্যাচেই হেরে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। গোলের খেলায় যদি গোলই না পায় তাহলে সেই প্রশংসা তো অর্থহীন।

সত্যি বলতে কী ফুটবলে বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র এখন এটাই। হঠাৎ করে ভালো খেলবে বা ২/১টা জয় পাবে। এরচেয়ে বড় কোনো প্রাপ্তি নেই। কিন্তু এভাবে তো দেশের ফুটবল একদিন হারিয়ে যাবে। এ কথা স্বীকার করতে হবে জাতীয় দলের মান কিছুটা হলেও চোখে পড়েছে। গতি নিয়ে তারা প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে লড়তে পারছে। ইংলিশ কোচ জেমি ডে থাকলে হয়তো অবস্থার আরও পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু লাভ কী, ট্রফি জেতাটা কী স্বপ্নই থেকে যাবে। দর্শক হয়ে পরের উল্লাস আর কত দিন দেখব?

সর্বশেষ খবর